পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী শনিয়াছি কেন, দেখিয়াছি। তুমি রোহিণীকে যে বস্ত্ৰালঙ্কার দিয়াছ, তাহা সে স্বয়ং আমাকে দেখাইয়া গিয়াছে। তুমি মনে জানি বোধ হয় যে, তোমার প্রতি আমার ভক্তি অচলা—তোমার উপর আমার বিশ্ববাস অনন্ত। আমিও তােহা জানিতাম। কিন্তু এখন বঝিলাম যে, তাহা নহে। যত দিন তুমি ভক্তির যোগ্য, তত দিন আমারও ভক্তি ; যত দিন তুমি বিশবাসী, তত দিন আমারও বিশবাস। এখন তোমার উপর আমার ভক্তি নাই, বিশ্ববাসও নাই। তোমার দর্শনে আমার আর সখি নাই। তুমি যখন বাড়ী আসিবে, আমাকে অনগ্ৰহ করিয়া খবর লিখিও—আমি কাঁদিয়া কাটিয়া যেমন করিয়া পারি, পিত্ৰালয়ে যাইব ।” গোবিন্দলাল যথাকলে সেই পত্ৰ পাইলেন। তাঁহার মাথায় বজাঘাত হইল। কেবল হসন্তাক্ষরে এবং বর্ণাশদিদ্ধর প্রণালী দেখিয়াই তিনি বিশ্ববাস করিলেন যে, এ ভ্রমরের লেখা। তথাপি মনে অনেক বার সন্দেহ করিলেন—ভ্রমর তাঁহাকে এমন পত্র লিখিতে পারে, তাহা তিনি কখনও বিশ্ববাস করেন নাই। সেই ডাকে আরও কয়খনি পত্র আসিয়াছিল। গোবিন্দলাল প্রথমেই ভ্ৰমরের পত্ৰ খালিয়াছিলেন; পড়িয়া সস্তম্ভিতের ন্যায় অনেকক্ষণ নিশ্চেন্ট রহিলেন; তার পর সে পত্রগলি অন্যমনে পড়িতে আরম্ভ করিলেন। তন্মধ্যে ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষের একখানি পত্ৰ পাইলেন। কবিতাপ্রিয় ব্ৰহ্মানন্দ লিখিতেছেন “ভাই হে! রাজায় রাজায় যাদ্ধ হয়--উল, খড়ের প্রাণ যায়। তোমার উপর বৌমা সকল দৌরাত্ম্য করিতে পারেন। কিন্তু আমরা দঃখী প্রাণী, আমাদিগের উপর এ দৌরাত্ম্য কেন ? তিনি রাস্ট্র করিয়াছেন যে, তুমি রোহিণীকে সাত হাজার টাকার অলঙ্কার দিয়াছ। আরও কত কদৰ্য্য কথা রাটিয়াছে, তাহা তোমাকে লিখিতে লজজা করে।—যাহা হৌক,--—তোমার কাছে আমার নালিশ, তুমি ইহার বিহিত করিবে। নাহিলে আমি এখানকার বাস উঠাইব । ইতি।” গোবিন্দলাল আবার বিস্মিত হইলেন।—ভ্রমর রটাইয়াছে ? মৰ্ম্মম কিছই না বঝিতে পারিষা, গোবিন্দলাল সেই দিন আজ্ঞা প্রচার করিলেন যে, এখানকার জলবায় আমার সহ্য হইতেছে না।——আমি কালই বাটী যাইব । নৌকা প্রস্তুত করা। পাবদিন নৌকারোহণে, বিষগ্নীমনে গোবিন্দলাল গহে যাত্রা করিলেন। চতুৰিবংশতিতম পরিচ্ছেদ যাহাকে ভালবাস, তাহাকে নয়নের আড় করিও না। যদি প্ৰেমবন্ধন দািঢ় রাখিবে, তবে সীতা ছোট করিও । বাঞ্ছিতকে চোখে চোখে রাখিও । আদর্শনে কত বিষময় ফল ফলে। যাহাকে বিদায় দিবার সময়ে কত কাঁদিয়াছ, মনে করিয়াছ, বঝি তাহাকে ছাড়িয়া দিন কাটিবে না-কয় বৎসর পরে তােহর সহিত আবার যখন দেখা হইয়াছে, তখন কেবল জিজ্ঞাসা করিয়াছ—“ভাল আছে তা ? “” হয়ত সে কথাও হয় নাই—কথাই হয় নাই-আন্তরিক বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে। হয়ত রাগে, অভিমানে আর দেখাই হয় নাই। তত নাই হউক, একবার চক্ষের বাহির হইলেই, যা ছিল তা আর হয় না। যা যায়, তা আর আসে না। যা ভাঙেগ, আর তা গড়ে না। মক্তবেণীর পর যন্তবেণী কোথায় দেখিয়াছ ? ভ্রমর গোবিন্দলালকে বিদেশ যাইতে দিয়া ভাল করেন নাই। এ সময়ে দলই জনে একত্রে থাকিলে, এ মনের মালিন্য বঝি ঘটিত না। বাচনিক বিবাদে আসল কথা প্রকাশ পাইত। ভ্ৰমরের এত ভ্ৰম ঘটিত না। এত রাগ হইত না। রাগে এই সববনাশ হইত না । গোবিন্দলাল সবদেশে যাত্ৰা করিলে, নায়েব কৃষ্ণকান্তের নিকট এক এত্তেলা পাঠাইল যে, মধ্যম বােব অদ্য প্রাতে গাহাভিমখে যাত্রা করিয়াছেন। সে পত্র ডাকে আসিল । নৌকার অপেক্ষা ডাক আগে আসে। গোবিন্দলাল স্বদেশে পৌছিবার চারি পাঁচ দিন আগে, কৃষ্ণকান্তের নিকট নায়েবের পত্র পৌছিল। ভ্রমর শনিলেন, স্বামী আসিতেছেন। ভ্রমর তখনই আবার পত্ৰ লিখিতে বসিলেন। খান চারি পাঁচ কাগজ কালিতে পরাইয়া, ছিড়িয়া ফেলিয়া, ঘণ্টা দাই চারি মধ্যে একখানা পত্র লিখিয়া খাড়া করিলেন। এ পত্রে মাতাকে লিখিলেন যে, “আমার বড় পীড়া হইয়াছে। তোমরা যদি একবার আমাকে লইয়া যাও, তবে আরাম হইয়া আসিতে পারি। G. C SR