পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नीमक्ष প্রথম পরিচ্ছেদ পর্বকথা পািব্বকথা যাহা বলি নাই, এক্ষণে সংক্ষেপে বলি। চন্দ্রশেখরই যে পািব্ব কথিত ব্ৰহ্মচারী, তাহা জানা গিয়াছে। যেদিন আমিয়ট, ফল্টরের সহিত, মঙ্গের হইতে যাত্ৰা করিলেন, সেই দিন সন্ধান করিতে করিতে রমানন্দ স্বামী জানিলেন যে, ফল্টর ও দলনীবেগম প্রভৃতি একত্রে আমিয়টের সঙ্গে গিয়াছেন। গঙগাতীরে গিয়া চন্দ্রশেখরের সাক্ষাৎ পাইলেন। তাঁহাকে এ সম্পবাদ অবগত করাইলেন, বলিলেন, “এখানে তোমার আর থাকিবার প্রয়োজন কি—কিছই না। তুমি সবদেশে প্রত্যাগমন কর। শৈবলিনীকে আমি কাশী পাঠাইব । তুমি যে পরহিতৱত গ্রহণ করিয়াছ, আদ্য হইতে তাহার কায্য কর। এই যবনকন্যা ধৰ্ম্মিশ্ৰষ্ঠা, এক্ষণে বিপদে পতিত হইয়াছে, তুমি ইহার পশ্চাদন সরণ কর; যখনই পরিবে, ইহার উদ্ধারের উপায় করিও। প্রতাপও তোমার আত্মীয় ও উপকারী, তোমার জন্যই এ দদশাগ্রস্ত; তাহাকে এ সময়ে ত্যাগ করিতে পারিবে না। তাহাদের অনসরণ কর।“ চন্দ্রশেখর নবাবের নিকট সম্পবাদ দিতে চাহিলেন, রমানন্দ স্বামী নিষেধ করিলেন, বলিলেন, “আমি সেখানে সম্পবাদ দেওয়াইব ।” চন্দ্রশেখর গরের আদেশে, অগত্যা, একখানি ক্ষদ্র নৌকা লইয়া আমিয়টের অনসরণ করিতে লাগিলেন। রমানন্দ স্বামীও সেই অবধি, শৈবলিনীকে কাশী পাঠাইবার উদ্যোগে উপযক্ত শিষ্যের সন্ধান করিতে প্রবত্ত হইলেন। তখন অকস্মাৎ জানিলেন যে, শৈবলিনী পথক নৌকা লইয়া ইংরেজের অনসরণ করিয়া চলিয়াছে। রমানন্দ স্বামী বিষম সঙ্কটে পড়িলেন। এ পাপিষ্ঠা কাহার অনসরণে প্রবত্ত হইল, ফল্সটরের না চন্দ্রশেখরের ? রমানন্দ স্বামী, মনে মনে ভাবিলেন, “বঝি চন্দ্ৰশেখরের মুন্না আবার আমাকে সাংসারিক ব্যাপারে লিপ্ত হইতে হইল।” এই ভাবিয়া তিনিও সেই পথে क्रान्म । রমানন্দ স্বামী, চিরকাল পদব্রজে দেশ বিদেশ ভ্ৰমণ করিয়াছেন, —উৎকৃষ্ট পরিব্রাজক। তিনি তটপন্থে, পদব্রজে, শীঘ্রই শৈবলিনীকে পশ্চাৎ করিয়া আসিলেন; বিশেষ তিনি আহার নিদ্রার বশীভুত নহেন, অভ্যাসগণে সে সকলকে বশীভূত করিয়াছিলেন। কুমে আসিয়া চন্দ্রশেখরকে ধরিলেন। চন্দ্রশেখর তীরে রমানন্দ স্বামীকে দেখিয়া, তথায় আসিয়া তাঁহাকে প্ৰণাম করিলেন। রমানন্দ সবামী বলিলেন, “একবার, নবদ্বীপে, অধ্যাপকদিগের সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য বওগদেশে যাইব, অভিলাষ করিয়াছি; চল তোমার সঙ্গে যাই।” এই বলিয়া রমানন্দ স্বামী চন্দ্ৰশেখরের নৌকায় উঠিলেন। ইংরেজের বহর দেখিয়া তাঁহারা ক্ষদ্র তরণী নিভৃতে রাখিয়া তীরে উঠিলেন। দেখিলেন, শৈবলিনীর নৌকা আসিয়াও, নিভৃতে রহিল ; তাঁহারা দই জনে তীরে প্রচ্ছন্নভাবে থাকিয়া সকল দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন, প্রতাপ শৈবলিনী সাঁতার দিয়া পলাইল। দেখিলেন, তাহারা নৌকায় উঠিয়া পলাইল। তখন তাঁহারাও নৌকায় উঠিয়া তাহাদিগের পশ্চাদবত্তীর্ণ হইলেন। তাহারা নৌকা লাগাইল, দেখিয়া তাঁহারাও কিছ: দরে নৌকা লাগাইলেন। রমানন্দ স্বামী অনন্তবন্ধিশালী,-চন্দ্রশেখরকে বলিলেন, “সাঁতার দিবার সময় প্রতাপ ও শৈবলিনীতে কি কথোপকথন হইতেছিল, কিছ শনিতে পাইয়াছিলে ?” S || on [ । র। তবে, আদ্য রাত্রে নিদ্রা যাইও না। উহাদের প্রতি দটি রােখ। উভয়ে জাগিয়া রহিলেন। দেখিলেন, শেষ রাত্রে শৈবলিনী নৌকা হইতে উঠিয়া গেল। ক্ৰমে তীরবনমধ্যে প্রবেশ করিয়া আদশ্য হইল। প্রভাত হয়, তথাপি ফিরিল না। তখন রমানন্দ স্বামী চন্দ্রশেখরকে বলিলেন, “কিছ: বঝিতে পারিতেছি না, ইহার মনে কি আছে। চল, উহার অনসরণ করি।” 8GS