পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাধারাণী রাধারাণীর মাের কুটনীর বাজারের অনতিদারে। তাহদের কুটীরের নিকটেই পদ্মলোচন শাহার কাপড়ের দোকান। পদ্মলোচন খোদ,-পোড়ারম্যুখো কাপড়ে মিনাসে—একজোড়া নািতন কুঞ্জাদার শান্তিপরে কাপড় হাতে করিয়া আনিয়াছিল, এখন দবার খোলা পাইয়া তাহা রাধারাণীকে দিল। বলিল, “রাধারাণীর এই কাপড়।” রাধারাণী বলিল, “ওমা! আমার কিসের কাপড়া!” পদ্মলোচন—সে বাসতবিক পোড়ারম্যুখো কি না, তাহা আমরা সবিশেষ জানি না-রাধারাণীর কথা শনিয়া কিছ বিস্মিত হইল ; বলিল, “কেন, এই যে এক বােব এখনই আমাকে নগদ দাম দিয়া বলিয়া গেল যে, এই কাপড় এখনই ঐ রাধারাণীকে দিয়া এস।” রাধারাণী তখন বলিল, “ওমা সেই গো! সেই। তিনিই কাপড় কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। হাঁ গা পদ্মলোচন ?”— রাধারাণীর পিতার সময় হইতে পদ্মলোচনা ইহাদের কাছে সপরিচিত—অনেক বারই ইহাদিগের নিকট যখন সদিন ছিল, তখন চারি টাকার কাপড়ে শপথ করিয়া আট টাকা সাড়ে বারো আনা, আর দই আনা মনোফা লইতেন। “হাঁ, পদ্মলোচন—বলি সে বাবটিকে চেন ?” পদ্মলোচন বলিল, “তোমরা চেন না ?” রাধা । না । পদ্ম। আমি বলি তোমাদের কুটস্পােব। আমি চিনি না। যাহা হৌক, পদ্মলোচন চারি টাকার কাপড় আবার মায় মনোফা আট টাকা সাড়ে চৌদ্দ আনায় বিক্ৰয় করিয়াছিলেন, আর অধিক কথা কহিবার প্রয়োজন নাই বিবেচনা করিয়া, প্ৰসন্নমনে দোকানে ফিরিয়া গেলেন। এ দিকে রাধারাণী, প্ৰাপত টাকা ভাঙগাইয়া মারি পথ্যের উদ্যোগের জন্য বাজারে গেল। বাজার করিয়া, তৈল আনিয়া প্ৰদীপ জবালিল। মার জন্য যৎকিঞ্চিৎ রন্ধন করিল। স্থান পরিভাকার করিয়া মাকে অন্ন দিবে, এই অভিপ্ৰায়ে ঘর ঝাঁটাইতে লাগিল। ঝাঁটাইতে একখানা কাগজ কুড়াইয়া পাইল-হাতে করিয়া তুলিল—“এ কি মা !” মা দেখিয়া বলিলেন—“একখানা নোট!” রাধারাণী বলিল, “তবে তিনি ফেলিয়া গিয়াছেন।” মা বলিলেন, “হাঁ! তোমাকে দিয়া গিয়াছেন। দেখ, তোমার নাম লেখা আছে।” রাধারাণী বড়ঘরের মেয়ে, একটা অক্ষরপরিচয় ছিল। সে পড়িয়া দেখিল, তাই বটে। লেখা আছে । রাধারাণী বলিল, “হাঁ মা, এমন লোক কে মা !” মা বলিলেন, “তাহার নামও নোটে লেখা আছে। পাছে কেহ চোরা নোট বলে, এই জন্য নাম লিখিয়া দিয়া গিয়াছেন। তাঁহার নাম রক্ষ্মিণীকুমার রায়।” পরদিন মাতায় কন্যায়, রক্ষ্মিণীকুমার রায়ের অনেক সন্ধান করিল। কিন্তু শ্ৰীীরামপারে বা নিকটবত্তীর্ণ কোন সথানে রক্সিণীকুমার রায় কেহ আছে, এমত কোন সন্ধান পাইল না। নোটখানি তাহারা ভাঙ্গাইল না।--তুলিয়া রাখিল—তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ রাধারাণীর মাতা পথ্য করিলেন বটে, কিন্তু সে রোগ হইতে মন্তি পাওয়া, তাঁহার অদচেস্ট ছিল না। তিনি অতিশয় ধনী ছিলেন, এখন অতি দঃখিনী হইয়াছিলেন, এই শারীরিক এবং মানসিক দিববিধ কম্পট, তাঁহার সহ্য হইল না। রোগ ক্ৰমে বন্ধি পাইয়া, তাঁহার শেষ কাল উপস্থিত হইল। এমত সময়ে বিলাত হইতে সংবাদ আসিল যে, প্রিবিকেন্সিলের আপীল তাঁহার পক্ষে নিজপত্তি পাইয়াছে; তিনি আপনি সম্পত্তি পানঃপ্রাপিত হইবেন, ওয়াশিলাতের টাকা ফেরত পাইবেন। এবং তিন আদালতের খরচা পাইবেন। কামাখ্যানাথ বাবা তাঁহার পক্ষে হাইকোর্টের উকীল 8 CS