পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकाश ज्ञष्नाबव्ी মরে, তুমি দাঁড়াইয়া দেখিতেছ?” এই বলিয়া প্ৰতাপ সিপাহীকে এক পদাঘাত করিলেন। সেই এক পদাঘাতে সিপাহী পানসী হইতে পড়িয়া গেল। তীরের দিকে সিপাহী পড়িল । “সত্ৰীলোককে রক্ষা কর” বলিয়া প্রতাপ অপর দিকে জলে ঝাঁপ দিলেন। সন্তরণপাট শৈবলিনী আগে আগে সাঁতার দিয়া চলিল। প্রতাপ তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ সন্তরণ করিয়া চলিলেন। “কয়েদী ভাগিল” বলিযা পশ্চাতের সান্ত্রী ডাকিল। এবং প্রতাপকে লক্ষ্য করিয়া বন্দক উঠাইল। তখন প্রতাপ সাঁতার দিতেছেন। প্রতাপা ডাকিয়া বলিলেন, “ভয় নাই –পলাই নাই। এই সত্ৰীলোকটাকে উঠাইব —সমখে সত্ৰীহত্যা কি প্রকারে দেখিব ? তুই বাপ, হিন্দ-বঝিয়া ব্ৰহ্মহত্যা করিস।” সিপাহী বন্দক নত করিল। এই সময়ে শৈবলিনী সর্ববশেষের নৌকার নিকট দিয়া সন্তরণ করিয়া যাইতেছিল। সেখানি দেখিয়া শৈবলিনী অকস্মাৎ চমকিয়া উঠিল। দেখিল যে, যে নৌকায় শৈবলিনী লরেন্স ফাস্টরের সঙ্গে বাস করিয়াছিল, এ সেই নৌকা । শৈবলিনী কমিপিতা হইয়া ক্ষণকাল তৎপ্রতি দক্ষিটপাত করিল। দেখিল, তাহার ছাদে জ্যোৎস্নার আলোকে, ক্ষদ্র পালঙ্কের উপর একটি সাহেব অদধ্যািশয়ানাবস্থায় রহিয়াছে। উক্তজবল চন্দ্ররাশিম তাহার মখমণডলে পড়িয়াছে। শৈবলিনী চীৎকার শব্দ করিল—দেখিল, পালঙেক লরেন্স ফন্ডটির। লরেন্স ফন্টরাও সন্তরণকারিণীর প্রতি দণ্ডিণ্ট করিতে করিতে চিনিল, শৈবলিনী। লরেন্স ফন্ডটরও চীৎকার করিয়া বলিল, “পাকড়ো! পাকড়ো! হামারা বিবি!” ফন্টের শীণ্যু, রাগন, দৰবািল, শয্যাগত, উত্থানশক্তিরহিত। ফক্টরের শব্দ শনিয়া চারি পাঁচ জন শৈবলিনীকে ধরিবার জন্য। জলে ঝাঁপ দিয়া পড়িল । প্ৰতাপ তখন তাহাদিগের অনেক আগে । তাহারা প্রতাপকে ডাকিয়া বলিতে লাগিল, “পাকড়ো ! পাকড়ো! ফন্টর সাহাব ইনাম দেগা।” প্রতাপ মনে মনে বলিল, “ফন্টর সাহেবকে আমিও ধরিতেছি।--তোমরা উঠ ৷ ” এই কথায় বিশ্ববাস করিয়া সকলে ফিরিল। ফন্টর বঝে নাই যে, অগ্রবত্তীর্ণ ব্যক্তি প্ৰতাপ। ফন্সটরের মসিতসক। তখনও নীরোগ হয় নাই । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ৪ অগাধ জলে সাঁতার দই জনে সত্যিারিয়া, অনেক দরে গেল। কি মনোহর দশ্য! কি সংখর সাগরে সাঁতার! এই অনন্ত দেশব্যাপিনী, বিশাল হৃদখা, ক্ষদ্রবীচিমালিনী, নীলিমাময়ী তটিনীর বক্ষে, চন্দ্রকরসাগর মধ্যে ভাসিতে ভাসিতে, সেই উদ্ধবস্থি অনন্ত নীলসাগরের দণ্ডিণ্ট পড়িল! তখন প্রতাপমনে করিল, কেনই বা মনানুষ্য-আদলেট ঐ সমন্দ্ৰে সাঁতার নাই ? কেনই বা মানষে ঐ মেঘের তরঙ্গ ভাঙ্গিতে পারে না ? কি পণ্য করলে ঐ সমদ্রে সন্তবাণকারী জীব হইতে পারি ? সাঁতার ? কি ছার ক্ষদ্র পার্থিব নদীতে সাঁতার ? জন্মিধা অবধি এই দর্যন্ত কাল-সমান্দ্ৰে সাঁতার দিতেছি, তরঙ্গ ঠেলিয়া তরঙ্গের উপর ফেলিতেছি- -তৃণাবৎ তরঙ্গে তরঙ্গে বেড়াইতৌছ—আবার সাঁতার কি ? শৈবলিনী ভাবিল, এ জলের ত তল আছে,-আমি যে অতল জলে ভাসিতেছি। তুমি গ্রাহ্য কর না কর, তাই বলিয়া ত জড় প্রকৃতি ছাড়ে না।--সৌন্দৰ্য্য ত ল্যুকাইয়া রয় না। তুমি যে সমদ্রে সাঁতার দেও না কেন, জল-নীলিমার মাধধ্যে বিকৃত হয় না—ক্ষদ্র বীচির মালা ছিড়ে না—তারা তেমনি জািবলে—তীরে বক্ষে তেমনি দোল, জলে চাঁদের আলো তেমনি খেলে। জড় প্রকৃতির দৌরাত্ম্য! স্নেহময়ী মাতার ন্যায়, সকল সময়েই আদর করিতে চায়। এ সকল কেবল প্রতাপের চক্ষে। শৈবলিনীর চক্ষে নহে। শৈবলিনী নৌকার উপর যে রাগন, শীর্ণ, শোবত মখমন্ডল দেখিয়াছিল, তাহার মনে কেবল তাঁহাই জাগিতেছিল। শৈবলিনী কলের পত্তলির ন্যায় সাঁতার দিতেছিল। কিন্তু শ্রান্তি নাই। উভয়ে সন্তরণ-পট। সন্তরণে প্রতাপের আনন্দ-সাগর উছলিয়া উঠিতেছিল। প্রতাপা ডাকল, “শৈবলিনী-শৈ!” 8 ○Wり