পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ “পরিশেষে বক্তব্য যে, আমি পর্বে কখনও ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখি নাই। দগেশনন্দিনী বা চন্দ্রশেখর বা সীতারামকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যাইতে পারে না। এই প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিলাম। এই পৰ্য্যন্ত ঐতিহাসিক উপন্যাসপ্রণয়নে কোন লেখকই সম্পর্ণেরপে কৃতকাৰ্য্য হইতে পারেন নাই। আমি যে পারি নাই, তাহা বলা বাহল্য। “ভাষা সম্পবন্ধেও একটা কথা বলা প্রয়োজনীয়। এখন লেখকেরা বা ভাষা-সমালোচকেরা দই ভাগে বিভক্ত। এক সম্প্রদায়ের মত যে, বাঙ্গালা ব্যাকরণ • সৰ্ব্বস্তু সংস্কৃতানযায়ী হওয়া উচিত। দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের মত—তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই সংস্কৃতে সপন্ডিত-যে, যাহা পৰ্ব্ব হইতে চলিয়া আসিতেছে, তাহা সংস্কৃত ব্যাকরণ বিরািন্ধ হইলেও চলিতে পারে। আমি নিজে এই দিবতীয় সম্প্রদায়ের মতের পক্ষপাতী, কিন্তু সম্পর্ণেরপে এবং সকল স্থানে তাঁহাদের অন্যুমোদনে প্রস্তুত নাহি। আমি যদিও ইতিপকেব সম্বোধনে "ভগবীন’, ‘প্রভো’, ‘স্বামিন’, ‘রাজকুমারী’, ‘পিতঃ” প্রভৃতি লিখিয়াছি, এক্ষণে এ সকল বাঙ্গালা ভাষায় অপ্রযোজ্য বলিয়া পরিত্যাগ করিয়াছি। আমি তথা’ এবং তথায়’, উভয় রােপই ব্যবহার করিয়াছি। ‘সসৈন্যে এবং ‘সসৈন্য’ দই-ই লিখিয়াছি—একট, অর্থ প্রভেদ। কিন্তু ‘গোপিনী’ ‘সশরীরে উপস্থিত', এরপ প্রয়োণ পরিত্যাগ করিয়াছি। কারণনিদ্দেশেব এ সথান নহে। সময়ান্তরে তাহা করিব ইচ্ছা আছে।” বঙ্কিমচন্দ্র উক্ত বিজ্ঞাপনে ঐতিহাসিক উপাদানের অপ্রতুলতা সম্বন্ধে যে দঃখ করিয়াছেন, সে সম্পবন্ধে, আচাৰ্য্য যদ্যনাথ বলেন, ‘আজ এরপ দঃখ করিবার কারণ নাই। বঙ্কিমের পর এই আদর্ধশতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে যে সব ঐতিহাসিক উপাদান আবিস্কৃত হইয়াছে, তাহার ফলে এই রাজপত-মাঘল সংঘর্ষের ইতিহাস একমাত্র সমসাময়িক বর্ণনা হইতে যেমন বিস্তৃত ও বিশদ্ধভাবে রচনা করা যায়, এমন আর কোন যাগের ভারত-ইতিহাসে সম্পভব নয়।” আচাৰ্য্য যদ্যনাথ এই উপন্যাসগলি সম্যক বিশেলষণ করিয়াছেন রাজসিংহের ভূমিকায় (পরিষৎ-সংস্করণ, ঃ yo-৷০)। ‘রাজসিংহ” (শেষ সংস্করণ) পাঠান্তে