পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল হর। ভাল, তাতে তোমার দোষ কি ? এখন কিছ রোজগার করিবে ? ৱ। কিলটে চড়টা ? তা ভাই, মার না কেন ? হর। তা নয়; হাজার টাকা । ব্ৰ। বিধবা বিয়ে কর্যে নাকি ? হর । তাই । ব্ৰ । বয়স গেছে। হর। তবে আর একটি কাজ বলি। এখনই আরম্ভ কর। আগামী কিছ গ্রহণ করা। এই বলিয়া ব্ৰহ্মানন্দের হাতে হরলাল পাঁচ শত টাকার নোট দিলেন। ব্ৰহ্মানন্দ নোট পাইয়া উলটিয়া পালটিয়া দেখিল। বলিল, “ইহা লইয়া আমি কি করিব ?” হর। পাঁজি করিও । দশ টাকা মতি গোয়ালিনীকে দিও। ব্ৰ। গোওয়ালা-ফোওয়ালার কোন এলাকা রাখি না। কিন্তু আমায় করিতে হইবে কি ? হর। দাইটি কলম কাট। দাইটি যেন ঠিক সমান হয়। ব্ৰ। আচ্ছা ভাই—যা বল, তাই শনি। এই বলিয়া ঘোষজ মহাশয় দাইটি নতন কলম লইয়া ঠিক সমান করিয়া কাটিলেন। এবং লিখিয়া দেখিলেন যে, দাইটিরই লেখা একপ্রকার দেখিতে হয়। তখন হরলাল বলিলেন, “ইহার একটি কলম বাক্সতে তুলিয়া রাখা। যখন উইল লিখিতে যাইবে, এই কলম লইয়া গিয়া ইহাতে উইল লিখিবো। দ্বিতীয় কলমটি লইয়া এখন একখানা লেখাপড়া করিতে হইবে। তোমার কাছে ভাল কালি আছে ?” ব্ৰহ্মানন্দ মসীপাত্র বাহির করিয়া লিখিয়া দেখাইলেন। হরলাল বলিতে লাগিল, “ভাল, এই কালি উইল লিখিতে লইয়া যাইও ।” ব্ৰ। তোমাদিগের বাড়ীতে কি দোওয়াত কলম নাই যে, আমি ঘাড়ে করিয়া নিয়া যাব ? হর। আমার কোন উদ্দেশ্য আছে—নচেৎ তোমাকে এত টাকা দিলাম কেন ? ব্ৰ। আমিও তাই ভাবিতেছি বটে-ভাল বলেছ ভাই রে! হর। তুমি দোওয়াত কলম লইয়া গেলে কেহ ভাবিলেও ভাবিতে পারে, আজি এটা কেন ? তুমি সরকারী কালি কলমকে গালি পাড়িও ; তাহা হইলেই শোধরাইবে। ব্র। তা সরকারী কালি কলমকে শািন্ধ কেন ? সরকারকে শব্দ্ধ গালি পাড়িতে পারিব। হর । তাত আবশ্যক নাই। এক্ষণে আসল কম আরম্ভ কর। তখন হরলাল দইখানি জেনারেল লেটর কাগজ ব্ৰহ্মানন্দের হাতে দিলেন। ব্ৰহ্মানন্দ বলিলেন, “এ যে সরকারী কাগজ দেখিতে পাই।” “সরকারী নহে!—কিন্তু উকীলের বাড়ীর লেখাপড়া এই কাগজে হইয়া থাকে। কত্তাও এই কাগজে উইল লেখাইয়া থাকেন, জানি। এজন্যে এই কাগজ আমি সংগ্ৰহ করিয়াছি। যাহা বলি, তাহা এই কালি কলমে লেখা।” ব্ৰহ্মানন্দ লিখিতে আরম্ভ করিল। হরলাল একখানি উইল লেখাইয়া দিলেন। তাহার মৰ্ম্মমাথ এই। কৃষ্ণকান্ত রায় উইল করিতেছেন। তাঁহার নামে যত সম্পত্তি আছে, তাহার বিভাগ কৃষ্ণকান্তের পরলোকান্তে এইরহপ হইবে। যথা, বিনোদলাল তিন আনা, গোবিন্দলাল এক পাই, গহিণী এক পাই, শৈলবতী এক পাই, হরলালের পত্র এক পাই, হরলাল জ্যোিঠ পত্র বলিয়া অবশিস্ট বারো আনা । লেখা হইলে ব্ৰহ্মানন্দ কহিলেন, “এখন ত উইল লেখা হইল—দস্তখত করে কে ?” “আমি।” বলিয়া হরলাল ঐ উইলে কৃষ্ণকান্ত রায়ের এবং চারি জন সাক্ষীর দস্তখত করিয়া দিলেন। ব্ৰহ্মানন্দ কহিলেন, “ভাল, এ ত জাল হইল।” হর। এই সাঁচ্চিা উইল হইল, বৈকালে যাহা লিখিবে, সেই জাল । ব্ৰহ্ম। কিসে? হর। তুমি যখন উইল লিখিতে যাইবে, তখন এই উইলখানি আপনার পিরানের পকেটে লকাইয়া লইয়া যাইবে। সেখানে গিয়া এই কালি কলমে তাঁহাদের ইচ্ছামত উইল লিখিবে। কাগজ, কলম, কালি, লেখক একই; সতরাং দাইখান উইলই দেখিতে একপ্রকার হইবে। পরে G8S