পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कश ज्ञरुनादव्ी পাচিকা ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণীর সংবাদ সভাষিণী এইরােপ লিখিল, “যে অবধি তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গে গোপনে চলিয়া গিয়াছ, সে অবধি বাড়ী বড় আস্ফালন করিত, বলিত, “আমি বরাবর জানি, সে মানষে ভাল নয়। তার রকম-সকম ভাল নয়। কত বার বলেছি যে, এমন কুচরিত্র মানষে তোমরা রেখা না। তা, কাণ্ডগালের কথা কে গ্রাহ্য করে ? সবাই কুমদিনী কুমদিনী ক’রে অজ্ঞান।।’ এমনই এমনই আরও কথা। তার পর যখন শনিল যে, তুমি কাহারও সঙ্গে যাও নাই, আপনার স্বামীর সঙ্গে গিয়াছ, তুমি বড় মানষের মেয়ে, বড় মানষের বৌ—এখন আপনার ঘর বর পাইয়াছ, তখন বলিল, “আমি ত বরাবর বলচি মা যে, সে বড় ঘরের মেয়ে, ছোট ঘরে কি আর আমন সবভাব-চরিত্র হয় ? যেমন রােপ, তেমনই গণ, যেন লক্ষয়ী ! সে ভাল থাকুক, মা! ভাল থাকুক ! তা, হা দেখ বৌদিদি! আমাকে কিছ. পাঠাইয়া দিতে বলে”।” গহিণী সম্বন্ধে সভাষিণী লিখিল, “তিনি তোমার এই সকল সংবাদ পাইয়া আহাদ প্রকাশ করিয়াছেন, কিন্তু আমাকে ও র-বাবকে কিছ, ভৎসিনা করিয়াছেন। বলিয়াছেন, ‘সে যে এত বড় ঘরের মেয়ে, তা তোরা আমাকে আগে বলিস নি কেন ? আমি তাকে খাব যত্নে রাখিতাম।” আর, তোমার স্বামীরও কিছ নিন্দা করিয়াছেন, বলিয়াছেন, “হোক তাঁর পরিবার, আমার আমন রাঁধানীটা নিয়ে যাওয়া তাঁর কিছ ভাল হয় নাই' ।” কৰ্ত্তা রােমরাম দত্তের কথা সভাষিণীর নিজ হাতের হিজিবিজি। কন্টে পড়িলাম যে, কৰ্ত্তা গহিণীকে কৃত্রিম কোপের সহিত তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিলেন, “তুমি ছল ছতো করিয়া সন্দর রাঁধানীটাকে বিদায় করিয়া দিয়ােছ।" গহিণী বলিলেন, “খব করিয়াছি, তুমি সন্দরী নিয়ে কি ধাইয়া খাইতে ?” কত্তা বলিলেন, “তা কি বলিতে পারি। ও কালো রােপ আর রাত দিন ধ্যান করিতে পারা যায় না।” গাঁহিণী সেই হইতে শয্যা লইলেন, আর সেদিন উঠিলেন না। কত্তা যে তাঁহাকে ক্ষেপাইয়াছেন, তাহা তিনি কিছতেই বঝিলেন না। বলা বাহাল্য যে, ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী ও অন্যান্য ভৃত্যবগের জন্য কিছ কিছ. পাঠাইয়া দিলাম। তার পর সম্ভাষিণীর সঙ্গে আর একবার মাত্র দেখা হইয়াছিল। তার কন্যার বিবাহের সময়ে বিশেষ অননুরোধে, স্বামী মহাশয় আমাকে লইয়া গিয়াছিলেন। সভাষিণীর কন্যাকে অলঙ্কার দিয়া সাজাইলাম—গহিণীকে উপযক্ত উপহার দিলাম—যে যাহার যোগ্য, তাহাকে সেইরােপ দান ও সম্ভাষণ করিলাম। কিন্তু দেখিলাম, গহিণী আমার প্রতি ও আমার স্বামীর প্রতি অপ্ৰসন্ন। তাঁর ছেলের ভাল খাওয়া হয় না, কথাটা আমায় অনেক বার শনাইলেন। আমিও রমণ বাবকে কিছ রাঁধিয়া খাওয়াইলাম। কিন্তু আর কখন গেলাম না। রাঁধিবার ভয়ে নয়; গহিণীর মনোদঃখের ভয়ে । গহিণী ও রামরাম দত্ত অনেক দিন হইল সবগারোহণ করিয়াছেন। কিন্তু আর যাওয়া ঘটে নাই। আমি সভাষিণীকে ভুলি নাই। ইহজন্মে ভুলিব না। সভাষিণীর মত এ সংসারে আর কিছ দেখিলাম না। V) b'b'