পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী যেন চরাচরং তস্মৈ নমঃ বলিয়া এ কলঙ্কলাঞ্ছিত দেহ উৎসগা করিব। তুমি যাহা দিয়াছ, তুমি কি তাহা লইবে না ? তুমি লইবে, নাহিলে এ কলঙেকর ভার আর কে পবিত্ৰ করিবে ? প্ৰভো! আপনার কাছে একটা নিবেদন আছে। এ দেহ কলঙিকত করাইল কে, তুমি, না আমি ? আমি যে অসৎ অসাের, দোষ আমার, না তোমার ? আমার এ মনিহারির দোকান সাজাইল কে, তুমি, না। আমি ? যাহা তুমি সাজাইয়ােছ, তাহা তোমাকেই দিব। আমি এ ব্যবসা আর রাখিব না। সখি! তোমাকে সব্বত্র খজিলাম—পাইলাম না। সখি নাই——তবে আশায় কাজ কি ? যে দেশে অগিন নাই, সে দেশে ইন্ধন আহরণ করিয়া কি হইবে ? প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, সব বিসর্জন দিব। আমি পরদিন শচীন্দ্রকে দেখিতে গেলাম। দেখিলাম, শচীন্দ্র অধিকতর স্থির-অপেক্ষাকৃত প্রফতুল্ল। তাঁহার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথোপকথন করিতে লাগিলাম। বঝিলাম, আমার উপর যে বিরক্তি, শচীন্দ্রের মন হইতে তাহা যায় নাই। পরদিন পনরাপি তাঁহাকে দেখিতে গেলাম। প্রত্যহই তাঁহাকে দেখিতে যাইতে লাগিলাম। শচীন্দ্রের দািব্বলতা ও০ ক্লিঅ'টভােব কমিল না, কিন্তু ক্ৰমে সৈন্থায্য জন্মিতে লাগিল। প্ৰলাপ, দর হইল। ক্ৰমে শচীন্দ্ৰ প্ৰকৃতিস্থ হইলেন। রজনীর কথা একদিনও শচীন্দ্রের মাখে শনি নাই। কিন্তু ইহা দেখিয়াছি যে, যে দিন হইতে রজনী আসিয়াছিল, সেই দিন হইতে তাঁহার পীড়া উপশমিত হইয়া আসিতেছিল। একদিন, যখন আর কেহ শচীন্দ্রের কাছে ছিল না, তখন আমি ধীরে ধীরে বিনা আড়ম্বরে রজনীর কথা পাড়িলাম। ক্ৰমে তাহার অন্ধতার কথা পাড়িলাম, অন্ধের দঃখের কথা বলিতে লাগিলাম, এই জগৎসংসারশোভা দর্শনে সে যে বণি}ত,—প্রিয়জনদশনস্যুখে সে যে আজন্মমােত্যুপৰ্য্যন্ত বঞ্চিত, এই সকল কথা তাঁহার সাক্ষাতে বলিতে লাগিলাম। দেখিলাম, শচীন্দ্র মািখ ফিরাইলেন, তাঁহার চক্ষ জলপািণ হইল। s Tk অন্যরাগ বটে। তখন বলিলাম, “আপনি রজনীর মণ্ডগলাকাঙক্ষী । আমি সেই জন্যই একটি কথার পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিতে চাই। রজনী একে বিধাতাকত্ত্বক পীড়িতা, আবার আমাকর্তৃক আরও গরতের পীড়িত হইয়াছে।” শচীন্দ্র আমার প্রতি বিকট কটাক্ষ নিক্ষেপ করিলেন। আমি বলিলাম, “আপনি যদি সমাদয় মনোযোগপর্কেবািক শ নেন, তবেই আমি বলিতে প্রবত্ত হই।” শচীন্দ্ৰ বলিলেন, “বলন।” আমি বলিলাম, “আমি অত্যন্ত লোভী এবং সাবাথ পর। আমি তাহার চরিত্রে মোহিত হইয়া, তাহাকে বিবাহ করিতে উদ্যোগী হইয়াছি। সে আমার নিকট বিশেষ কৃতজ্ঞতাপাশে বন্ধ ছিল, সেই জন্য আমার অভিপ্ৰায়ে সম্মত হইয়াছে।” শচীন্দ্ৰ বলিলেন, “মহাশয়, এ সকল কথা আমাকে বলিতেছেন কেন ?” আমি বলিলাম, “আমি ভাবিয়া দেখিলাম, আমি সন্ন্যাসী, আমি নানা দেশ ভ্ৰমণ করিয়া বেড়াই ; অন্ধ রজনী কি প্রকারে আমার সঙ্গে দেশে দেশে বেড়াইবে ? আমি এখন ভাবিতেছি, অন্য কোন ভদ্রলোক তাহাকে বিবাহ করে, তবে সখের হয়। আমি তাহাকে অন্য পাত্ৰস্থা করিতে চাই। যদি কেহ আপনার সন্ধানে থাকে, সেই জন্য আপনাকে এত কথা বলিতেছি।” শচীন্দ্র একটি বেগের সহিত বলিলেন, “রাজনীর পাত্রের অভাব নাই।” আমি বঝিলাম, রজনীর বরপােত্র কে। তৃতীয় পরিচ্ছেদ পরদিন আবার মিত্রদিগের অ্যালয়ে গিয়া দেখা দিলাম। লবণ্ডগলিতাকে বলিয়া পাঠাইলাম যে, আমি কলিকাতা ত্যাগ করিয়া যাইব । এক্ষণে সম্প্রতি প্রত্যাগমন করিব না—তিনি আমার শিষ্যা, আমি তাঁহাকে আশীৰ্ব্ববাদ করিব। Ꮹz VoᏩ;