পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ এখন ক্ষীরি চাকরাণী মনে করিল যে, এ বড় কলিকাল—এক রাত্তি মেয়েটা, আমার কথায় বিশ্ববাস করে না। ক্ষীরোদার সরল অন্তঃকরণে ভ্ৰমরের উপর রাগ দেবযাদি কিছই নাই, সে ভ্রমরের মঙ্গলাকাঙিক্ষণী বটে, তাহার অমঙ্গল চাহে না ; তবে ভ্রমর যে তাহার ঠকামি কাণে তুলিল না, সেটা অসহ্য। ক্ষীরোদা। তখন, সচিরক্কণ দেহ যাম্পিট সংক্ষেপে তৈলনিষিক্ত করিয়া, রঙগকরা গামছাখানি কাঁধে ফেলিয়া, কলসীকক্ষে, বারণীর ঘাটে সন্নান করিতে চলিল। হরমণি ঠাকুরাণী, বাবদের বাড়ীর একজন পাঁচিকা, সেই সময় বারণীর ঘাট হইতে স্নান করিয়া আসিতেছিল, প্রথমে তাহার সঙেগ সাক্ষাৎ হইল। হ'বমণিকে দেখিয়া ক্ষীরোদা আপনা। আপনি বলিতে লাগিল, “বলে, যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর।--আর বড়লোকের কাজ করা হল না-কখন কার মেজাজ কেমন থাকে, তার ঠিকানাই নাই।” হরমণি একটা কোন্দলের গন্ধ পাইয়া, দাহিন হাতের কাচা কাপড়খানি বাঁ হাতে রাখিয়া, জিজ্ঞাসা করিল, “কি লো ক্ষীরোদা——আবার কি হয়েছে ?” ক্ষীরোদা। তখন মনের বোঝা নামাইল। বলিল, “দেখ দেখি গা-পাড়ার কালামখীরা বাবর বাগানে বেড়াইতে যাবে।--তা আমরা চাকর বাকর—আমরা কি তা মানিবের কাছে বলিতে পারি ब् ।' হর। সে কি লো ? পাড়ার মেয়ে আবার বাবার বাগানে বেড়াইতে কে গেল ? ক্ষী। আর কে যায় ? সেই কালামখী রোহিণী। হর। কি পোড়া কপাল! রোহিণীর আবার এমন দশা কত দিন ? কোন বাবার বাগানে রে ক্ষীরোদা ? ক্ষীরোদা মেজ বাবার নাম করিল। তখন দাই জনে একটা চাওয়াচাওয়ি করিয়া, একট, রসের হাসি হাসিয়া, যে যে দিকে যাইবার, সে সেই দিকে গেল। কিছ: দীর গিয়াই ক্ষীরোদার সঙ্গে পাড়ার রামের মারা দেখা হইল। ক্ষীরোদা। তাহাকেও হাসির ফাঁদে ধরিয়া ফেলিয়া, দড়ি করাইয়া রোহিণীর দৌরাত্ম্যের কথার পরিচয় দিল। আবার দজনে হাসি চাহনি ফেরাফিরি করিয়া অভীপ্সটি পথে গেল। এই রাপে ক্ষীরোদা, পথে রামের মা, শ্যামের মা, হারী, তারী, পারী যাহার দেখা পাইল, তাহারই কাছে আপন মৰ্ম্মম পীড়ার পরিচয় দিয়া, পরিশেষে সস্থিশরীরে প্রফােল্লহৃদয়ে বারণীর সাফাটিক বারিরাশিমধ্যে অবগাহন করিল। এ দিকে হরমণি, রামের মা, শ্যামের মা, হারী, তারী, পারী যাহাকে যেখানে দেখিল, তাহাকে সেইখানে ধরিয়া শনাইয়া দিল যে, রোহিণী হতভাগিনী মেজবাবার বাগান বেড়াইতে গিয়াছিল। একে শান্য দশ হইল, দশে শান্য শত হইল, শতে শান্য সহস্র হইল। যে সংয্যের নবীন কিরণ তেজস্বী না হইতে হইতেই, ক্ষৗরি প্রথম ভ্রমরের সাক্ষাতে রোহিণীর কথা পাড়িয়াছিল, তাঁহার অসাতগমনের পর্ক্সেবাই গ’হে গহে ঘোষিত হইল যে, রোহিণী গোবিন্দলালের অন্যগহীতা। কেবল বাগানের কথা হইতে অপরিমেয় প্রণয়ের কথা, অপরিমেয় প্রণয়ের কথা হইতে অপরিমেয় অলঙ্কারের কথা, আর কত কথা উঠিল, তাহা আমি—হে রটনাকৌশলময়ী কলঙককলিতকল্ঠা কুলকামিনীগণ! তাহা আমি অধম সত্যশাসিত পরষ লেখক আপনাদিগের কাছে সবিস্তারে বলিয়া বাড়াবাড়ি করিতে চাহি না। ক্ৰমে ভ্রমরের কাছে সংবাদ আসিতে লাগিল। প্রথমে বিনোদিনী আসিয়া বলিল, “সত্যি কি লা?” ভ্রমর, একট, শম্ভক মাখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাকে বলিল, “কি সত্য ঠাকুরঝি ?” ঠাকুর ঝি তখন ফলধনর মত দইখানি ভ্ৰ, একটা জড়সড় করিয়া, অপাঙ্গে একটি বৈদ্যুতী প্রেরণ করিয়া ছেলেটিকে কোলে টানিয়া বসাইয়া, বলিল, “বলি, রোহিণীর কথাটা ?” ভ্রমর, বিনোদিনীকে কিছ না বলিতে পারিয়া, তাহার ছেলেটিকে টানিয়া লইয়া, কোন বালিকাসলভ কৌশলে, তাহাকে কাঁদাইল। বিনোদিনী বালককে স্তন্যপান করাইতে করাইতে সবাসস্থানে চলিয়া গেল । বিনোদিনীর পর সরধানী আসিয়া বলিলেন, “বলি মেজ বৌ, বলি বলেছিলাম, মেজ বাবকে অষধ করা। তুমি হাজার হৌক গৌরবণ নও, পরষ মানষের মন ত কেবল কথায় পাওয়া যায় না, একটি রােপ গণ চাই। তা ভাই, রোহিণীর কি আক্কেল, কে জানে ?” ○ U决y