পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী গভীর নিশাতে কৃষ্ণকান্ত নিদ্রা যাইতেছিলেন, অকস্মাৎ তাঁহার নিদ্রাভওগ হইল। নিদ্রাভওগ হইলে দেখিলেন যে, তাঁহার শয়নগহে দীপ জীবলিতেছে না। সচরাচর সমস্ত রাত্রি দীপ জবলিত, কিন্তু সে রাত্রে দীপ নিৰ্ব্বাণ হইয়াছে দেখিলেন, নিদ্রাভঙ্গকালে এমতও শব্দ তাঁহার কণে প্রবেশ করিল যে, যেন কে একটা চাবি কলে ফিরাইল। এমত বোধ হইল, যেন ঘরে কে মানষে বেড়াইতেছে। মানষে তাঁহার পর্যাঙ্কের শিরোদেশ। পয্যন্ত আসিল—তাঁহার বালিশে হাত দিল । কৃষ্ণকান্ত আফিঙেগর নেশায় বিভোর ; না নিদ্রিত, না জাগরিত, বড় কিছর হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন না। ঘরে যে আলো নাই——তাহাও ঠিক বঝেন নাই, কখন অন্ধ নিদ্রিত—কখন অন্ধ সচেতন-—সচেতনেও চক্ষ খালে না। একবার দৈবাৎ চক্ষ খলিবায় কতকটা অন্ধকার বোধ হইল বটে, কিন্তু কৃষ্ণকান্ত তখন মনে করিতেছিলেন যে, তিনি হরি ঘোষের মোকদ্দমায় জাল দলিল দাখিল করায়, জেলখানায় গিয়াছেন। জেলখানা ঘোরান্ধকার। কিছর পরে হঠাৎ যেন চাবি খোলার শব্দ অলপ কাণে গোল—-এ কি জেলের চাবি পড়িল ? হঠাৎ একটি চমক হইল। কৃষ্ণকান্ত সর্টকা হাতড়াইলেন, পাইলেন না—অভ্যাসবশতঃ ডাকিলেন, “হারি!” কৃষ্ণকান্ত অন্তঃপরে শয়ন করিতেন না।--বাহিকবাটীতেও শয়ন করিতেন না। উভয়ের মধ্যে একটি ঘর ছিল। সেই ঘরে শাষন করিতেন। সেখানে হরি নামক একজন খানসামা তাঁহার প্রহরী সম্বরপ শয়ন করিত। আর কেহ না। কৃষ্ণকান্ত তাহাকেই ডাকিলেন, “হারি!” কৃষ্ণকান্ত বারেক মাত্র হরিকে ডাকিয়া, আবার আফিমে ভোর হইয়া ঝিমাইতে লাগিলেন। আসল উইল, তাঁহার গহ হইতে সেই অবসরে অন্তহিত হইল। জােল উইল তৎপরিবত্তে সন্থাপিত হইল। পণ8ম পরিচ্ছেদ পরদিন প্রাতে রোহিণী আবার রধিতে বসিয়াছে, আবার সেখানে হরলাল উকি মারিতেছে । ভাগ্যশঃ ব্ৰহ্মানন্দ বাড়ী ছিল না।--নাহিলে কি একটা মনে করিতে পারিত । হরলাল ধীরে ধীরে রোহিণীর কাছে গোল—রোহিণী বড় চাহিয়া দেখে না। হরলাল বলিল, “চাহিয়া দেখ-হাঁড়ি ফাটিবে না।” রোহিণী চাহিয়া দেখিয়া হাসিল । হরলাল বলিল, “কি করিয়াছ ?” রোহিণী অপহৃত উইল আনিয়া হরলালকে দেখিতে দিল। হরলাল পড়িয়া দেখিল—আসল উইল বটে। তখন সে দন্টের মাখে হাসি ধরে না। উইল হাতে করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি প্রকারে আনিলে ?” রোহিণী সে গলপ আরম্ভ করিল। প্রকৃত কিছই বলিল না। একটি মিথ্যা উপন্যাস বলিতে লাগিল—বলিতে বলিতে সে হরলালের হাত হইতে উইলখানি লইয়া দেখাইল, কি প্রকারে কাগজখানা একটা কলমদানের ভিতর পড়িয়া ছিল। উইল চুরির কথা শেষ হইলে রোহিণী হঠাৎ উইলখানা হাতে করিয়া উঠিয়া গেল। যখন সে ফিরিয়া আসিল, তখন তাহার হাতে উইল নাই দেখিয়া হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “উইল কোথায় রাখিয়া আসিলে ?” রোহি। তুলিয়া রাখিয়া আসিয়াছি। হর। আর তুলিয়া রাখিয়া কি হইবে ? আমি এখনই যাইব । রোহি। এখনই যাবে ? এত তাড়াতাড়ি কেন ? হর। আর থাকিবার যো নাই । রোহি । তা বাও । হর । উইল ? রো। আমার কাছে থাকা । হর। সে কি ? উইল আমায় দিবে না ? রো। তোমার কাছে থাকাও যে, আমার কাছে থাকাও সে । হর। যদি আমাকে উইল দিবে না, তবে ইহা চুরি করিলে কেন ? রো। আপনারই জন্য। আপনারই জন্য ইহা রহিল। যখন আপনি বিধবাবিবাহ করিবেন, আপনার সত্ৰীকে এ উইল দিব। আপনি লইয়া ছিাড়িয়া ফেলিবেন। Gk 8S3 Vy