পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী প্রা। আমরাই আনিয়াছি। শৈ। আমরাই ? আমরা কে ? প্রা। আমি আর আমার চাকর। শৈ। কেন তোমরা এখানে আনিলে ? তোমাদের কি প্রয়োজন ? প্ৰতাপ অত্যন্ত রন্ট হইলেন, বলিলেন, “তোমার মত পাপিষ্ঠার মাখ দর্শন করিতে নাই। ভূমিকে লেচ্ছের হাত হইতে উদ্ধার করলাম-আবার তুমি জিজ্ঞাসা কর, এখানে কেন অ ?יי শৈবালিনী ক্ৰোধ দেখিয়া কোধ করিলেন না-বিনীত ভাবে, প্রায় বাৎপগদগদ হইয়া বলিলেন, “যদি মেলচ্ছের ঘরে থাকা আমার এত দভাগ্য মনে করিয়াছিলে—তবে আমাকে সেইখানে মারিয়া ফেলিলে না কেন ? তোমাদের হাতে ত বন্দর্কে ছিল।” প্রতাপ অধিকতর ব্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, “তাও করিতাম—কেবল সত্ৰীহত্যারি ভয়ে করি নাই ; কিন্তু তোমার মরণই ভাল।” শৈবলিনী কাঁদিল। পরে রোদন সম্বরণ করিয়া বলিল, “আমার মরাই ভাল-কিন্তু অন্যে যাহা বলে বলক-তুমি আমায় এ কথা বলিও না। আমার এ দন্দীশা কাহা হতে ? তোমা হতে। কে আমার জীবন অন্ধকারময় করিয়াছে ? তুমি। কাহাব জন্য সখের আশায় নিরাশ হইয়া কুপথ সপথ জ্ঞানশান্য হইয়াছি ? তোমার জন্য। কাহার জন্য দঃখিনী হইয়াছি ? তোমার জন্য। কাহার জন্য আমি গহধৰ্ম্মেম" মন রাখিতে পারিলাম না ? তোমারই জন্য। তুমি আমায় গালি দিও না।” প্রতাপ বলিলেন, “তুমি পাপিঠা, তাই তোমায় গালি দিই। আমার দোষ! ঈশবর জানেন, আমি কোন দোষে দোষী নাহি। ঈশবর জানেন, ইদানীং আমি তোমাকে সাপ মনে করিয়া, ভয়ে তোমার পথ ছাড়িয়া থাকিতাম। তোমার বিষের ভয়ে আমি বেদগ্রাম ত্যাগ করিয়াছিলাম। তোমার নিজের হৃদয়ের দোষ—তোমার প্রবত্তির দোষ। তুমি পাপিঠা, তাই আমার দোষ দাও । আমি তোমার কি করিয়াছি ?” শৈবলিনী গজিয়া উঠিল—বলিল, “তুমি কি করিয়ােছ ? কেন তুমি, তোমার ঐ অতুল্য দেবমাত্তি লইয়া আবার আমায় দেখা দিয়াছিলে ? আমার সফটনোন্মখ যৌবনকালে, ও রাপের জ্যোতি কেন আমার সম্মখে জবালিয়াছিলে ? যাহা একবার ভুলিয়াছিলাম, আবার কেন তাহা উদ্দীপত করিয়াছিলে ? আমি কেন তোমাকে দেখিয়াছিলাম ? দেখিয়াছিলাম ত তোমাকে পাইলাম না কেন ? না পাইলাম ত মরিলাম না কেন ? তুমি কি জান না, তোমারই রােপ ধ্যান করিয়া গহ আমার অরণ্য হইয়াছিল ? তুমি কি জান না যে, তোমার সঙ্গে সম্প্ৰবন্ধ বিচ্ছিন্ন হইলে যদি কখন তোমায় পাইতে পারি, এই আশায় গহত্যাগিনী হইয়াছি ? নাহিলে ফন্টর আমার কে ?” শনিয়া, প্রতাপের মাথায় বজা ভাঙ্গিয়া পড়িল--তিনি বশিচকদম্পেটর ন্যায় পীড়িত হইয়া, সে সস্থান হইতে বেগে পলায়ন করিলেন। সেই সময়ে বহি দবারে একটা বড় গোল উপস্থিত হইল। সপ্তম পরিচ্ছেদ ঃ গলািন্টন ও জনসন রামচরণ নৌকা হইতে শৈবলিনীকে লইয়া উঠিয়া গেলে, এবং প্রতাপ নৌকা পরিত্যাগ করিয়া গেলে, যে তেলিংগা সিপাহী প্রতাপের আঘাতে অবসন্নহস্ত হইয়া ছাদের উপরে বসিয়াছিল, সে ধীরে ধীরে তটের উপর উঠিল। উঠিয়া যে পথে শৈবলিনীর শিবিকা গিয়াছে, সেই পথে চলিল। অতিন্দরে থাকিয়া শিবিকা লক্ষ্য করিয়া, তাহার অনসরণ করিতে লাগিল । সে জাতিতে মনুসলমান। তাহার নাম বিকাউল্লা খাঁ । ক্লাইভের সঙ্গে প্রথম যে সেনা বঙ্গদেশে আসিয়াছিল, তাহারা মান্দ্রাজ হইতে আসিয়াছিল বলিয়া, ইংরেজীদিগের দেশী সৈনিকগণকে তখন বাঙ্গালাতে তেলিঙ্গা বলিত; কিন্তু এক্ষণে অনেক হিন্দ স্থানী হিন্দ ও 'মাসলমান ইংরেজসেনা-ভুক্ত হইয়াছিল। বকাউল্লার নিবাস, গাজিপরের নিকট। বকাউল্লা শিবিকার সঙ্গে সঙ্গে অলক্ষ্যে থাকিয়া, প্রতাপের বাসা পর্য্যন্ত আসিল। দেখিল যে, শৈবলিনী প্রতাপের গহে প্রবেশ করিল। বিকাউল্লা তখন আমিয়ট সাহেবের কুঠিতে গেল । 8决8