পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ শোভাবাজার রাজবাটীর একটি শ্রাদ্ধকাৰ্য্য উপলক্ষ্য করিয়া পাদরি হেভিটর সঙ্গে হিন্দধৰ্ম্ম সংক্রান্ত বিতকে লিপিত হন। ইহার পর হইতেই তিনি হিন্দধমের আলোচনায় বিশেষভাবে রত হইয়াছিলেন। তিনি এই সময়ে যে অনশীলনতত্ত্ব প্রচার করিতে থাকেন, “দেবী চৌধরাণী”কে তাহার একটি “ফল’ বলিয়া তিনি উল্লেখ করিয়াছেন। ‘দেবী চৌধরাণীর “মটো” বা ভাবাদশ রাপে উদ্ধত বাক্যগলি হইতে ইহা সপটু প্রত্নীত হয়। “The Substance of Religion is €ulture"; "The Fruit of it the Higher Life"; "The General Law of Man's Progress, whatever the point of view chosen, consists in this that Man becomes more and more Religious”-ą JKFG DERT IZINY TONIST Î<F SATT <PG: ? সঞ্জীবচন্দ্ৰ-সম্পাদিত ‘বঙগদশনে’র অবস্থা তখন শোচনীয় হইয়া উঠিয়াছিল । * ইহার অবস্থা কথঞ্চিৎ ফিরাইবার নিমিত্ত বঙ্কিমচন্দ্র ইহাতে ‘দেবী চৌধরাণী” প্রকাশিত করিতে থাকেন। চৈত্র ১২৮৯ সংখ্যা প্রকাশের পর “বঙ্গদশন’ বন্ধ হয়। পরে ১২৯o, কাত্তিক হইতে পােনরায় বাহির হইয়া মাঘে একেবারে অন্তহিত হইল। “বঙ্গদর্শনে’। ‘দেবী চৌধরাণীর দ্বিতীয় খন্ড মাত্র শেষ হয়। ‘দেবী চৌধরাণী” পাস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১২৯১, বৈশাখ মাসে (১৮৮৪)। বণ্ডিকমচন্দ্রের জীবিতকালে ইহার ছয়টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ষস্ঠ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সনে। তিনি এই গ্রন্থখানি তাঁহার পিতৃদেব যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে উৎসগ করেন। উৎসর্গপত্রে আছে : “যাঁহার কাছে প্রথম নি✉কাম ধৰ্ম্মম: শনিয়াছিলাম, যিনি স্বয়ং নি✉কাম ধৰ্ম্মমই ব্ৰত করিয়াছিলেন, যিনি এখন পণ্যফলে সবগারাঢ়, তাঁহার পবিত্র পাদপদ্মে এই গ্রন্থ ভক্তিভাবে উৎসগা করিলাম।” পাস্তকের ‘বিজ্ঞাপনের কিয়দংশ পাবে দিয়াছি। এখানে সেই অংশ বাদে অপর অংশ উদ্ধত করা হইল : ਸ਼ চৌধরাণীর কিয়দংশ মাত্র বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হইয়াছিল। এক্ষণে সম্পপণ্য গ্রন্থ প্রকাশিত ... “দেবী চৌধরাণীরও [ আনন্দমঠের ন্যায়। ] ঐরােপ একটি ঐতিহাসিক মল আছে। যিনি বািত্তান্ত অবগত হইতে ইচ্ছা করেন, তিনি হন্টর সাহেব কর্তৃক সঙ্কলিত এবং গবৰ্ণমেণ্ট কর্তৃক প্রচারিত বাঙ্গালাব 'Statistical Account' মধ্যে রওগপর জিলার ঐতিহাসিক বাত্তান্ত পাঠ করিলে জানিতে পরিবেন। সে কথাটা বড় বেশী নয়, এবং ‘দেবী চৌধরাণী” গ্রন্থের সঙ্গে ঐতিহাসিক দেবী চৌধরাণীর সম্মবন্ধ বড় অলপ। দেবী চৌধরাণী, ভবানী পাঠক, গৰুডল্যােড সাহেব, লেফটেনান্ট ব্রেনান, এই নামগালি ঐতিহাসিক। আর দেবীর নৌকায় বাস, বীরকন্দাজ, সেনা প্রভৃতি কয়টা কথা ইতিহাসে আছে বটে। এই পৰ্য্যন্ত। পাঠক মহাশয় অনগ্রহপব্বক আনন্দমঠকে বা দেবী চৌধরাণীকে ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’ বিবেচনা না করিলে বড় বাধিত হইব।” বঙ্কিমচন্দ্র ‘দেবী চৌধরাণীকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলিয়া বিবেচনা না করিতে অনরোধ জানাইলেও, আনন্দমঠের মত এখনিও যে আধনিক মানদন্ডে ঐতিহাসিক উপন্যাস পৰ্য্যায়ভুক্ত, আচাৰ্য্য যদ্যনাথ এ কথা বিশেষভাবে আলোচনা করিয়াছেন। ইহার “ঐতিহাসিক ভূমিকায় তিনি কোন কোন দিক হইতে বণ্ডিকমচন্দ্রের উক্তির যাথার্থ্য স্বীকার করিয়াও লিখিয়াছেন : “কিন্তু যে চিত্রপটের সামনে এই গ্রন্থের ঘটনাবলী অভিনীত হইয়াছে, তাহা অর্থাৎ ‘দেবী চৌধরাণী’র সামাজিক আবহাওয়া, একেবারে সত্য। খাঁটি বাঙ্গালীরাও ডাকাতি করিত। চলনবিলের ধারে একটি গ্রামের এক বিখ্যাত বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ-বংশের পরিষেরা নৌকাযোগে ডাকাতি করিতে করিতে যে নিজের নাতন জামাইকে হত্যা করেন এবং তাহার অন্যতাপে ঐ পাপ-ব্যবসায় ছাড়িয়া দেন, তাহার কথা রাজসাহী-পাবনা জেলায় লোক-প্ৰসিদধ। “আর, হেস্টিংস লাট হইবার পর (১৭৭২) এ দেশের দশা যেরপ ছিল, বণ্ডিকম। তাহার অক্ষরে অক্ষরে সত্য বৰ্ণনা করিয়াছেন। বঙ্কিম মহাপন্ডিত ছিলেন, বিহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁহার পড়াশোনা ছিল, এবং গভীর চিন্তার সাহায্যে পঠিত জ্ঞানকে তিনি পরিপাক করিয়াছিলেন। মনে রাখিতে হইবে যে, “দেবী চৌধরাণী’র জন্য কাল ও সস্থান, এ দাইটিই বিদ্রোহের সম্পপণ্য উপযোগী করিয়া বাছিয়া লওয়া হইয়াছে। কাল, তখন মাঘল সাম্রাজ্যের দেশব্যাপী শান্তি ও শঙ্খলিত শাসন-পদ্ধতি অসন্ত গিয়াছে, অথচ নবীন ব্রিটিশ শাসন দেশে স্থাপিত হয় নাই—এই দই মহাযাগের সন্ধিস্থল; রাজনৈতিক গোধলি অরাজকতার বিশেষ সহায়ক। আর স্থান, সীমান্তপ্রদেশ; ‘আনন্দমঠে। বন্য ঝাড়খন্ডের প্রবেশদ্বার বীরভূম জেলা, ‘সীতারামে’ সমদ্রের প্রায় ধারে কোণঠেষা ভূষণা পরগণা, আর ‘দেবী চৌধরাণীতে রঙ্গপর জেলা।” 8S3 V