পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रङनी পরিত্যাগ করিল। ছোট মা কিছ দঃখিত হইয়া তাহাদিগের অন্যসন্ধানে লোক পাঠাইলেন। লোক ফিরিয়া আসিয়া বলিল যে, উহারা সপরিবারে অন্যত্র উঠিয়া গিয়াছে, সাবেক বাড়ীতে নাই থায় গিয়াছে, তাহার কোন ঠিকানা করিতে পারিলাম না। ইহার এক মাস পরে, একজন ভদ্রলোক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন। তিনি আসিয়াই, আপনি আত্মপরিচয় দিলেন। “আমার নিবাস কলিকাতায় নহে। আমার নাম অমরনাথ ঘোষ, আমার নিবাস শান্তিপাের।” তখন আমি তাঁহার সঙেগ কথোপকথনে নিযন্ত হইলাম। কি জন্য তিনি আসিয়াছিলেন, আমি তাঁহাকে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিতে পারিলাম না। তিনিও প্রথমে কিছ বলিলেন না। সতরাং সামাজিক ও রাজকীয় বিষয়ঘটিত নানা কথাবাত্তা হইতে লাগিল। দেখিলাম, তিনি কথাবাৰ্ত্তায় অত্যন্ত বিচক্ষণ। তাঁহার বন্ধি মাডিজত, শিক্ষা সম্পপণ্য, এবং চিন্তা বহন্দরেগামিনী। কথাবাৰ্ত্তায় একটা অবসর পাইয়া, তিনি আমার টেবিলের উপর স্থিত ‘সেক্ষপিয়র গেলেরির” পাতা উলটাইতে লাগিলেন। ততক্ষণ আমি অমরনাথকে দেখিয়া লইতে লাগিলাম। অমরনাথ দেখিতে সপরিষে ; গৌরবণ, কিঞ্চিৎ খব, স্থলও নহে, শীর্ণ ও নহে; বড় বড় চক্ষ, কেশগলি সক্ষম, কুণ্ডিত, যত্নরঞ্জিত। বেশভূষায় পারিপাট্যের বাড়াবাড়ি নাই, কিন্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বটে, তাঁহার “কথা কহিবার ভঙগী অতি মনোহর; কন্ঠ অতি সমধর। দেখিয়া বঝিলাম, লোক অতি সচতুর। সেক্ষপিয়র গেলেরির পাতা উলটান শেষ হইলে অমরনাথ নিজ প্রয়োজনের কথা কিছ না বলিয়া, ঐ পস্তকস্থিত চিত্ৰসকলের সমালোচনা আরম্ভ করিলেন। আমাকে বঝাইয়া দিলেন যে, যাহা বাক্য এবং কাৰ্য্যদ্বারা চিত্রিত হইয়াছে, তাহা চিত্রফলকে চিত্ৰিত করিতে চেন্টা পাওয়া ধন্টতার কাজ। সে চিত্র কখনই সম্পপণ্য হইতে পারে না; এবং এ সকল চিত্ৰও সম্পপণ নহে। ডেসডিমনার চিত্র দেখাইয়া কহিলেন, আপনি এই চিত্রে ধৈর্য্য, মাধ্যায্য, নমতা পাইতেছেন, কিন্তু ধৈয্যের সহিত সে সাহস কৈ ? নমতার সঙ্গে সে সতীত্বের অহঙ্কার কই ? জলিয়েটের মাত্তি দেখাইয়া কহিলেন, এ নবযাবতীর মাত্তি বটে, কিন্তু ইহাতে জলিয়েটের নবযৌবনের অদমনীয় চাঞ্চল্য কই ? অমরনাথ এইরনুপে কত বলিতে লাগিলেন। সেক্ষপিয়রের নায়িকাগণ হইতে শকুন্তলা, সীতা, কাদশবরী, বাসবদত্তা, রক্ষ্মিণী, সত্যভামা প্রভৃতি আসিয়া পড়িল। অমরনাথ একে একে তাঁহাদিগের চরিত্রের বিশেলষ করিলেন। প্রাচীন সাহিত্যের কথায় ক্ৰমে প্রাচীন ইতিহাসের কথা আসিয়া পড়িল, তৎপ্রসঙ্গে তাসিতস, পলটাকা, থাকিদিদিস প্রভৃতির অপব্ব সমালোচনার অবতারণা হইল। প্রাচীন ইতিবত্ত-লেখকদিগের মত লইয়া অমরনাথ কোমতের ত্ৰৈকালিক উন্নতিসম্প্ৰবন্ধীয় মতের সমর্থনা করিলেন। কোমাৎ হইতে তাঁহার সমালোচক মিল ও হকসকেলীর কথা আসিলা। হকসকেলী হইতে ওয়েন ও ডারউইন, ডারউইন হইতে বাকনেয়র সোপেনহয়র প্রভৃতির সমালোচনা আসিল। অমরনাথ অপবর্ব পান্ডিত্যস্রোতঃ আমার কণরন্ধে প্রেরণ করিতে লাগিলেন। আমি মগধ হইয়া আসল কথা ভুলিয়া গেলাম। বেলা গেল দেখিয়া, অমরনাথ পলিলেন, “মহাশয়কে আর বিরক্ত করিব না। যে জন্য আসিয়াছিলাম, তাহা এখনও বলা হয় নাই। রাজচন্দ্ৰ দাস যে আপনাদিগকে ফল বেচিত, তাহার একটি কন্যা আছে ?” আমি বলিলাম, “আছে বোধ হয়।” অমরনাথ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “বোধ হয় নয়, সে আছে। আমি তাহাকে বিবাহ করিব সিথর করিয়াছি।” আমি অবাক হইলাম। অমরনাথ বলিতে লাগিলেন, “আমি রাজচন্দ্রের নিকটে এই কথা বলিতেই গিয়াছিলাম। তাহাকে বলা হইয়াছে। এক্ষণে আপনাদিগের সঙ্গে একটা কথা আছে। যে কথা বলিব, তাহা মহাশয়ের পিতার কাছে বলাই আমার উচিত ; কেন না, তিনি কৰ্ত্তা। কিন্তু আমি যাহা বলিব, তাহাতে আপনাদিগের রাগ করিবার কথা। আপনি সব্বাপেক্ষা সিথর সর্বভাব এবং ধৰ্ম্মমাজ্ঞ, এজন্য আপনাকেই বলিতেছি।” আমি বলিলাম, “কি কথা মহাশয় ?” অমর। রজনীর কিছ বিষয় আছে। আমি । সে কি ? সে যে রাজচন্দ্রের কন্যা। ○ >○