পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী চন্দ্র। কেন বকিব ? শৈ। আমার পকুরঘাট হইতে আসিতে বিলম্ব হইয়াছে, তাই। চন্দ্র। বটেও ত—এখন এলে না কি ? বিলম্বব হইল কেন ? শৈ। একটা গোরা আসিয়াছিল। তা, সন্দরী ঠাকুরঝি তখন ডাঙগায় ছিল, আমায় ফেলিয়া দৌড়িয়া পলাইয়া আসিল। আমি জলে ছিলাম, ভয়ে উঠিতে পারিলাম না। ভয়ে একগালা জলে গিয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম। সেটা গেলে তবে উঠিয়া আসিলাম । চন্দ্রশেখর অন্যমনে বলিলেন, “আর আসিও না” এই বলিয়া আবার শাঙকর ভাষ্যে মনোনিবেশ করিলেন । রাত্ৰি অত্যন্ত গভীরা হইল। তখনও চন্দ্রশেখর, প্ৰমা, মায়া, সেফাট, অপৌরষোত্ব ইত্যাদি তাকে নিবিচাট । শৈবলিনী প্রথামত সবামীর অন্ন ব্যঞ্জন তাঁহার নিকট রক্ষা করিয়া, আপনি আহারাদি করিয়া পাশাব্যস্থ শয্যোপরি নিদ্রায় অভিভূত ছিলেন। এ বিষয়ে চন্দ্ৰশেখরের অনািমতি ছিল—অনেক রাত্রি পয্যন্ত তিনি বিদ্যালোচনা করিতেন, অলপ রাত্রে আহার করিয়া শয়ন করিতে পারিতেন না। সহসা সৌধোপরি হইতে পেচকের গম্ভীর কন্ঠ শ্রত হইল। তখন চন্দ্রশেখর অনেক রাত্রি হইয়াছে বঝিয়া, পতি বাঁধিলেন। সে সকল যথাসস্থানে রক্ষা করিয়া, আলস্যবশতঃ দন্ডায়মান হইলেন। মন্ত বাতায়নপথে কৌম্যদীপ্রফতুল্ল প্রকৃতির শোভার প্রতি দন্টি পড়িল। বাতায়নপথে সমাগত চন্দ্রকিরণ সপত সন্দাবী শৈবলিনীর মখে নিপতিত হইয়াছে। চন্দ্রশেখর প্রফতুল্লচিত্তে দেখিলেন, তাঁহার গহসরোবরে চন্দ্রের আলোতে পদ্ম ফটিয়াছে!—তিনি দাঁড়াইয়া, দাঁড়াইয়া, দাঁড়াইয়া, বহক্ষণ ধরিয়া প্রীতিবিসফারিত নেত্ৰে, শৈবলিনীর অনিন্দ্যসািন্দর মখমণডল নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। দেখিলেন, চিত্ৰিত ধনঃখণডবৎ নিবিড়কৃষ্ণ ভ্ৰযোিগতলে, মাদ্রিত পদ্মকোরকসদািশ, লোচন-পদ্ম দীটি মদিয়া রহিয়াছে;—সেই প্রশস্ত নয়নপল্লবে, সকোমলা সমগামিনী রেখা দেখিলেন। দেখিলেন, ক্ষদ্র কোমল করপল্লব নিদ্রাবেশে কপোলে ন্যস্ত হইয়াছে—যেন কুসমরাশির উপরে কে কুস মরাশি ঢালিয়া রাখিয়াছে। মখমন্ডলে করসংস্থাপনের কারণে, সকুমার রসপণে তাম্বলরাগারক্ত ওঠাধর ঈষদ্ভিন্ন করিয়া, মক্তাসদশে দন্তশ্রেণী কিঞিন্মাত্র দেখা দিতেছে। একবার যেন, কি সখি-স্বপ্ন দেখিয়া সপতা শৈবলিনী ঈষৎ হাসিল—যেন একবার জ্যোৎস্নার উপর বিদ্যুৎ হইল। আবার সেই মখমন্ডল পাকবািবং সষপ্তিসস্থির হইল। সেই বিলাস-চাণ8ল্য-শান্য, সষপ্তিসস্থির বিংশতিবষীয়া যাবতীর প্রফতুল্ল মাখমণ্ডল দেখিয়া চন্দ্রশেখরের চক্ষে অশ্র বহিল। চন্দ্রশেখর, শৈবলিনীর সােষপিতসসিথর মখমন্ডলের সন্দর কান্তি দেখিয়া আশ্রমোচন করিলেন। ভাবিলেন, “হায়! কেন আমি ইহাকে বিবাহ করিয়াছি। এ কুসম রাজমকুটে শোভা পাইত—শাস্ত্রােনশীলনে ব্যস্ত ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতের কুটীরে এ রত্ন আনিলাম কেন ? আনিয়া আমি সখী হইয়াছি, সন্দেহ নাই। কিন্তু শৈবলিনীর তাহাতে কি সখি ? আমার যে বয়স, তাহাতে আমার প্রতি শৈবলিনীর অন্যরাগ অসম্পভব—অথবা আমার প্রণয়ে তাহার প্রণয়াকাঙক্ষা নিবারণের সম্পভাবনা নাই। বিশেষ, আমি ত সৰ্ব্বদা আমার গ্রন্থ লইয়া বিব্রত ; আমি শৈবলিনীর সখ। কখন ভাবি ? আমার গ্রন্থগলি তুলিয়া পাড়িয়া, এমন নবযাবতীর কি সখি ? আমি নিতান্ত আত্মসখপরায়ণ—সেই জন্যই ইহাকে বিবাহ করিতে প্রবত্তি হইয়াছিল। এক্ষণে আমি কি করিব ? এই ক্লেশাসঞ্চিত পােস্তকরাশি জলে ফেলিয়া দিয়া আসিয়া রমণীমখপদ্ম কি এ জন্মের সারভূত করিব ? ছি, ছি, তাহা পারিব না। তবে কি এই নিরপরাধিনী শৈবলিনী আমার পাপের প্রায়শিচত্ত করিবে ? এই সকুমার কুস্যামকে কি অতৃপিত যৌবনতাপে দগধ করিবার জন্যই এই রােপ চিন্তা করিতে করিতে চন্দ্রশেখর আহার করিতে ভুলিয়া গেলেন। পরদিন প্রাতে মীর মনসীর নিকট হইতে সম্পবাদ আসিল, চন্দ্রশেখরকে মরশিদাবাদ যাইতে হইবে। নবাবের কােজ আছে । তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ লরেন্স ফন্টর বেদগ্রামের অতি নিকটে পােরন্দরপর নামক গ্রামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেশমের একটি ক্ষদ্র কুঠি ছিল। লরেন্স ফন্টর তথাকার ফ্যাকটর বা কুঠিয়াল। লরেন্স অলপ বয়সে মেরি 8S3 O WV