পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बाश्कश ज्ञरुनादव्ी হীরালাল বলিল, “আপনার পথ আপনি দেখা।” মাঝিরা নৌকা খলিতে লাগিল— দাঁড়ের শব্দ শনিলাম। আমি তখন কাতর হইয়া বলিলাম, “তোমার পায়ে পড়ি!! আমি অন্ধযদি একান্তই আমাকে ফেলিয়া যাইবে, তবে কাহারও বাড়ী পয্যন্ত আমাকে রাখিয়া দিয়া যাও । আমি ত এখানে কখনও আসি নাই—এখানকার পথ চিনিব কি প্রকারে ? আমার কান্না আসিল। ক্ষণেক রোদন করিলাম; রাগে হীরালালকে বলিলাম, “তুমি যাও । তোমার কাছে কোন উপকারও পাইতে নাই—ব্রাত্রি প্রভাত হইলে তোমার অপেক্ষা দয়াল শত শত লোকের সাক্ষাৎ পাইব। তাহারা অন্ধের প্রতি তোমার অপেক্ষা দয়া করিবে ।” হী। দেখা পেলে তা ? এ যে চড়া! চারি দিকে জল । আমাকে বিবাহ করিবে ? হীরালালের নৌকা তখন কিছ বাহিরে গিয়াছিল। শ্রবণশক্তি আমার জীবনাবলম্বন— শ্রবণই আমার চক্ষের কাজ করে। কেহ কথা কহিলে—ক’ত দারে, কোন দিকে কথা কহিতেছে, তাহা অনভব করিতে পারি। হীরালাল কোন দিকে, কত দরে থাকিয়া কথা কহিল, তাহা মনে মনে অনভব করিয়া, জলে নামিয়া সেই দিকে ছাটিলাম-ইচ্ছা, নৌকা ধরিব। গলাজল অবধি নামিলাম। নৌকা পাইলাম না। নৌকা আরও বেশী জলে। নৌকা ধরিতে গেলে ডুবিয়া মরিব । তালের লাঠি তখনও হাতে ছিল। আবার ঠিক করিয়া শবদানভব করিয়া বঝিলাম, হীরালাল এই দিকে, এত দীর হইতে কথা কহিতেছে। পিছ হটিয়া, কোমর জলে উঠিয়া, শব্দের সথানানভব করিয়া, সবলে সেই তালের লাঠি নিক্ষেপ করিলাম। চীৎকার করিয়া হীরালাল নৌকার উপর পাড়িয়া গেল। ‘খােন হইয়াছে, খান হইয়াছে!” বলিয়া মাঝিরা নৌকা খলিয়া দিল। বাসতবিক—সেই পাপিষ্ঠ খােন হয় নাই। তখনই তাহার মধ্যর কন্ঠ শনিতে পাইলাম—নৌকা বাহিয়া চলিল—সে উচ্চৈঃস্বরে আমাকে গালি দিতে দিতে চলিল—অতি কদৰ্য্য অশ্রাব্য ভাষায় পবিত্র গঙ্গা কলষিত করিতে করিতে চলিল। আমি সপভট শনিতে পাইলাম যে, সে শাসাইতে লাগিল যে, আবার খবরের কাগজ করিয়া আমার নামে আটকেল লিখিবে । অভটম পরিচ্ছেদ সেই জনহীনা রাত্ৰিতে, আমি অন্ধ যাবতী, একা সেই দাবীপে দাঁড়াইয়া গঙ্গার কল কল জলকল্লোল শনিতে লাগিলাম। হায়, মানষের জীবন! কি আসার তুই! কেন আসিস-কেন থাকিস-কেন। যাস ? এ দদুঃখময় জীবন কেন ? ভাবিলে জ্ঞান থাকে না। শচীন্দ্ৰ বােব, একদিন তাঁহার মাতাকে বঝাইতেছিলেন, সকলই নিয়মাধীন। মানষের এই জীবন কি কেবল সেই নিয়মের ফল ? যে নিয়মে ফল ফটে, মেঘ ছাটে, চাঁদ উঠে,-যে নিয়মে জলবাদীবােদ ভাসে, হাসে, মিলায়, যে নিয়মে ধলা উড়ে, তৃণ পড়ে, পাতা খসে, সেই নিয়মেই কি এই সখদঃখময় মনষ্যেজীবন আবদ্ধ, সম্পপণ্য, বিলীন হয় ? যে নিয়মের অধীন হইয়া ঐ নদীগভস্থ কুম্ভীর শিকারের সন্ধান করিতেছে—যে নিয়মের অধীন হইয়া এই চাের ক্ষদ্র কীটসকল অন্য কীটের সন্ধান করিয়া বেড়াইতেছে, সেই নিয়মের অধীন হইয়া আমি শচীন্দ্রের জন্য প্রাণত্যাগ করিতে বসিয়াছি ? ধিক প্রাণত্যাগে! ধিক প্রণয়ে! ধিক মনষ্যেজীবনে! কেন এই গঙ্গাজলে ইহা পরিত্যাগ করি না ? জীবন আসার-সাখ নাই বলিয়া অসাের, তাহা নহে। শিমলগাছে শিমলাফলই ফটিবে; তাহা বলিয়া তাহাকে আসার বলিব না। দঃখময় জীবনে দঃখ আছে বলিয়া তাহাকে আসার বলিব না। কিন্তু আসার বলি। এইজন্য যে, দঃখই দঃখের পরিণাম—তাহার পর আর কিছ নাই। আমার মন্মের দঃখ, আমি একা ভোগ করিলাম, আর কেহ জানিল না।--আর কেহ। বঝিল না-দঃখ প্রকাশের ভাষা নাই বলিয়া তাহা বলিতে পারিলাম না; শ্রোতা নাই বলিয়া তাহা শনাইতে পারিলাম না—সহৃদয় বোদ্ধা নাই বলিয়া তাহা বঝাইতে পারিলাম না। একটি শিমলবক্ষে হইতে সহস্র শিমলব্যক্ষ হইতে পরিবে, কিন্তু তোমার দঃখে আর কয় জনের দঃখ হইবে। পরের অন্তঃকরণমধ্যে পরে প্রবেশ করিতে পারে, এমন কয় জন পর পথিবীতে Ćk OR