পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী রো। খড়া দেশত্যাগে সম্মত হইবেন কেন ? গো। তুমি কি তাঁহাকে এই ব্যাপারের পর সম্মমত করিতে পরিবে না ? রো। পারিব। কিন্তু আপনার জ্যোিস্ঠতাতকে সম্মত করিবে কে ? তিনি আমাকে ছাড়িবেন। কেন ? গো। আমি অননুরোধ করিব। রো। তাহা হইলে আমার কলঙ্কের উপর কলঙ্ক। আপনারও কিছ: কলঙক । গো। সত্য; তোমার জন্য, কত্তার কাছে ভ্ৰমর অন্যুরোধ করিবে । তুমি এখন ভ্রমরের অননুসন্ধানে যাও। তাহাকে পাঠাইয়া দিয়া, আপনি এই বাড়ীতেই থাকিও । ডাকিলে যেন পাই । রোহিণী সজল নয়নে গোবিন্দলালকে দেখিতে দেখিতে ভ্ৰমরের অন্যসন্ধানে গেল। এইরনুপে কলঙেক, বন্ধনে, রোহিণীর প্রথম প্রণয়সম্ভাষণ হইল। ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ ভ্রমর শবশারকে কোন প্রকার অন্যুরোধ করিতে স্বীকৃত হইল না-বড় লাভজা করে, ছিা! অগত্যা গোবিন্দলাল স্বয়ং কৃষ্ণকান্তের কাছে গেলেন। কৃষ্ণকান্ত তখন আহারান্তে পালঙেক আদর্ধশিয়ান বস্থায়, আলবোলার নল হাতে করিয়া—সষপত। এক দিকে তাঁহার নাসিকা নাদসরে গমকে গমকে তানমােচ্ছ নাদি সহিত নানাবিধ রাগরাগিণীর আলাপ করিতেছে—আর এক দিকে, তাঁহার মন, আহিফেনপ্রসাদাৎ ত্ৰিভুবনগামী অশোেব আর ঢ হইয়া নানা সস্থান পৰ্যটন করিতেছে। রোহিণীর চাঁদপানা মনুখখানা বাড়ারও মনের ভিতর ঢকিয়াছিল বোধ হয়,-চাঁদ কোথায় উদয় না হয় ?--নাহিলে বড়া আফিঙেগর ঝোঁকে ইন্দ্রাণীর সকন্ধে সে মািখ বসাইবে কেন ? কৃষ্ণকান্ত দেখিতেছেন যে, রোহিণী হঠাৎ ইন্দ্রের শচী হইয়া, মহাদেবের গোহাল হইতে যাঁড় চুরি করিতে গিয়াছে। নন্দী ত্রিশাল হস্তে ষাঁড়ের জাব দিতে গিয়া তাহাকে ধরিয়াছে। দেখিতেছেন, নন্দী রোহিণীর আলীলায়িত কুন্তলন্দাম ধরিয়া টানাটানি লােগাইয়াছে, এবং যড়াননের ময়র, সন্ধান পাইয়া, তাহার সেই আগলাফ-বিলম্বিত কুণ্ডিত কেশগচ্ছকে সফীতফণা ফণিশ্রেণী ভ্ৰমে গিলিতে গিয়াছে-—এমত সময়ে স্বয়ং ষড়ানন ময়রের দৌরাত্ম্য দেখিয়া নালিশ করিবার জন্য মহাদেবের কাছে উপস্থিত হইয়া ডাকিতেছেন, “জ্যোঠা মহাশয় !" কৃষ্ণকান্ত বিস্মিত হইয়া ভাবিতেছেন, “কাত্তিক মহাদেবকে কি সম্পকে জ্যেঠা মহাশয় বলিয়া ডাকিতেছেন ? "' এমত সময় কাত্তিক আবার ডাকিলেন, “জ্যেঠা মহাশয়!”। কৃষ্ণকান্ত বিরান্ত হইয়া, কাত্তিকের কােণ মলিয়া দিবার অভিপ্ৰায়ে হসন্ত উত্তোলন করিলেন। অমনি কৃষ্ণকান্তের হসন্তস্থিত আলবোলার নল হােত হইতে খসিয়া ঝনাৎ করিয়া পানের বাটার উপর পাড়িয়া গেল, পানের বাটা ঝন ঝন ঝনাৎ করিয়া পিকদানির উপর পাড়িয়া গেল; এবং নল, বাটা, পিকদানি, সকলেই একত্রে সহগমন করিয়া ভূতলশায়ী হইল। সেই শব্দে কৃষ্ণকান্তের নিদ্রাভওগ হইল, তিনি নয়নোন্মীলন করিয়া দেখেন যে, কাত্তিকেয় যথার্থই উপস্থিত। মাত্তিমান স্কন্দবীরের ন্যায়, গোবিন্দলাল তাঁহার সম্মখে দাঁড়াইয়া আছেন—ডাকিতেছেন, “জ্যেঠা মহাশয!” কৃষ্ণকান্ত শশব্যাস্তে উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি বাবা গোবিন্দলাল ?” গোবিন্দলালকে বড়া বড় ভালবাসিতেন । গোবিন্দলালও কিছল অপ্রতিভ হইলেন—বলিলেন, “আপনি নিদ্ৰা যান-আমি এমন কিছ. কাজে আসি নাই।” এই বলিয়া, গোবিন্দলাল পিকদানিটি উঠাইয়া সোজা করিয়া রাখিয়া, পানবাটা উঠাইয়া যথাস্থানে রাখিয়া, নলটি কৃষ্ণকান্তেব হাতে দিলেন। কিন্তু কৃষ্ণকান্ত শাস্তু বড়ো--সহজে ভুলে না - মনে মনে বলিতে লাগিলেন, “কিছ না, এ ছাঁচো আবার সেই চাঁদমখো মাগনীর কথা বলতে আসিয়াছে।” প্রকাশ্যে বলিলেন, “না। আমার ঘােম হইয়াছে—আর ঘমাইব না।” গোবিন্দলাল একটা গোলে পড়িলেন। রোহিণীর কথা কৃষ্ণকান্তের কাছে বলিতে প্রাতে তাঁহার কোন লজজা করে নাই--- এখন একটি লতাজা করিতে লাগিল—-কথা বলি বলি করিয়া বলিতে পারিলেন না। রোহিণীর সঙ্গে বারণী পাকুরের কথা হইয়াছিল বলিয়া কি এখন লজা ? বড়ো রঙগ দেখিতে লাগিল। গোবিন্দলাল, কোন কথা পাড়িতেছে না দেখিয়া, আপনি Gt W O