পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७का ब्रा5नावब्ली সখিকর বা তৃপিতজনক নহে। ক্লান্ত হস্ত হইতে পািস্তক খসিয়া পড়িল। চক্ষ চাহিয়া আছি— বাহ্য বস্তু সকলই দেখিতে পাইতেছি, কিন্তু কি দেখিতেছি, তাহা বলিতে পারি না। অকস্মাৎ সেইখানে প্রভাতবীচিবিক্ষেপচপলা, কলকলনদিনী নদী বিস্তৃতা দেখিলাম—যেন তথা উষার উত্তজবল বর্ণে পববাদিক প্রভাসিত হইতেছে—দেখি, সেই গঙ্গাপ্রবাহমধ্যে সৈকতম লে রজনী ! রজনী জলে নামিতেছে। ধীরে, ধীরে, ধীরে! অন্ধ ! অথচ কুণ্ডিত ভ্ৰম; বিকলা অথচ স্থিরা ; সেই প্রভাতশানিতশীতলা ভাগীরথীর ন্যায় গম্ভীরা, ধীরা, সেই ভাগীরথীর ন্যায় অন্তরে দািডজয় বেগশালিনী! ধীরে, ধীরে, ধীরে-জলে নামিতেছে। দেখিলাম, কি সন্দির! রজনী কি সন্দরী! বােক্ষ হইতে নবমঞ্জরীর সগন্ধের ন্যায়, দরশ্ৰত সঙ্গীতের শেষভাগের ন্যায়, রজনী জলে, ধীরে—ধীরে—ধীরে নামিতেছে! ধীরে রাজনি ! ধীরে! আমি দেখি তোমায়। তখন অনাদর করিয়া দেখি নাই, এখন একবার ভাল করিয়া দেখিয়া লই। ধীরে, রজনি ধীরে! আমার মােচ্ছা হইল। মােচ্ছ।ার লক্ষণ সকল আমি অবগত নাহি। যাহা পশ্চাৎ শনিয়াছি, তাহা বলিয়া কোন ফল নাই। আমি যখন পনেকবার চেতনাপ্রাপিত হইলাম, তখন রাত্রিকাল— আমার নিকট অনেক লোক। কিন্তু আমি সে সকল কিছই দেখিলাম না। আমি দেখিলাম— কেবল সেই মদনোদিনী গঙ্গা, আর সেই মদগামিনী রজনী, ধীরে, ধীরে, ধীরে জলে নামিতেছে। চক্ষ মন্দিলাম, তব দেখিলাম সেই গঙ্গা, আর সেই রজনী। আবার চাহিলাম, আবার দেখিলাম। সেই গঙ্গা আর সেই রজনী ! দিগন্তরে চাহিলাম।---আবার সেই রজনী, ধীরে, ধীরে, ধীরে জলে নামিতেছে। উধের চাহিলাম – উধেব ও আকাশবিহারিণী গঙগা ধীরে, ধীবে বাহিতেছে ; আর আকাশবিহারিণী রজনী ধীরে, ধীরে, ধীরে নামিতেছে। অন্য দিকে মন ফিরাইলাম ; তথাপি সেই গঙগা আর সেই রজনী। আমি নিরস্ত হইলাম। চিকিৎসকেরা আমার চিকিৎসা করিতে লাগিল । অনেক দিন ধরিয়া আমার এই চিকিৎসা হইতে লাগিল, কিন্তু আমার নয়নাগ্র হইতে রজনীরপ তিলেক জন্য অন্তহিত হইল না। আমি জানি না, আমার কি রোগ বলিয়া চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করিতেছিল। আমার নয়ন গ্রে যে রােপ অহরহঃ নাচিতেছিল, তাহার কথা কাহাকেও বলি নাই । ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ শচীন্দ্রের কথা ওহে ধীরে, রজনি ধীরে ! ধীরে, ধীরে, আমার এই হৃদয়মন্দিরে প্রবেশ কর! এত দ্রুতগামিনী কেন ? তুমি অন্ধ, পথ চেন না, ধীরে, রজনি ধীরে! ক্ষদ্রা এই পরী, আধার, অাঁধার, অাঁধার! চিরান্ধকার!! দীপশলাকার ন্যায়। ইহাতে প্রবেশ করিয়া আলো কর;—দীপশলাকার ন্যায় আপনি পড়িবে, কিন্তু এ আধার পরী আলো করিবো। ওহে ধীরে, রজনি ধীরে! এ পরী আলো কর, কিন্তু দাহ কর কেন ? কে জানে যে, শীতল প্রস্তরেও দাহ করিবে—তোমায় তা পাষাণগঠিতা, পাষাণময়ী জানিতাম, কে জানে যে, পাষাণেও দাহ করিবে ? অথবা কে জানে, পাষাণেও লৌহের সংঘর্ষণেই আগন্যুৎপাত হয়। তোমার প্রস্তরধবল, প্রস্তরস্নিগাধদশন, প্রস্তরগঠিতবৎ মাত্তি যত দেখি, ততই দেখিতে ইচ্ছা! হয়। অনাদিন, পলিকে পলকে, দেখিয়াও মনে হয়, দেখিলাম। কই ? আবার দেখি, কিন্তু দেখিয়া ত সাধ মিটিল না। পীড়িতাবস্থায় আমি প্রায় কাহারও সঙ্গে কথা কহিতাম না। কেহ কথা কহিতে আসিলৈ ভাল লাগিতা না। রজনীর কথা মখে আনিতাম না— কিন্তু প্ৰলাপকালে কি বলিতাম না বলিতাম, তাহা সমরণ করিয়া বলিতে পারি না। প্ৰলাপ সচরাচরই ঘটিত। শয্যা প্রায় ত্যাগ করিতাম না। শ্যইয়া শইয়া কত কি দেখিতাম, তাহা বলিতে পারি না। কখন দেখিতাম, সমরক্ষেত্রে যবনিকাপাত হইতেছে—রক্তে নদী বাহিতেছে ; কখন দেখিতাম, সবণ্যপ্রান্তরে হীরকবক্ষে সন্তবকে স্তবকে নক্ষত্র ফটিয়া আছে। কখন দেখিতাম, আকাশমাগে, অস্টশশিসমন্বিত শনৈশ্চর মহাগ্ৰহ চতুশচন্দ্রবাহী বহিস্পতির উপর মহাবেগে পতিত হইল— গ্রহ উপগ্রহ সকল খন্ড খন্ড হইয়া ভাঙিগয়া গেল—আঘাতোৎপন্ন বাহিতে সে সকল জবলিয়া উঠিয়া, দাহ্যমানাবস্থাতে মহাবেগে বিশবমন্ডিলের চতুদিকে প্রধাবিত হইতেছে। কখন দেখিতাম, ( OO