পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যদুগলাঙ্গরীয় এখন হিরণ্যময়ী অন্নবস্ত্রের দঃখে দঃখিনী হইয়া নগরপ্রান্তে এক কুটনীরমধ্যে একা বাস করিতে লাগিলেন। কেবল মাত্র এক সহায় পরম হিতৈষী আনন্দস্বামী, কিন্তু তিনি তখন দরদেশে ছিলেন। হিরণ্যময়ীর এমন একটি লোক ছিল না যে, আনন্দস্বামীর নিকট প্রেরণ করেন । পণ8ম পরিচ্ছেদ হিরণ্যময়ী যাবতী এবং সন্দরী—একাকিনী এক গহে শয়ন করা ভাল নহে। আপদ ও আছে—কলঙকও আছে। অমলা নামে এক গোপকন্যা হিরণ্যময়ীর প্রতিবাসিনী ছিল। সে বিধবা — তাহার একটি কিশোরবয়স্ক পত্র এবং কয়েকটি কন্যা। তাহার যৌবনকাল অতীত হইয়াছিল। সচ্চরিত্রা বলিয়া তাহার খ্যাতি ছিল। হিরণ্যময়ী রাত্ৰিতে আসিয়া তাহার গহে শয়ন করিতেন। এক দিন হিরন্ময়ী আমলার গহে শয়ন করিতে আসিলে পর, আমলা তাহাকে কহিল, “সংবাদ শনিয়াছ, পােরন্দর শ্রেষ্পাঠী না কি আট বৎসরের পর নগরে ফিরিয়া আসিয়াছে।” শনিয়া হিরণ্যময়ী মািখ ফিরাইলেন-চক্ষর জল অমলা না দেখিতে পায়। পথিবীর সঙ্গে হিরন্ময়ীর শেষ সম্বন্ধ ঘচিল। পােরন্দর তাঁহাকে ভুলিয়া গিয়াছে। নচেৎ ফিরিত না। পােরন্দর এক্ষণে মনে রাখক বা ভুলক, তাঁহার লাভ বা ক্ষতি কি ? তথাপি যাহার স্নেহের কথা ভাবিয়া যাবতজীবন কাটাইয়াছেন, সে ভুলিয়াছে ভাবিতে হিরণ্যময়ীর মনে কন্ডট হইল। হিরন্ময়ী একবার ভাবিলেন—“ভুলেন নাই—কত কাল আমার জন্য বিদেশে থাকিবেন ? বিশেষ তাহাতে তাঁহার পিতার মাতু্য হইয়াছে—আর দেশে না আসিলে চলিবে কেন ?” আবার ভাবিলেন, “আমি কুলাটা সন্দেহ নাই--নাহিলে পােরন্দরের কথা মনে করি কেন ?” অমলা কহিল, “পােরন্দরকে কি তোমার মনে পড়িতেছে না ?” পােরন্দর শচীসত শেঠীর (ष्ट्06 ।।' निश । निन् । অ। তা সে ফিরে এসেছে—ক’ত নৌকা যে ধন এনেছে, তাহা গণে সংখ্যা করা যায় না। এত ধন না কি এ তােমলিপে কেহ কখন দেখে নাই। হিরণ্যময়ীর হৃদয়ে রন্তু একটা খর বহিল। তাঁহার দারিদ্র্যদশা মনে পড়িল, পািব্ব সম্পবন্ধও মনে পড়িল। দারিদ্র্যের জবালা বড় জবালা। তাহার পরিবত্তে এই অতুল ধনরাশি হিরণ্যময়ীর হইতে পারিত, ইহা ভাবিয়া যাহার খর রক্ত না বহে, এমন সত্ৰীলোক অতি অলপ আছে। হিরণ্যময়ী ক্ষণেক কাল অন্যমনে থাকিয়া পরে অন্য প্রসঙ্গ তুলিল। শেষ শয়নকালে জিজ্ঞাসা করিল, “আমলে, সেই শ্রেম্ঠিপত্রের বিবাহ হইয়াছে ?” অমলা কহিল, “না, বিবাহ হয় নাই।” হিরণ্যময়ীর ইন্দ্ৰিয় সকল অবশ্য হইল। সে রাত্ৰিতে আর কোন কথা হইল না। ষািঠ পরিচ্ছেদ পরে এক দিন আমলা হাসিম খে। হিবণময়ীর নিকট আসিয়া মধরে ভৎসনা করিয়া কহিল, “হাঁ গা বাছা, তোমার কি এমনই ধৰ্ম্মম ?” হিরন্ময়ী কহিল, “কি করিয়াছি ?” অম। আমার কাছে এত দিন তা বলিতে নাই ? হি। কি বলি নাই ? অম। পােরন্দর শেঠির সঙ্গে তোমার এত আত্মীয়তা ! হিরণ্যময়ী ঈষল্লক্তিজতা হইলেন, বলিলেন, “তিনি বাল্যকালে আমার প্রতিবাসী ছিলেন— তার বলিব কি ?” অম। শােধ প্রতিবাসী ? দেখ দেখি কি এনেছিা! এই বলিয়া আমলা একটি কোটা বাহির করিল। কোটা খালিয়া তাহার মধ্য হইতে অপব্ব দর্শন, মহাপ্রভাবষাক্ত, মহামল্য হীরার হার বাহির করিয়া হিরন্ময়ীকে দেখাইল । শ্রেম্ঠিকন্যা হীরা চিনিত-বিস্মিতা হইয়া কহিল, “এ যে মহামল্য——এ কোথায় পাইলে ?” C) S \