পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ নামক পাস্তকের মধ্যে। ১৮৮৬ সনে ইহা স্বতন্ত্র পস্তকাকারে প্রথম প্রকাশিত হইল, তখন পাঠা সংখ্যা ছিল ৩৮ ৷৷ ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্ৰ ইহা বিশেষ বাড়াইয়াছিলেন, তখন পন্ঠা সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫ ৷ জীবিতকালে ইহাই শেষ বা চতুর্থ সংস্করণ। ‘চতুৰ্থ বারের বিজ্ঞাপনে” বঙ্কিমচন্দ্র বলেন: “এই ক্ষদ্র উপন্যাসের দোষ সংশোধন করিতে গিয়া, ইহার কলেবর বাড়াইতে হইয়াছে। কাজেই মাল্যও বাড়াইতে হইয়াছে।” “রাধারাণী’র উৎপত্তি সম্বন্ধে বণ্ডিকমের জীবনীর্কর এইরপ লিখিয়াছেন : “গহ-বিগ্রহ রাধাবল্লভজীউর রথযাত্ৰা প্রতি বৎসর মহাসমারোহে সম্পন্ন হইত। পজিনীয় যাদবচন্দ্র তখন জীবিত। বণ্ডিকমচন্দ্র ১২৮২ সালে রথযাত্রার সময় ছটী লইয়া গহে আসিয়াছিলেন। রথে বহলোকের সমাগম হইয়াছিল। সেই ভিড়ে একটি ছোট মেয়ে হারাইয়া যায়। তাহার আত্মীয়-স্বজনের অন্যসন্ধানাথ বঙিকমচন্দ্র নিজেও কিছ, চেন্টা করিয়াছিলেন। এই ঘটনার দই মাস পরে “রাধারাণী’ লিখিত হয়। আমার মনে হয়, এই ঘটনা উপলক্ষ্য করিয়া বঙ্কিমচন্দ্র “রাধারাণী” রচনা করিয়াছিলেন।” (বঙ্কিম-জীবনী, ৩য় সং, পঃ ৩O৩) “রাধারাণী'র দইখানি ইংরেজী অন্যবাদ-গ্ৰন্থ আছে। রজনী • ‘রজনী।” ১২৮১-৮২ বঙ্গাব্দের “বঙগদশনে’ প্রথম প্রকাশিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র। এখানিকে পােস্তকাকারে বাহির করেন। ১২৮৪ সালে (ইংরেজী ১৮৭৭ সন) । তিনি ‘রাজনী’ কেন যে প্রচুর সংশোধন করেন ‘বিজ্ঞাপনে' তাহার উল্লেখপ্রসঙ্গে ইহার মািল প্রকৃতিও বিবত করেন। “বিজ্ঞাপনটি এখানে পরোপরি উদ্ধত হইল : “বজনী প্রথমে বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়। এক্ষণে, পনিমাদ্রাঙ্কনকালে, এই গ্রন্থে এত পরিবতন করা গিযাছে যে, ইহাকে নািতন গ্রন্থও বলা যাইতে পাবে। কেবল প্রথম খণড পািকব বৎ আছে; অবশিস্টাংশের কিছ পরিত্যক্ত হইযাছে, কিছ, স্থানান্তবে সমাবিল্ট হইয়াছে, অনেক পািনলিখিত হইয়াছে। “প্রথম লর্ড লিটনপ্রণীত 'Last Days of Pompeii' নামক উৎকৃষ্ট উপন্যাসে নিদিয়া নামে একটি ‘কানা ফলওয়ালী’ আছে; রজনী তৎসমরণে সচিত হয়। যে সকল মানসিক বা নৈতিক তত্ত্ব প্রতিপাদন করা এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য, তাহা অন্ধ যাবতীর সাহায্যে বিশেষ সপম্পটতা লাভ করিতে পরিবে বলিয়াই ঐবােপ ভিত্তির উপর রজনীর চবিত্র নিম্পমাণ করা গিয়াছে। “উপাখ্যানের অংশবিশেষ, নায়ক বা নায়িকা বিশেষের দ্বারা ব্যক্ত করা, প্রচলিত রচনা-প্ৰণালীর মধ্যে সচরাচর দেখা যায় না, কিন্তু ইহা নািতন নহে। উইলকি কলিন্স কৃত 'Voman in Vhite' নামক গ্রন্থ প্রণয়নে ইহা প্রথম ব্যবহৃত হয়। এ প্রথার গণ এই যে, যে কথা যাহার মাখে শনিতে ভাল লাগে, সেই কথা তাহার মাখে ব্যক্ত করা যায়। এই প্রথা অবলম্বন করিয়াছি বলিয়াই, এই উপন্যাসে যে সকল অনৈসগিক বা অপ্রাকৃত ব্যাপার আছে, আমাকে তাহার জন্য দায়ী হইতে হয় নাই।” পরিষৎ-সংস্করণের সম্পাদকদ্বয় বলেন, এইরনুপে ‘লেখকের দায়িত্ব কাটিলেও বিশেষ সস্টি হিসাবে উপন্যাসের ক্ষতি হইয়াছে।” তাঁহাদের মতে “রাজনী’ বাংলা ভাষায় সৰ্ব্বব্যপ্ৰথম মনস্তত্ত্ববিশেলষণমািলক উপন্যাস ।...নায়ক-নায়িকার মানসিক দািবন্দ্ব এবং ঘাত-প্রতিঘাতকে ‘রজনী'তে ঘটনাবৈচিত্র্যের উপরেও প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে। সে যাগের বর্ণনাবহল রোমাণ্টিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে ইহা অভিনব সন্দেহ নাই।’ বঙ্কিমজীবনীকার শচীশচন্দ্র, লিখিয়াছেন, রজনী'র হীরালাল-চরিত্র সে যাগের এক সংবাদপত্র সম্পাদককে আদশ করিয়া রচিত।” বঙিকমচন্দ্রের জীবিতকালে রজনী'র তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। তৃতীয় সংস্করণ মাদ্রিত হয় ১৮৮৭ সনে । ১৮৯৬ সনে ‘রজনী'র গাজরাটী অনাবাদ প্রকাশ করেন এন. হেমচন্দ্র। অপেক্ষাকৃত আধনিক কালে ইহার একটি ইংরেজী অনাবাদও পািস্তকাকারে বাহির হইয়াছে (ISSSR b) কৃষ্ণকান্তের ऐशेब्ज শ্ৰীশচন্দ্র মজমিদার লিখিয়াছেন, “সত্ৰী-চরিত্রের মধ্যে বঙ্কিমবাবার নিজের মতে সব্বোৎকৃস্ট ভ্রমর, কৃষ্ণকান্তের উইল’ তাঁহার সব্বোৎকৃষ্ট উপন্যাস।” (বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, পঃ ১৯৫)। ○cl