পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী ব্ৰহ্মচারী ততক্ষণ বলিতে লাগিলেন, “এ গােহ আমার নহে; কিন্তু যতক্ষণ না রাজাজ্ঞা প্ৰাপত ་་་་་་་་་་་་་་་ এইখানেই থাকুন-কেহ জানিতে পরিবে না, বা কেহ কোন কথা জিজ্ঞাসা কারবে না ।” অগত্যা সন্ত্রীলোকেরা তাহা স্বীকার করিল। লিপি সমাপত হইলে, দলনী তাহা ব্ৰহ্মচারীর হস্তে দিলেন। সত্ৰীলোকদিগের অবস্থিতি বিষয়ে রামচরণকে উপযক্ত উপদেশ দিয়া ব্ৰহ্মচারী লিপি লইয়া চলিয়া গেলেন। মঙ্গেরের যে সকল রাজকৰ্ম্মমচারী হিন্দ, ব্রহ্মচারী তাঁহাদিগের নিকট বিলক্ষণ পরিচিত ছিলেন। মসলমানেরাও তাঁহাকে চিনিত। সতরাং সকল কৰ্ম্মমচারীই তাঁহাকে মানিত। মন্সী রামগোবিন্দ রায় ব্ৰহ্মচারীকে বিশেষ ভক্তি করিতেন। ব্ৰহ্মচারী সহযোদয়ের পর মঙ্গেরের দগমধ্যে প্রবেশ করিলেন ; এবং রামগোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া দলনীর পত্ৰ তাঁহার হস্তে দিলেন। বলিলেন, “আমার নাম করিও না ; এক ব্ৰাহ্মণ পত্ৰ আনিয়াছে, এই কথা বলিও।” মন্সী বলিলেন, “আপনি উত্তরের জন্য কাল আসিবেন।” কাহার পত্র, তাহা মন্সী কিছই জানিলেন না। ব্রহ্মচারী পানববার, পািবব বর্ণিত গহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন। দলনীর সঙেগ সাক্ষাৎ করিয়া বলিলেন, “কল্য উত্তর আসিবে। কোন প্রকারে অদ্য কাল যাপন কর।” রামচরণ প্ৰভাতে আসিয়া দেখিল, সহমরণের কোন উদ্যোগ নাই। " এই গাহের উপরিভাগে অপর এক ব্যক্তি শয়ন করিয়া আছেন। এই স্থানে তাঁহার কিছ: পরিচয় দিতে হইল। তাঁহার চরিত্র লিখিতে লিখিতে শৈবলিনী-কলষিতা আমার এই লেখনী পণ্যময়ী হইবে। চতুর্থ পরিচ্ছেদ ঃ প্রতাপ সন্দেরী বড় রাগ করিয়াই শৈবলিনীর বজরা হইতে চলিয়া আসিয়াছিল। সমস্ত পথ স্বামীর নিকটে শৈবলিনীকে গালি দিতে দিতে আসিয়াছিল। কখন “অভাগী,” কখন “পোড়ারমখী,” কখন “চুলোমখলী” ইত্যাদি প্রিয় সম্বোধনে শৈবলিনীকে অভিহিত করিয়া স্বামীর কৌতুক বন্ধন করিতে করিতে আসিয়াছিল। ঘরে আসিয়া অনেক কাঁদিয়াছিল। তার পর চন্দ্রশেখর আসিয়া দেশত্যাগী হইয়া গেলেন। তার পর কিছ দিন আমনি আমনি গেল। শৈবলিনীর বা চন্দ্ৰশেখরের কোন সম্পবাদ পাওয়া গেল না। তখন সন্দেরী ঢাকাই শাটী পরিয়া গহনা পরিতে বসিল । পকেবই বলিয়াছি, সন্দেরী চন্দ্রশেখরের প্রতিবাসি-কন্যা এবং সম্পবন্ধে ভগিনী। তাঁহার পিতা নিতান্ত অসঙ্গতিশালী নহেন। সন্দরী সচরাচর পিত্ৰালয়ে থাকিতেন। তাঁহার স্বামী শ্ৰীনাথ, প্রকৃত ঘরজামাই না হইয়াও কখন কখন শবশঙ্কুরবাড়ী আসিয়া থাকিতেন। শৈবলিনীর বিপদকালে যে শ্ৰীনাথ বেদগ্রামে ছিলেন, তাহার পরিচয় পর্কেবই দেওয়া হইয়াছে। সন্দরীই বাড়ীব গাঁহিণী। তাঁহার মাতা রাগন এবং অকমণ্য। সন্দরীর আর এক কনিষ্ঠা ভগিনী ছিল; তাহার নাম রােপসী। রােপসী শবশঙ্কুরবাড়ীতেই থাকিত। সন্দরী ঢাকাই শাটী পরিয়া অলঙ্কার সন্নিবেশপকেবািক পিতাকে বলিল, “আমি রােপসীকে দেখিতে যাইব—তাহার বিষয়ে বড় কুস্বপন দেখিয়াছি।” সন্দরীর পিতা কৃষ্ণকমল চক্ৰবত্তীর্ণ কন্যার বশীভুত, একটা আধট আপত্তি করিয়া সম্মত হইলেন। সন্দরী, রপসীর শবশরি'লয়ে গেলেন-শ্ৰীনাথ সবগহে গেলেন। রাপসীর স্বামী কে ? সেই প্ৰতাপ ! শৈবলিনীকে বিবাহ করিলে, প্রতিবাসিপত্র প্রতাপকে চন্দ্রশেখর সব্বদা দেখিতে পাইতেন। চন্দ্রশেখর প্রতাপের চরিত্রে অত্যন্ত প্রীত হইলেন । সন্দেরীর ভগিনী রােপসী বয়ঃস্থা হইলে তাহার সঙ্গে প্রতাপের বিবাহ ঘটাইলেন। , কেবল তাঁহাই নহে । চন্দ্রশেখর, কাসেম আলি খাঁর শিক্ষাদাতা; তাঁহার কাছে বিশেষ প্রতিপন্ন। চন্দ্রশেখর, নবাবের সরকারে প্রতাপের চাকরী করিয়া দিলেন। প্রতাপ স্বীয় গণে দিন দিন উন্নতি লাভ করিতে লাগিলেন। এক্ষণে প্রতাপ জমীদার। তাঁহার বহৎ অট্টালিকা—এবং দেশবিখ্যাত নাম। সন্দরীর শিবিকা তাঁহার পরীমধ্যে প্রবেশ করিল। রােপসী তাঁহাকে দেখিয়া প্ৰণাম করিয়া, সাদরে গহে লইয়া গেল। প্রতাপ আসিয়া শ্যালীকে রহস্যসম্ভাষণ করিলেন। 8 S bታ