পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী কোন কঠিন আজ্ঞা না আসে। এইরপ দরিভিসন্ধি করিয়া তােক এই রাত্রে নবাবের সমীপে মিথ্যাকথা পরিপািণ এক আরজি পাঠাইতেছিলেন। মহম্মদ তকি নবাবকে লিখিলেন যে, বেগমকে আমিয়টের নৌকায় পাওয়া গিয়াছে। তাঁকি তাঁহাকে আনিয়া যথাসম্পমানপৰ্ব্বক কেল্লার মধ্যে রাখিয়াছেন। কিন্তু বিশেষ আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে হজারে পাঠাইতে পারিতেছেন না। ইংরেজীদিগের সঙগী খানসামা, নাবিক সিপাহী প্রভৃতি যাহারা জীবিত আছে, তাহদের সকলের প্রমখাৎ শনিয়াছেন যে, বেগম আমিয়টের উপপত্নীস্বরপ নৌকায় বাস করিতেন। উভয়ে এক শয্যায় শয়ন করিতেন। বেগম স্বয়ং এ সকল কথা স্বীকার করিতেছেন। তিনি এক্ষণে খাস্টধমাবলম্বন করিয়াছেন। তিনি মঙেগরে যাইতে অসম্মত। বলেন, “আমাকে ছাড়িয়া দাও । আমি কলিকাতায় গিয়া আমিয়ট সাহেবের সহৃদগণের নিকট বাস করিব। যদি না ছাড়িয়া দাও, তবে আমি পলাইয়া যাইব। যদি মঙেগরে পাঠাও, তবে আত্মহত্যা করিব।” এমত অবস্থায় তাঁহাকে মণ্ডেগরে পাঠাইবেন, কি এখানে রাখিবেন, কি ছাড়িয়া দিবেন, তদিবষয়ে আজ্ঞার প্রত্যাশায় রহিলেন। আজ্ঞা প্ৰাপত হইলে তদনসারে কায্য করিবেন। তিকি এই মৰ্ম্মেম পত্র লিখিলেন। আশবারোহী দত সেই রাত্ৰেই এই পত্ৰ লইয়া মঙেগরে যাত্ৰা করিল। কেহ কেহ বলে, দরবত্তীর্ণ অজ্ঞাত অমঙ্গল ঘটনাও আমাদিগের মন জানিতে পারে। এ কথা যে সত্য, এমত নহে; কিন্তু যে মহত্তে মরশিদাবাদ হইতে অশবারোহী দত দলনীবিষয়ক পত্ৰ লইয়া মডেগারে যাত্ৰা করিল, সেই মহত্তে দলনীর শরীর রোমাঞ্চিত হইল। সেই মহত্তে তাঁহার পাশ্যবস্থা বলিঙ্ঠ পরিষ, প্রথম কথা কহিল। তাঁহার কন্ঠস্বরে হউক, অমঙ্গলসচনায় হউক, যাহাতে হউক, সেই মহত্তে দলনীর শরীর কণ্টকিত হইল। পার্শবােবত্তীর্ণ পরিষ বলিল, “তোমায় চিনি। তুমি দলনী বেগম।” দলনী শিহরিল। পাশাব্যস্থ পরিষ পনেরপি কহিল, “জানি, তুমি এই বিজন সথানে দনরাত্মা কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়ােছ।” দলনীর চক্ষের প্রবাহ আবার ছটিল। আগন্তুক কহিল, “এক্ষণে তুমি কোথা যাইবে ?” সহসা দলনীর ভয় দরি হইয়াছিল। ভয় বিনাশের দলনী বিশেষ কারণ পাইয়াছিল। দলনী কাঁদিল। প্রশনিকত্তা প্রশন পািনরপি করিলেন। দলনী বলিল, “যাইব কোথায় ? আমার যাইবার স্থান নাই। এক যাইবার স্থান আছে--কিন্তু সে অনেক দর। কে আমাকে সেখানে সঙ্গে লইয়া যাইবে ?” আগন্তুক বলিলেন, “তুমি নবাবের নিকটে যাইবার বাসনা পরিত্যাগ কর।” দলনী উৎকণিষ্ঠতা, বিস্মিতা হইয়া বলিলেন, “কেন ?” “অমঙগল ঘটিবে। ” দলনী শিহরিল, বলিল, “ঘটক। সেই বৈ আর আমার স্থান নাই। অন্য মঙ্গলাপেক্ষা সবামীর কাছে অমঙগলও ভাল।” “তবে উঠ। আমি তোমাকে মরশিদাবাদে মহম্মদ তাঁকির নিকট রাখিয়া আসি। মহম্মদ তাঁক তোমাকে মঙ্গেরে পাঠাইয়া দিবেন। কিন্তু আমার কথা শন। এক্ষণে যন্ধ আরম্ভ হইয়াছে। নবাব স্বীয় পৌরজনকে রহিদাসের গড়ে পাঠাইবার উদ্যোগ করতেছেন। তুমি সেখানে যাইও না।” “আমার কপালে যাই থাকুক, আমি যাইব ।” “তোমার কপালে মঙ্গের দশন নাই।” দলনী চিন্তিত হইল। বলিল, “ভবিতব্য কে জানে ? চলন, আপনার সঙ্গে আমি মরশিদাবাদ যাইব । যতক্ষণ প্ৰাণ আছে, নবাবকে দেখিবার আশা ছাড়িব না।” আগন্তুক বলিলেন, “তাহা জানি। আইস।” দই জনে অন্ধকার রাত্রে মরিশিদাবাদে চলিল। দলনী-পতঙ্গ বহ্নিমখবিবিক্ষ হইল 3(