পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রশেখর যে সবামীর মত স্বামী জগতে দলভ, তাঁহার স্নেহে তোমার মন ওঠে না। কি না, বালকে যেমন খেলাঘরের পতুলকে আদর করে, তিনি স্ত্রীকে সেরােপ আদর করিতে জানেন না। কি না, বিধাতা তাঁকে সং গড়িয়া, রাঙািগতা দিয়া সাজান নাই।--মনিষ করিয়াছেন। তিনি ধৰ্ম্মমাত্মা, পন্ডিত, তুমি পাপিষ্ঠা; তাঁহাকে তোমার মনে ধরিবে কেন ? তুমি অন্ধের অধিক অন্ধ, তাই বঝিতে পার না যে, তোমার স্বামী তোমায় যেরােপ ভালবাসেন, নারীজন্মে সেরাপ ভালবাসা দিল্লভ—অনেক পণ্য-ফলে এমন স্বামীর কাছে তুমি এমন ভালবাসা পেয়েছিলো। তা যাক, সে কথা দীর হৌক -এখনকার সে কথা নয়। তিনি নাই ভালবাসন, তব, তাঁর চরণসেবা করিয়া কাল কাটাইতে পারিলেই তোমার জীবন সার্থক । আর বিলম্ব করিতেছ। কেন ? আমার রাগ হইতেছে। শৈ। দেখ, গ্যহে থাকিতে মনে ভাবিতম, যদি পিতৃমাতৃকুলে কাহারও অন্যাসন্ধান পাই, তবে তাহার গহে গিয়া থাকি।—নচেৎ কাশী গিয়া ভিক্ষা করিয়া খাইব—নচেৎ জলে ডুবিয়া মরিব । এখন মঙ্গের যাইতেছি। যাই, দেখি মঙ্গের কেমন । দেখি, রাজধানীতে ভিক্ষা মেলে কি না। মরিতে হয়, না হয়। মরিব —মরণ ত হাতেই আছে। এখন আমার মরণ বই আর উপায় কি ? কিন্তু মারি আর বাঁচি, আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, আর ঘরে ফিরিব না। তুমি অনথািক আমার জন্য এত ক্লেশ করিলে—ফিরিয়া যাও । আমি যাইব না। মনে করিও, আমি মরিয়াছি। আমি মরিবি, তাহা নিশ্চয় জানিও ! তুমি যাও । তখন সন্দেরী আর কিছর বলিল না। রোদন সম্পবরণ করিয়া গাত্ৰোথান করিল, বলিল, “ভরসা করি, তুমি শীঘ্ৰ মরিবে ! দেবতার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, যেন মরিতে তোমার সাহস হয়! মঙ্গেরে যাইবার পকেবই যেন তোমার মােত্যু হয়। ঝড়ে হোক, তুফানে হোক, নৌকা ডুবিয়া হোক, মঙেগরে পৌছিবার পকেবা যেন তোমার মাতৃত্যু হয়। “ এই বলিয়া, সন্দেরী নৌকামধা হইতে নিস্ক্রান্ত হইয়া, আলতার চুপড়িী জলে ছড়িয়া ফেলিয়া দিয়া, স্বামীর নিকট প্রত্যাবত্তন করিল। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ চন্দ্রশেখরের প্রত্যাগমন চন্দ্রশেখর ভবিষ্যৎ গণিয়া দেখিলেন। দেখিয়া রাজকৰ্ম্মমচারীকে বলিলেন, “মহাশয়, আপনি নবাবকে জানাইবেন, আমি গণিতে পারলাম না।” বাজকমচারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন মহাশয় ?” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “সকল কথা গণনায় স্থির হয় না। যদি হইত, তবে মনষ্যে সৰবজ্ঞ হইত। বিশেষ, জ্যোতিষে আমি আপারদর্শী।” রাজপরিষ বলিলেন, “অথবা রাজার অপ্রিয় সম্পবাদ বন্ধিমান লোকে প্রকাশ করে না। যাহাই হউক, আপনি যেমন বলিলেন, আমি সেইরােপ রাজসমীপে নিবেদন করিব।” চন্দ্রশেখর বিদায় হইলেন। রাজকৰ্ম্মমচারী তাঁহার পাথেয় দিতে সাহস করিলেন না। চন্দ্রশেখর ব্রাহ্মণ এবং পন্ডিত, কিন্তু ব্ৰাহ্মণ-পশিডত নহেন – ভিক্ষা গ্রহণ করেন না।—কাহারও কাছে দান গ্রহণ করেন না। গাহে ফিরিয়া আসিতে দরি হইতে চন্দ্রশেখর নিজ গােহ দেখিতে পাইলেন। দেখিবামাত্র তাঁহার মনে আহাদের সম্প্রচার হইল। চন্দ্রশেখর তত্ত্বজ্ঞ, তত্ত্বজিজ্ঞাস । আপনাপনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কেন, বিদেশ হইতে আগমনকালে সবগহে দেখিয়া হৃদয়ে আহাদের সঞ্চার হয় কেন ? আমি কি এত দিন আহার-নিদ্রার কািট পাইয়াছি ? গহে গেলে বিদেশ অপেক্ষা কি সখে সখী হইব ? এ বয়সে আমাকে গরতের মোহ-বন্ধে পড়িতে হইয়াছে, সন্দেহ নাই। ঐ গহমধ্যে আমার প্রেয়সী ভাষা বাস করেন, এই জন্য আমার এ আহাদ ? এ বিশ্ববব্ৰহ্মান্ড সকলই ব্ৰহ্ম। যদি তাই, তবে কাহারও প্রতি প্রেমাধিক্য-কাহারও প্রতি অশ্রদ্ধা জন্মে কেন ? সকলই ত সেই সাঁচ্চিদানন্দ ! আমার যে তলাপী লইয়া আসিতেছে, তাহার প্রতি একবারও ফিরিয়া চাহিতে ইচ্ছা হইতেছে না কেন ? আর সেই উৎফল্লকমলাননার মািখপদ্ম দেখিবার জন্য এত কাতর হইয়াছি কেন ? আমি ভগবদবাক্যে অশ্রদ্ধা করি না, কিন্তু আমি দারণ মোহজালে 8SS