পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী জন্মিয়াছে ? পথিবীতে কে এমন জন্মিয়াছে যে, অন্ধ পক্ষপনারীর দঃখ বঝিবে ? কে এমন জন্মিয়াছে যে, এ ক্ষদ্র হৃদয়ে, প্রতি কথায়, প্রতি শবেদ, প্রতি বর্ণে, কত সখেদঃখের তরঙ্গ উঠে, তাহা বঝিতে পারে ? সখি দঃখ ? হাঁ, সখেও আছে। যখন চৈত্র মাসে, ফলের বোঝার সঙ্গে সঙেগ মৌমাছি ছটিয়া আমাদের গহমধ্যে প্রবেশ করিত, তখন সে শব্দের সঙ্গে আমার কত সখ্য উছলিত, কে বঝিত ? যখন গীতিব্যবসায়িনীর অট্টালিকা হইতে বাদ্যনিক্কণ, সান্ধ্য সমীরণে কৰ্ণে আসিত, তখন আমার সখ কে বঝিয়াছে ? যখন বামাচরণের আধ্য আধ কথা ফটিয়াছিল—জল বলিতে “ত” বলিত, কাপড় বলিতে “খাব” বলিত, রজনী বলিতে “জঞ্জি” বলিত, তখন আমার মনে কত সখি উছলিত, তাহা কে বঝিয়াছিল ? আমার দঃখই বা কে বঝিবে ? অন্ধের রিপোন্মাদ কে বঝিবে ? না দেখায় যে দঃখ, তাহা কে বঝিবে ? বঝিলেও বঝিতে পারে, কিন্তু দঃখ যে কখন প্রকাশ করিতে পারিলাম না, এ দঃখ কে বঝিবে ? পথিবীতে যে দঃখের ভাষা নাই, এ দঃখ কে বঝিবে ? ছোট মাখে বড় কথা তোমরা ভালবাস না, ছোট ভাষায় বড় দঃখ কি প্রকাশ করা যায় ? এমনই দঃখ যে, আমার যে কি দঃখ, তাহাতে হৃদয় ধবংস হইলেও, সকলটা আপনি মনে ভাবিয়া আনিতে পারি না। মন:ষ্যভাষাতে তেমন কথা নাই।--মনিষ্যের তেমন চিন্তাশক্তি নাই। দঃখ ভোগ করি—কিন্তু দদুঃখটা বঝিয়া উঠিতে পারি না। আমার কি দঃখ ? কি তাহা জানি না, কিন্তু হৃদয় ফাটিয়া যাইতেছে। সব্বদা দেখিতে পাইবে যে, তোমার দেহ শীর্ণ হইতেছে, বল অপহৃত হইতেছে, কিন্তু তোমার শারীরিক রোগ কি, তাহা জানিতে পারিতেছ না। তেমনি অনেক সময় দেখিবে যে, দঃখে তোমার বক্ষ বিদীর্ণ হইতেছে, প্রাণ বাহির করিয়া দিয়া, শান্যমাগে পাঠাইতে ইচ্ছা! করিতেছে—কিন্তু কি দঃখ, তাহা আপনি বঝিতে পারিতেছ না। আপনি বঝিতে পারিতেছ। না—পরে বঝিবে কি ? ইহা কি সামান্য দঃখ ? সাধ করিয়া বলি, জীবন আসার! যে জীবন এমন দঃখময়, তাহার রক্ষার জন্য এত ভয় পাইতেছিলাম কেন ? আমি কেন ইহা ত্যাগ করি না ? এই ত কালনাদিনী গঙ্গার তরঙ্গমধ্যে দাঁড়াইয়া আছি—আর দই পা অগ্রসর হইলেই মরিতে পারি। না মারি কেন ? এ জীবন রাখিয়া কি হইবে ? মরিব ! আমি কেন জন্মিলাম ? কেন অন্ধ হইলাম ? জন্মিলাম ত শচীন্দ্রের যোগ্য হইয়া জন্মিলাম না কেন ? শচীন্দ্রের যোগ্য না হইলাম, তবে শচীন্দ্রকে ভাগবাসিলাম কেন ? ভালবাসিলাম, তবে তাঁহার কাছে রহিতে পারিলাম না কেন ? কিসের জন্য শচীন্দ্রকে ভাবিয়া, গািহত্যাগ করিতে হইল ?? নিঃসহায় অন্ধ, গঙ্গার চরে মরিতে আসিলাম কেন ? কেন বানের মাখে কুটার মত, সংসারস্রোতে, অজ্ঞাত পথে ভাসিয়া চলিলাম ? এ সংসারে অনেক দঃখী আছে, আমি সব্বাপেক্ষা দঃখী কেন ? এ সকল কাহার খেলা ? দেবতার ? জীবের এত কম্পেট দেবতার কি সখি ? কতট দিবার জন্য সম্মিট করিয়া কি সখি ? মাত্তিমতী নিদািয়তাকে কেন দেবতা বলিব ? কেন নিষ্পাঠরতার পজা করিব ? মানষের এত ভয়ানক দঃখ, কখনও দেবকৃত নহে—তাহা হইলে দেবতা রাক্ষসের অপেক্ষা সহস্ৰগণে নিকৃষ্ণাট। তবে কি আমার কৰ্ম্মফল ? কোন পাপে আমি জন্মান্ধ ? দই এক পা করিয়া অগ্রসর হইতে লাগিলাম—মরিব ! গঙ্গার তরঙগরব কাণে বাজিতে লাগিল—বঝি মরা হইল না—আমি মিতট শব্দ বড় ভালবাসি! না, মরিব । চিবকে ডুবিল! অধর ডুবিল! আর একটা মাত্র। নাসিকা ডুবিল! চক্ষ ডুবিল! আমি ডুবিলাম! ডুবিলাম, কিন্তু মরিলাম না। কিন্তু এ যন্ত্রণাময় জীবনচরিত আর বলিতে সাধ করে না। আর একজন বলিবে । আমি সেই প্রভাতবায়তাড়িত গঙ্গাজলপ্রবাহমধ্যে নিমগন হইয়া ভাসিতে ভাসিতে চলিলাম। ক্লমে শব্বাস নিশে চম্পট, চেতনা বিনম্ৰাট হইয়া আসিল । Ꮹ Ꭴ Ꮼ