পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী এই বলিয়া কামিনী আমাকে ইঙিগত করিয়া গেল—“আগে তুই যা। তার পর আলো নিয়ে উপেন্দ্র বাবকে লইয়া যাইব ।” আমি আগে মন্দিরে গিয়া বারেন্ডায় বসিয়া রহিলাম। সেইখানে আলো ধরিয়া (খিড়কী দিয়া পথ আছে বলিয়াছি) কামিনী আমার স্বামীকে আমার কাছে লইয়া আসিল । তিনি আসিয়া আমার পদপ্রান্তে আছাড়িয়া পড়িলেন। ডাকিলেন, “কুমদিনী, কুমদিনী! যদি আসিয়াছ—ত আর আমায় ত্যাগ করিও না।” তিনি বার দই চারি এই কথা বলার পর, কামিনী চটিয়া উঠিয়া বলিল, “আয় দিদি ! উঠে আয়! ও মিনসে কুমদিনী চেনে, তোকে চেনে না।” তিনি ব্যগ্র হইয়া জিজ্ঞাসা করলেন, “দিদি ! দিদি কে ? “ কামিনী রাগ করিয়া বলিল, “আমার দিদি-ইন্দিরে। কখনও নাম শোননি ?” এই বলিয়া দলেটা কামিনী আলোটা নিবাইয়া দিয়া আমার হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া আসিল । আমরা খােব ছটিয়া আসিলাম। তিনি একটি প্রকৃতিস্থ হইলেই আমাদের পিছৰ পিছ ছটিলেন । কিন্তু অন্ধকার—পথ অচেনা ; একটা চৌকাটি বাধিয়া একটা ছোট রকম আছাড় খাইলেন। আমরা নিকটেই ছিলাম, দই জনে দাই দিক হইতে হাত ধরিয়া তুলিলাম। কামিনী চুপি চুপি বলিল, “আমরা বিদ্যাধরী—তোমার রক্ষার জন্য সঙেগ সঙ্গে বেড়াইতেছি।” এই বলিয়া, তাঁকে টানিয়া আনিয়া আমার শয্যাগহে উপস্থিত করিলাম। সেখানে আলো ছিল। তিনি আমাদের দেখিয়া বলিলেন, “এ কি ? এ ত কামিনী, আর এ ত কুমদিনী।” কামিনী রাগে দশখানা হইয়া বলিল, “আঃ পোড়া কপাল! এই বন্ধিতে টাকা রোজগার করেছ ? কোদাল পাড় নাকি ? এ কুমদিনী না, —ইন্দিরে-ইন্দিরে-ইন্দিরে!!! তোমার পরিবার! আপনার পরিবার চিনতে পার না ?” তখন সবামী মহাশয় আহাদে অজ্ঞান হইয়া আমাকে কোলে টানিয়া লইতে গিয়া কামিনীকেই কোলে টানিয়া লইলেন। সে তাঁর গালে এক চড় মারিয়া হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। সেদিনের আহাদের কথা বলিয়া উঠিতে পারি না। বাড়ীতে খাব উৎসাহ বাধিল। সেই রাত্রে কামিনীতে আর উ-বাবতে প্রায় এক শত বার বাগযন্ধে হইল। সকল বারই প্ৰাণনাথ একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ ঃ সেকালে যেমন ছিল কালােদীঘির ডাকাইতির পর আমার আদলেট যাহা ঘটিয়াছিল, স্বামী মহাশয় এক্ষণে আমার কাছে সব শানিলেন। রমণ বাব ও সভাষিণী যেরােপ ষড়যন্ত্ৰ করিয়া তাঁহাকে কলিকাতায় লইয়া গিয়াছিল, তাহাও শনিলেন। একটি রাগও করলেন। বলিলেন, “আমাকে এত ঘরাইবার ফিরাইবার প্রয়োজনটা কি ছিল ?” প্রয়োজনটা কি ছিল, তাহাও বৰ্ব্বাইলাম। তিনি সন্তুটি হইলেন। কিন্তু কামিনী সন্তুস্ট হইল না। কামিনী বলিল, “তোমায় ঘানিগাছে ঘরোয় নাই, অমনি ছাড়িয়াছে, এইটকু দিদির দোষ। আবার আবদার নিলেন কি না, গ্রহণ করব না! আরে মিনাসে, যখন আমাদের আলতা-পরা শ্ৰীপাদপদ্মখানি ভিন্ন তোমার জেতের গতিমাক্তি নাই, তখন অত বড়াই কেন ?” উ-বাব, এবার একটা উতোর মারিলেন, বলিলেন, “তখন চিনিতে পারি। নে যে ! তোমাদের কি চিনতে জোওয়ায় ?” কামিনী বলিল, “তুমি যে চিনিবে, বিধাতা তা কপালে লিখেন নাই। যাত্রায় শোন নি - বলে, “ধবলী বলিল শ্যাম, কে চেনে তোমারে! চিনি শােধ কাঁচা ঘাস যমনার ধারে ৷ পদচিহ্ন খাজি তব, বংশী শনে কাণে। ধবজবজাঙকুশ তায়, গোর কি তা জানে ?” আমি আর হাসি রাখিতে পারিলাম না। উ-বাবা অপ্রতিভ হইয়া কামিনীকে বলিলেন, “যা ভাই, আর জবালাস নে ! যাত্রা করলি, তার জন্য এই পানের খিলিটা প্যােলা নিয়ে যা।” কামিনী বলিল, “ও দিদি ! মিত্ৰজার একটা বন্ধিও আছে দেখিতে পাই।” ՓԵՀ