পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রশেখর আরও মসলমান নৌকার উপর উঠিল। আরও কতকগলা মসলমান মদগরাদি লইয়া নৌকার তলে আঘাত করিতে লাগিল। নৌকার তলদেশ ভগন হইয়া যাওয়ায়, কল কল শব্দে তরণী জলপািণ হইতে লাগিল। আমিয়ট সঙগী দিগকে বলিলেন, “গোমেষাদির ন্যায় জলে ডুবিয়া মরিব কেন ? বাহিরে তখন তরবারি হস্তে তিন জন ইংরেজ অকুতোভয়ে, সেই অগণিত, যবনগণের সম্মখে আসিয়া দাঁড়াইল। একজন যবন, আমিয়টকে সেলাম করিয়া বলিল, “কেন মরিবেন ? আমাদিগের সঙেগ আসন।” আমিয়ট বলিলেন, “মরিব । আমরা আজি এখানে মরিলে, ভারতবর্ষে যে আগােন জীবলিবে, তাহাতে মসলমান রাজ্য ধবংস হইবে। আমাদের রক্তে ভূমি ভিজিলে তৃতীয় জড়োজার রাজপতাকা তাহাতে সহজে রোপিত হইবে।” “তবে মর।” এই বলিয়া পাঠান তরবারির আঘাতে আমিয়টের মন্ড চিরিয়া ফেলিল । দেখিয়া ক্ষিপ্ৰহস্তে গল অটন সেই পাঠানের মন্ড স্কন্ধচু্যত করিলেন। তখন দশ বার জন যবনে গলন্টনকে ঘেরিয়া প্রহার করিতে লাগিল। এবং অচিরাৎ বহি লোকের প্রহারে আহত হইয়া গলণ্ডটন ও জনসন উভয়েই প্রাণত্যাগ করিয়া নৌকার উপর শাইলেন। দিবতীয় পরিচ্ছেদ ঃ আবার সেই তৎপর্কেবই ফন্টের নৌকা খলিয়া গিয়াছিল। যখন রামচরণের গলি খাইয়া লরেন্স ফন্টর গঙ্গার জলে নিক্ষিপত হইয়াছিল, তখন প্রতাপ বজরা খালিয়া গেলে পর, হাতিয়ারের নৌকার মাঝিরা জলে ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া ফাস্টরের দেহের সন্ধান করিয়া উঠাইয়াছিল; সেই নৌকার পাশ দিয়াই ফন্টরের দেহ ভাসিয়া যাইতেছিল। তাহারা ফন্টেরকে উঠাইয়া নৌকায় রাখিয়া আমিয়টকে সম্পবাদ দিয়াছিল। আমিয়ট সেই নৌকার উপর আসিলেন। দেখিলেন, ফস্টর অচেতন, কিন্তু প্ৰাণ নিগতি হয়। নাই। মস্তিম্ভক ক্ষত হইয়াছিল বলিয়া চেতনা বিনম্ৰাট হইয়াছিল। ফন্টরের মরিবারই অধিক সম্পভাবনা, কিন্তু বাঁচিলেও বাঁচিতে পারেন। আমিয়ট চিকিৎসা জানিতেন, রীতিমত তাঁহার চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন। বকাউল্লা প্রদত্ত সন্ধান মতে, ফল্টরের নৌকা খাজিয়া ঘাটে আনিলেন। যখন আমিয়ট মঙ্গের হইতে যাত্রা করেন, তখন মতবৎ ফাস্টরকে সেই নৌকায় फूर्गव्लशा ऊञान्6िळ्नन् । ফ'ণ্টরের পরমায়, ছিল—সে চিকিৎসায় বাঁচল। আবার পরমায় ছিল, মরশিদাবাদে মসলমান-হস্তে বাঁচিল । কিন্তু এখন সে রািগন—বলহীন—তেজোহীন,--আর সে সাহস—সে দম্ভ নাই। এক্ষণে সে প্রাণভয়ে ভীত, প্রাণভয়ে পলাইতেছিল। মস্তিস্কের আঘাত জন্য, বদ্ধিও কিঞ্চিৎ বিকৃত হইয়াছিল। ফন্টর দ্রুত নৌকা চালাইতেছিল—তথাপি ভয়, পাছে মসলমান পশ্চাদ্ধাবিত হয়। প্রথমে সে কাশিমবাজারের রেসিডেন্সিতে আশ্রয় লইবে মনে করিয়াছিল—তাহাতে ভয় হইল, পাছে মসলমান গিয়া রেসিডেন্সি আক্ৰমণ করে। সতরাং সে অভিপ্রায় ত্যাগ করিল। এ স্থলে ফন্ডটির যথাৰ্থ অনামান করিয়াছিল। মসলমানেরা অচিরাৎ কাশিমবাজারে গিয়া রেসিডেন্সি আক্ৰমণ করিয়া তাহা লািঠ করিল। ফটের দ্রুতবেগে কাশিমবাজার, ফরাসডাঙ্গা, সৈন্দাবাদ, রাঙ্গামাটি ছাড়াইয়া গেল। তথাপি ভয় যায় না। যে কোন নৌকা পশ্চাতে আইসে, মনে করে, যবনের নৌকা আসিতেছে। দেখিল, একখানি ক্ষদ্র নৌকা কোন মতেই সঙ্গ ছাড়িল না। ফন্ডটির তখন রক্ষার উপায় চিন্তা করিতে লাগিল। ভ্ৰান্ত বন্ধিতে নানা কথা মনে আসিতে লাগিল। একবার মনে করিল যে, নৌকা ছাড়িয়া তীরে উঠিয়া পলাই। আবার ভাবিল, পলাইতে পারিব না—আমার সে বল নাই। আবার ভাবিল, জলে ডুবি—আবার ভাবিল, জলে 8○ ○