পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল রোহিণীকে উঠাইয়া, বসাইয়া, পাশ ফিরাইয়া, ঘরাইয়া, জল উদগীৰ্ণ করাইলেন। কিন্তু তাহাতে নিশবাস প্রশবাস বহিল না। সেইটি কঠিন কাজ । গোবিন্দলাল জানিতেন, মন্মষের বাহাদ্বয় ধরিয়া উদ্ধেবাত্তোলন করিলে, অন্তরস্থ বায়কোষ সফনীত হয়, সেই সময়ে রোগীর মখে ফৎকার দিতে হয়। পরে উত্তোলিত বাহাদ্বয়, ধীরে ধীরে নামাইতে হয়। নামাইলে বায়কোষ সঙ্কুচিত হয়; তখন সেই ফৎকার-প্রেরিত বায় আপনিই নিগত হইয়া আসে। ইহাতে কৃত্ৰিম নিশবাস প্রশবাস বাহিত হয়। এই রােপ পািনঃ পািনঃ করিতে করিতে বায়কোষের কায্য সম্ভবতঃ পািনরাগত হইতে থাকে; কৃত্রিম নিশবাস প্রশাবাস বাহিত করাইতে করাইতে সহজে নিশবাস প্রশবাস আপনি উপস্থিত হয়। রোহিণীকে তাই করিতে হইবে। দই হাতে দাইটি বাহ, তুলিয়া ধরিয়া তাহার মাখে ফৎকার দিতে হইবে, তাহার সেই পক্কবিষ্ণববিনিন্দিত, এখনও সাধাপরিপািণ, মদনমদোন্মাদহলাহল কলসীতুল্য রাঙ্গা রাঙ্গা মধ্যর অধরে অধর দিয়া ফৎকার দিতে হইবে! কি সব্বনাশ! কে দিবে ? গোবিন্দলালের এক সহায়, উড়িয়া মালী। বাগানের অন্য চাকরেরা ইতিপকেবই গহে। গিয়াছিল। তিনি মালীকে বলিলেন, “আমি ইহার হােত দাইটি ধরি, তুই ইহার মাখে ফ’ দে দেখি!” মখে ফাঁ! সৰ্ব্বনাশ!! ঐ রাঙগা, রাঙগা সাধামাখা অধরে, মালীর মাখের ফ-“সেহৈ পারিব না। মনিমা !” মালীকে মানিব। যদি শালগ্রামশিলা চক্ৰবণ করিতে বলিত, মালী মনিবের খাতিরে করিলে করিতে পারিত, কিন্তু সেই চাঁদমখের রাঙ্গা অধরে—সেই কটকি মাখের ফ! মালী ঘামিতে আরম্ভ করিল। সপভট বলিল, “ম সে পারিবি না। অধিবড়।” মালী ঠিক বলিয়াছিল। মালী সেই দেবদল্লভ ওঠাধিরে যদি একবার মািখ দিয়া ফ দিত, তার পর যদি রোহিণী বাঁচিয়া উঠিয়া আবার সেই ঠোঁট ফলাইয়া কলসীকক্ষে জল লইয়া মালীর পানে চাহিয়া, ঘরে যাইত—তবে আর তাহাকে ফািলবাগানের কাজ করিতে হইত না। সে খোন্তা, খরপো, নিড়িন, কাঁচি, কোদালি, বারণীর জলে ফেলিয়া দিয়া, এক দৌড়ে ভদরক পানে ছটিত সন্দেহ নাই।--বোধ হয় সবণ রেখার নীল জলে ডুবিয়া মারিত। মালী অত ভাবিয়াছিল কি না বলিতে পারি না, কিন্তু মালী ফ'ন দিতে রাজি হইল না। অগত্যা গোবিন্দলাল তাহাকে বলিলেন, “তবে তুই এই রােপ ইহার হাত দাইটি ধীরে ধীরে উঠাইতে থাক। -আমি ফাঁ, দিই। তাহার পর ধীরে ধীবে হাত নামাইবি।” মালী তাহা স্বীকার করিল। সে হাত দাইটি ধবিয়া ধীরে ধীরে উঠাইল---গোবিন্দলাল তখন সেই ফািল্লরক্তকুসমকান্তি অধরযগলে ফল্লিরক্তকুসমকান্তি অধরাষগল সস্থাপিত করিয়া—রোহিণীর মখে ফৎকার দিলেন। সেই সময়ে ভ্রমর, একটা লাঠি লইয়া, একটা বিডাল মারিতে যাইতেছিল। বিড়াল মারিতে, লাঠি বিড়ালকে না লাগিয়া, ভ্ৰমরেরই কপালে লাগিল । মালী রোহিণীর বাহাদ্বয় নামাইল। আবার উঠাইল। আবার গোবিন্দলাল ফাৎকার দিলেন। আবার সেইরাপ হইল। আবার সেইরােপ পািনঃ পািনঃ করিতে লাগিলেন। দই তিন ঘণটা এইরাপ করিলেন। রোহিণীর নিশবাস বহিল। রোহিণী বাঁচিল । সপতদশ পরিচ্ছেদ রোহিণীর নিশবাস প্রশ বাস বাহিতে লাগিল, গোবিন্দলাল তাহাকে ঔষধ পান করাইলেন। ঔষধ বলকারক-ক্ৰমে রোহিণীর বলসঞ্চার হইতে লাগিল। রোহিণী চাহিয়া দেখিল—সজিত রম্য গহমধ্যে মন্দ মন্দ শীতল পবন বাতায়নপথে পরিভ্রমণ করিতেছে—এক দিকে স্ফটিকাধারে সিনগধ প্ৰদীপ জীবলিতেছে।---আর এক দিকে হৃদয়াধারের জীবনপ্রদীপ জবুলিতেছে। এদিকে রোহিণী, গোবিন্দলাল-হসন্ত-প্রদত্ত মতসঞ্জীবনী সারা পান করিয়া, মতসঞ্জীবিত হইতে লাগিল —আর এক দিকে তাঁহার মতসঞ্জীবনী কথা শ্রবণপথে পান করিয়া মতসঞ্জীবিত হইতে লাগিল। প্রথমে নিশবাস, পরে চৈতন্য, পরে দণ্ডিট, পরে সমিতি, শেষে বাক্য সাফারিত হইতে লাগিল। রোহিণী বলিল, “আমি মরিয়াছিলাম, আমাকে কে বাঁচাইল ?” ○ と @