পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bACsa পরিষ, গঙ্গার পথ পরিত্যাগ করিয়া সেই আশ্রয়-বক্ষের অভিমখে আসিতে লাগিল। দেখিয়া সত্ৰীলোক দাইটি আরও অন্ধকারমধ্যে ল্যুকাইল । দীঘাকার পরষ। সেইখানে আসিল। বলিল, “এখানে তোমরা কে ?” এই কথা বলিয়া, সে যেন আপনা। আপনি, মন্দােতর সবরে বলিল, “আমার মত পথে পথে নিশা জাগরণ করে, এমন হতভাগা কে আছে ?” দীঘাকার পরষ দেখিয়া, সত্ৰীলোকদিগের ভয় জন্মিয়াছিল, কন্ঠস্বর শনিয়া সে ভয় দর হইল। কন্ঠ অতি মধর—দঃখ, এবং দয়ায় পরিপািণ। কুলসম বলিল, “আমরা সত্ৰীলোক, আপনি কে ?” পােরষি কহিলেন, “আমরা ? তোমরা কয় জন ?” কু। আমরা দই জন মাত্র। প। এ রাত্রে এখানে কি করিতেছ ? হইবে?" দলনী বলিল, “আমরা হ৩৩ভাগিনী---আমাদের দঃখের কথা শনিয়া আপনার কি יי ק শনিয়া আগন্তুক বলিলেন, “অতি সামান্য ব্যক্তি কত্ত্বক লোকের উপকার হইয়া থাকে, তোমরা যদি বিপদগ্ৰস্ত হইয়া থাক—সাধ্যানসারে আমি তোমাদের উপকার করিব।” দ। আমাদের উপকার প্রায় অসাধ্য—আপনি কে ? আগন্তুক কহিলেন, “আমি সামান্য ব্যক্তি—দরিদ্র ব্রাহ্মণ মাত্র। ব্রহ্মচারী।” দ। আপনি যেই হউন, আপনার কথা শনিয়া বিশ্ববাস করিতে ইচ্ছা করিতেছে। যে ডুবিয়া মরিতেছে, সে অবলম্বনের যোগ্যতা অযোগ্যতা বিচার করে না। কিন্তু যদি আমাদিগের বিপদ শনিতে চান, তবে রাজপথ হইতে দরে চলন। রাত্রে কে কোথায় আছে বলা যায় না। আমাদের কথা সকলের সাক্ষাতে বলিবার নহে। তখন ব্রহ্মচারী বলিলেন, “তবে তোমরা আমার সঙ্গে আইসি।” এই বলিয়া দলনী ও কুলসমকে সঙ্গে করিয়া নগরাভিমখে চলিলেন। এক ক্ষদ্র গাহের সম্মখে উপস্থিত হইয়া, দাবারে করাঘাত করিয়া “রামচরণ” বলিয়া ডাকিলেন। রামচরণ আসিয়া দবার মন্ত করিয়া দিল । ব্ৰহ্মচারী তাহাকে আলো জবালিতে আজ্ঞা করিলেন। রামচরণ প্ৰদীপ জবালিয়া, ব্রহ্মচারীকে সান্টাণ্ডগ প্ৰণাম করিল। ব্ৰহ্মচারী তখন রামচরণকে বলিলেন, “তুমি গিয়া শয়ন কর।” শনিয়া রামচরণ একবার দলনী ও কুলসমের প্রতি দাম্পিট করিয়া চলিয়া গেল। বলা বাহাদুল্য যে, রামচরণ সে রাত্রে আর নিদ্ৰা যাইতে পারিল না । ঠাকুরীজী, এত রাত্ৰে দাই জন যাবতী সত্ৰীলোক লইয়া আসিলেন কেন ?—এই ভাবনা তাহার প্রবল হইল। ব্ৰহ্মচারীকে রামচরণ দেবতা মনে করত—তাঁহাকে জিতেন্দ্ৰিয় বলিয়াই জানিত— সে বিশবাসের খব্বত হইল না। শেষে রামচরণ সিদ্ধান্ত করিল, “বোধ হয়, এই দাই জন সত্ৰীলোক সম্প্রতি বিধবা হইয়াছে---ইহাদিগকে সহমরণের প্রবত্তি দিবার জন্যই ঠাকুরজী ইহাদিগকে ডাকিয়া আনিয়াছেন—নি- জীবালা, এ কথাটা এতক্ষণ বাঁকিতে পারিতেছিলাম না।” ব্ৰহ্মচারী একটা আসনে উপবেশন করিলেন--সত্ৰীলোকেরা ভূম্যাসনে উপবেশন করিলেন। প্রথমে দলনী আত্মপরিচয় দিলেন। পরে দলনী রাত্রের ঘটনা সকল অকপটে বিবত করিলেন। শনিয়া ব্ৰহ্মচারী মনে মনে ভাবিলেন, “ভবিতব্য কে খন্ডাইতে পারে ? যাহা ঘটিবার তাহা অবশ্য ঘটিবে। তাই বলিয়া পরষকারকে অবহেলা করা কত্তব্য নহে। যাহা কত্তব্য, তাহা অবশ্য করিব।” হায়! ব্রহ্মচারী ঠাকুর ! গ্রন্থগলি কেন পোড়াইলে ? সব গ্রন্থ ভস্ম হয়, হৃদয়-গ্রন্থ ত ভস্ম হয় না। ব্ৰহ্মচারী দলনীকে বলিলেন, “আমার পরামর্শ এই যে, আপনি অকস্মাৎ নবাবের সম্মখে উপস্থিত হইবেন না। প্রথমে, পত্রের দ্বারা তাঁহাকে সবিশেষ বক্তান্ত অবগত করবেন। যদি আপনার প্রতি তাঁহার স্নেহ থাকে, তবে অবশ্য আপনার কথায় তিনি বিশ বাস করবেন। পরে তাঁহার আজ্ঞা পাইলে সম্মখে উপস্থিত হইবেন।” দ। পত্ৰ লইয়া যাইবে কে ? ব্ৰ। আমি পাঠাইয়া দিব। তখন দলনী কাগজ কলম চাহিলেন । ব্রহ্মচারী রামচরণকে আবার উঠাইলেন। রামচরণ কাগজ কলম ইত্যাদি আনিয়া রাখিয়া গেল। দলনী পত্র লিখিতে লাগিলেন। 8S a ܘ ܓ