পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাধারাণী এই ভাবিয়া কামাখ্যা বােব রাধারাণীর বিবাহের কোন উদ্যোগ না করিয়া, তাহাকে উত্তমরাপে সশিক্ষিত করাইলেন। তৃতীয় পরিচ্ছেদ পাঁচ বৎসর গোল—রাধারাণী পরম সন্দরী ষোড়শবষণীয়া কুমারী। কিন্তু সে অন্তঃপারমধ্যে বাস করে, তাহার সে রািপরাশি কেহ দেখিতে পায় না। এক্ষণে রাধারাণীর সমন্বন্ধ করিবার সময় উপস্থিত হইল। কামাখ্যা বাবার ইচ্ছা, রাধারাণীর মনের কথা বঝিয়া তাহার সম্প্ৰবন্ধ করেন। তত্ত্ব জানিবার জন্য আপনার কন্যা বসন্তকুমারীকে ডাকিলেন। বসন্তের সঙেগ রাধারণীর সখিত্ব। উভয়ে সমবয়সকা। এবং উভয়ে অত্যন্ত প্ৰণয় । কামাখ্যা বােব বসন্তকে আপনার মনোগত কথা বঝাইয়া বলিলেন। বসন্ত সলজজভাবে, অথচ অলপ হাসিতে হাসিতে পিতাকে জিজ্ঞাসা করিল, “রাব্বিাণীকুমার রায় কেহ আছে P ” কামাখ্যা বােব বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “না। তা ত জানি না। কেন ?” বসন্ত বলিল, “রাধারাণী রক্ষ্মিণীকুমার ভিন্ন আর কাহাকেও বিবাহ করিবে না।” কামাখ্যা । সে কি ? রাধারণীর সঙেগ অন্য ব্যক্তির পরিচয় কি প্রকারে হইল ? বসন্ত অবনতমখে অলপ হাসিল। সে রথের রাত্রির বিবরণ সবিস্তারে রাধারাণীর কাছে শনিয়াছিল, পিতার সাক্ষাতে সকল বিবত করিল। শনিয়া কামাখ্যা বােব রক্মিণীকুমারের প্রশংসা করিয়া বলিলেন, “রাধারাণীকে বঝাইয়া বলিও, রাধারাণী একটি মহাভ্ৰমে পড়িয়াছে। বিবাহ কৃতজ্ঞতা অনসারে কত্তব্য নহে। রাক্সিাণীকুমারের নিকট রাধারাণীর কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত; যদি সময় ঘটে, তবে অবশ্য প্রত্যুপকার করিতে হইবে। কিন্তু বিবাহে রক্সিণীকুমারের কোন দাবিদাওয়া নাই। তাতে আবার সে কি জাতি, কত বয়স, তাহা কেহ জানে না। তাহার পরিবার সন্তানাদি থাকিবারই সম্ভাবনা; রক্ষ্মিণীকুমারের বিবাহ করিবারই বা সম্ভাবনা কি ? বসন্ত বলিল, “সম্ভাবনা কিছই নাই, তাহাও রাধারাণী বিলক্ষণ বঝিয়াছে। কিন্তু সেই রাত্রি অবধি, রক্ষ্মিণীকুমারের একটি মানসিক প্রতিমা গড়িয়া আপনার মনে তাহা সস্থাপিত করিয়াছে। যেমন দেবতাকে লোকে পজা করে, রাধারাণী সেই প্রতিমা তেমনি করিয়া, প্রত্যহ মনে মনে পাজা করে। এই পাঁচ বৎসর রাধারাণী আমাদিগেব বাড়ী আসিয়াছে, এই পাঁচ বৎসরে এমন দিন প্রায় যায় নাই, যেদিন রাধারাণী রক্মিণীকুমারের কথা আমার সাক্ষাতে একবারও বলে নাই। আর কেহ রাধারাণীকে বিবাহ করিলে, তাহার স্বামী সখী হইবে না।” কামাখ্যা বােব মনে মনে বলিলেন, “বাতিক। ইহার একটা চিকিৎসা আবশ্যক। কিন্তু প্রথম চিকিৎসা বোধ হয়, রক্ষ্মিণীকুমারের সন্ধান করা।" কামাখ্যা বােব রক্সিাণীকুমারের সন্ধানে প্রবত্ত হইলেন। স্বযং কলিকাতায় তাঁহার অন্যসন্ধান করিতে লাগিলেন। বন্ধবগকেও সেই সন্ধানে নিযক্ত করিলেন। দেশে দেশে আপনার মোয়াক্কেলগণকে পত্র লিখিলেন। প্রতি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিলেন। সে বিজ্ঞাপন এইরহপ— “বাব, রক্মিণীকুমার রায়, নিম্পন্ন স্বাক্ষরকারী ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবেন—বিশেষ প্রয়োজন আছে । ইহাতে রক্সিণী বাবার সন্তোষের ব্যতীত অসন্তোষের কারণ উপস্থিত হইবে না। শ্ৰী ইত্যাদি—” কিন্তু কিছতেই রক্সিাণীকুমারের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। দিন গেল, মাস গেল, বৎসর গেল, তথাপি কৈ, রক্ষ্মিণীকুমার ত আসিল না। ইহার পর রাধারাণীর আর একটি ঘোরতর বিপদৰ উপস্থিত হইল—কামাখ্যা বাবর লোকান্তরগতি হইল। রাধারাণী ইহাতে অত্যন্ত শোকাতুরা হইলেন, দ্বিতীয় বার পিতৃহীনা হইলেন মনে করিলেন। কামাখ্যা বাবর শ্রাদ্ধাদির পর রাধারাণী। আপনি বাটীতে গিয়া বাস করিতে লাগিলেন এবং নিজ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান স্বয়ং করিতে লাগিলেন। কামাখ্যা বাবর বিচক্ষণতা হেতু রাধারাণীর সম্পত্তি বিস্তর বাড়িয়াছিল। বিষয় হতে লইয়াই রাধারাণী প্রথমেই দাই লক্ষ মাদ্রা গবৰ্ণমেণ্টে প্রেরণ করিলেন। তৎসঙ্গে 8しf> W)n