রবীন্দ্রনাথ যাহা লিখিয়াছেন তাহাতে ইহার চরম উৎকষের ইঙিগত আছে। তিনি লিখিয়াছেন : “.. তাহার এক একটি খন্ড এক একটি নিঝর্ণরের মত দ্রুত ছটিয়া চলিয়াছে। প্রথম • প্রথম তাহাতে কেবল আলোকের ঝিকিমিকি এবং চ৭8ল লহরীর তরল কলধবনি—তাহার পর ষস্ঠ খন্ডে দেখি ধবনি গম্ভীর, স্রোতের পথ গভীর এবং জলের বর্ণ ঘনকৃষ্ণ হইয়া আসিতেছে, তাহার পর সপ্ততম খন্ডে দেখি, কতক বা নদীর স্রোত, কতক বা সমদ্রের তরঙ্গ, কতক বা অমোঘ পরিণামের মেঘগম্ভীরগডজনি, কতক বা তীব্র লবণাশ্র নিমগন হৃদয়ের সগভীর কুন্দনোেচ্ছবাস, কতক বা কালপরিষলিখিত ইতিহাসের বিরাট ব্যাকুল বিস্তার, কতক বা ব্যক্তিবিশেষের মজজমান তবণীর প্রাণপণ হাহাধবনি। সেখানে নিত্য অতিশয় রদ্র, ক্ৰন্দন অতিশয় তীব্র এবং ঘটনাবলী ভারত ইতিহাসের একটি যাগাবসান হইতে যােগান্তরের দিকে ব্যাপিত হইয়া গিয়াছে।” (“রাজসিংহ” : সাধনা—চৈত্র, ১৩o o, পঃ S১৩) পরবত্তী কালেও অনেকে ‘রাজসিংহ” সম্পবন্ধে আলোচনা করিয়াছেন। \b|(N9Moe) বাঙ্গালীর জাতীয় জীবন সংগঠনে “আনন্দমঠে’র সােথান কত উচ্চ ও গভীর তাহা নির্ণয়ের সময় হয়ত এখনও আসে নাই। এক সময়ে সর্বদেশকমীদের এক হাতে ছিল গীতা ও অন্য হাতে ছিল আনন্দমঠ। যদিও গ্রন্থশেষে “বিসর্জন” আসিয়া “প্ৰতিস্ঠা’কে লইয়া যায়, তথাপি আনন্দমঠের ভিতরকার ভাবব্যঞ্জনা তথা সন্ন্যাসী সন্তান-সম্প্রদায়ের নিম্পাকাম সর্বদেশপ্রেম বাংগালী যবকদের প্রাণে সর্বদেশভক্তির সঙ্গে সঙ্গে আশ্চৰ্য্য ত্যাগ, ও সেবা-ধর্মের উদ্রেক করিয়াছিল। উপন্যাস হিসাবে ‘আনন্দমঠ' কাহারও কাহারও নিকট উদ্দেশ্যমােলক বলিয়া নিকৃত্স্ট বিবেচিত হইলেও, জাতীয় জীবন গঠনে ইহার কৃতিত্ব সমরণ করিলে ইহাকে অতি উচ্চেই সস্থান দিতে হয়। আনন্দমঠ রচনার সার্থকতা এইখানেই। সম্প্রসিদ্ধ “বন্দে মাতরম' সঙ্গীত আনন্দমঠেরই অন্তগত । গত শতাব্দীর সপত্তম দশকের শেষাদেধি ও অস্টম দশকের প্রারম্ভে বাওগালীর জীবনে সমগ্র ভারতীয় জাতীয়তার সাড়া পড়িয়া যায়, গলানিকর রাজকীয় বিধিব্যবস্থার-যেমন, সিবিল সাবিসি, দেশীয় মাদ্রাযন্ত্র আইন, অস্ত্র আইন প্রভৃতির প্রতিবাদে নব্যশিক্ষিত বাঙ্গালী সমাজ ভারতব্যাপী আন্দোলন সর, করিয়া দেন। কলিকাতা তখন ভারতবষের শাসন-কেন্দ্র, সতরাং এখােন হইতে সবাভাবিকভাবেই এই আন্দোলন বিভিন্ন প্রদেশে ছড়াইয়া পড়ে। তখনও ইলবার্ট 3ン