পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कश ज्ञष्नाबव्ी ছিলেন, তিনি সস্বয়ং এই সংবাদ লইয়া রাধারাণীর মাতার কুটীরে উপস্থিত হইলেন। সমসংবাদ শনিয়া, রাগনার আবিরল নয়নাশ্র পড়িতে লাগিল। তিনি নয়নাশ্র সংবরণ করিয়া কামাখ্যা বাবকে বলিলেন, “যে প্রদীপ নিবিয়াছে, তাহাতে তেল দিলে কি হইবে ? আপনার এ সমসংবাদেও আমার আর প্রাণরক্ষা হইবে না। আমার আয়ঃ শেষ হইয়াছে। তবে আমার এই সখি যে, রাধারাণী আর অনাহারে প্রাণত্যাগ করিবে না। তাই বা কে জানে ? সে বালিকা, তাহার এ সম্পপত্তি কে রক্ষা করিবে ? কেবল আপনি ভরসা। আপনি আমার এই অন্তিম কালে আমারে একটি ভিক্ষা দিউন-নহিলে আর কাহার কাছে চাহিব ।” কামাখ্যা বােব অতি ভদ্রলোক এবং তিনি রাধারাণীর পিতার বন্ধ ছিলেন। রাধারাণীর মাতা দন্দশাগ্ৰস্ত হইলে, তিনি রাধারাণীর মাতাকে বলিয়াছিলেন যে, যত দিন না। আপীল নিৎপত্তি পায, অন্ততঃ তত দিন তোমরা আসিয়া আমার গহে অবস্থান কর, আমি আপনার মাতার মত তোমাকে রাখিব । রাধারাণীর মাতা তাহাতে অস্বীকৃত হইযাছিলেন। পরিশেষে কামাখ্যা বােব কিছ কিছ মাসিক সাহায্য করিতে চাহিলেন। “আমার এখনও কিছ হাতে আছে—— আবশ্যক হইলে চাহিয়া লইব ।” এইবােপ মিথ্যা কথা বলিয়া রাধারাণীর মাতা সে সাহায্য গ্রহণে অস্বীকৃত হইয়াছিলেন। রক্মিণীকুমারের দান গ্ৰহণ তাঁহাদিগের প্রথম ও শেষ দান গ্রহণ। কামাখ্যা বােব, এতদিন বঝিতে পারেন নাই যে, তাঁহারা এরপা দন্দশাগ্রস্ত হইয়াছেন। দশা দেখিয়া কামাখ্যা বােব অত্যন্ত কাতর হইলেন। আবার রাধারাণীর মাতা যক্ত করে তাঁহার কাছে ভিক্ষা চাহিতেছেন, দেখিয়া আরও কাতর হইলেন : বলিলেন, “আপনি আজ্ঞা করবেন, আমি কি করিব ? আপনার যাহা প্রয়োজনীয়, আমি তাহাই করিব।” রাধারাণীর মাতা বলিলেন, “আমি চলিলাম, কিন্তু রাধারাণী রহিল। এক্ষণে আদালত হইতে আমার শবশরের যথাৰ্থ উইল সিদ্ধ হইযাছে; অতএব রাধারাণী একা সমস্ত সম্পত্তির অধিকারিণী হইবে। আপনি তাহাকে দেখিবেন, আপনার কন্যায়। ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিবেন, এই আমার ভিক্ষা। আপনি এই কথা স্বীকার করিলেই আমি সমুখে মরিতে পারি।” কামাখ্যা বােব বলিলেন, “আমি আপনার নিকট শপথ করিতেছি, আমি রাধারাণীকে আপনি কন্যার অধিক যত্ন করিব। আমি কায়মনোবাক্যে এ কথা কহিলাম ; আপনি বিশ্ববাস করন ৷” যিনি মমষ, তিনি কামাখ্যা বাবর চক্ষের জল দেখিয়া, তাঁহার কথায় বিশ্ববাস করিলেন । তাঁহার সেই শীর্ণ শক্তিক অধরে একট, আহাদের হাসি দেখা দিল। হাসি দেখিয়া কামাখ্যা বােব বঝিলেন, ইনি আর বাঁচবেন না। কামাখ্যা বােব তাঁহাকে বিশেষ করিয়া অননুরোধ করিলেন যে, এক্ষণে আমার গহে চলােন— পরে ভদ্রাসন দখল হইলে আসিবেন । রাধারণীর মাতার যে অহঙকার, সে দারিদ্র্যজনিত—এজন্য দরিদ্রাবস্থায় তাঁহার গহে যাইতে চাহেন নাই। এক্ষণে আর দারিদ্র্য নাই, সতরাং আর সে অহঙ্কারও নাই। এক্ষণে তিনি যাইতে সক্ষমত হইলেন। কামাখ্যা বাব, রাধারাণী ও তাঁহার মাতাকে সযত্নে নিজালয়ে লইয়া গেলেন। তিনি রীতিমত পীড়িতার চিকিৎসা করাইলেন। কিন্তু তাঁহার জীবন রক্ষা হইল না, অলপদিনেই তাঁহার মাতু্য হইল। উপযক্ত সময়ে কামাখ্যা বােব রাধারাণীকে তাহার সম্পপত্তি দখল দেওয়াইলেন। কিন্তু রাধারাণী বালিকা বলিয়া তাহাকে নিজ বাটীতে একা থাকিতে দিলেন না, আপন গহেই রাখিলেন। কালেক্টর সাহেব, রাধারাণীর সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে আনিবার জন্য যত্ন পাইলেন, কিন্তু কামাখ্যা বাব বিবেচনা করিলেন, আমি রাধারাণীর জন্য যতদর করিব, সরকারি কৰ্ম্মচারিগণ ততদার করিবে না। কামাখ্যা বাবার কৌশলে কালেক্ট্রব সাহেব নিরস্তু হইলেন। কামাখ্যা বােব স্বয়ং রাধারাণীর সম্পপত্তির তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন। বাকি রাধারাণীর বিবাহ। কিন্তু কামাখ্যা বােব নব্যাতন্ত্রের লোক-বাল্যবিবাহে তাঁহার দেবষ ছিল। তিনি বিবেচনা করিলেন যে, রাধারাণীর বিবাহ তাড়াতাড়ি না দিলে, জাতি গেল মনে করে, এমত কেহ তাহার নাই। অতএব যবে রাধারাণী, স্বয়ং বিবেচনা করিয়া বিবাহে ইচ্ছক হইবে, তবে তাহার বিবাহ দিব। এখন সে লেখাপড়া শিখক। SO