পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

इश्काल्डद्ध ऊँछेवा টাকা। সতরাং পিয়ন মনে করে, সাত আনা আর পনির আনায় যে তফাৎ, বাবার সঙ্গে আমার সঙ্গে তাহার অধিক তফাৎ নহে। কিন্তু বাব মনে মনে জানেন যে, আমি একটা ডিপটি-ও বেটা পিয়াদা—আমি উহার হৰ্ত্তা কত্তা বিধাতা পরষ—উহাতে আমাতে জমীন আশমান ফারাক। সেই কথা সপ্রমাণ করিবার জন্য, পোস্ট মাস্টার বাবা সৰ্ব্বদা সে গরীবকে তত্তজন গডজনি করিয়া থাকেন—সেও সাত আনার ওজনে উত্তর দিয়া থাকে। বােব আপাততঃ চিঠি ওজন করিতেছিলেন, এবং পিয়াদাকে সঙেগ সঙেগ আশী আনার ওজনে ভৎসনা করিতেছিলেন, এমত সময়ে প্রশান্তমাত্তি সহাস্যবন্দন মাধবীনাথ বাবা সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভদ্রলোক দেখিয়া, পোস্ট মাস্টার বােব আপাততঃ পিয়াদার সঙেগ কচকচি বন্ধ করিয়া, হাঁ করিয়া, চাহিয়া রহিলেন । ভদ্রলোককে সমাদর করিতে হয়, এমন কতকটা তাঁহার মনে উদয় হইল—কিন্তু সমাদর কি প্রকারে করিতে হয়, তাহা তাঁহার শিক্ষার মধ্যে নহে—সতরাং তােহা ঘটিয়া উঠিল না। মাধবীনাথ দেখিলেন, একটা বানর। সহস্যবদনে বলিলেন, “ব্ৰাহ্মণ ?” পোস্ট মাস্টার বলিলেন, “হাঁ—তু—তুমি—আপনি ?” মাধবীনাথ ঈষৎ হাস্য সংবরণ করিয়া অবনত শিরে যক্ত করে ললাট সপশ করিয়া বলিলেন, “প্ৰাতঃপ্ৰণাম !” তখন পোস্ট মাস্টারু বােব বলিলেন, “বসন।” মাধবীনাথ কিছ, বিপদে পড়িলেন ;—পোস্ট বাবা ত বলিলেন, “বসন”, কিন্তু তিনি বসেন। কোথা—বাব খোদ এক অতি প্রাচীন ত্ৰিপাদমাত্রাবিশিষট চৌকিতে বসিয়া আছেন—তাহা ভিন্ন আর আসন কোথাও নাই। তখন সেই পোস্ট মাস্টার বাবার সাত আনা, হরিদাস পিয়াদা— একটা ভাঙগা টলের উপর হইতে রাশিখানি ছোড়া বহি নামাইয়া রাখিয়া মাধবীনাথকে বসিতে দিল। মাধবীনাথ বসিয়া তাহার প্রতি দস্টি করিয়া বলিলেন, “কি হে বাপ, কেমন আছ ? তোমাকে দেখিয়াছি না ? “ পিয়াদা। আজ্ঞা, আমি চিঠি বিলি করিয়া থাকি। মাধবী। তাই চিনিতেছি। এক ছিলিম তামাক সাজ দেখি— মাধবীনাথ গ্রামান্তরের লোক, তিনি কখনই হরিদাস বৈরাগী পিয়াদাকে দেখেন নাই এবং বৈরাগী বাবাজিও কখনও তাহাকে দেখেন নাই। বাবাজি মনে করিলেন-বাবটা রকমসই বটে, চাহিলে কোন না। চারি গণডা বখশিশ, দিবে। এই ভাবিয়া হরিদাস হ'কোর তল্লাসে ধাবিত হইলেন । মাধবীনাথ আদৌ। তামাকু খান না— কেবল হরিদাস বাবাজিকে বিদায় করিবার জন্য তামাকুর ফরমায়েস করিলেন। পিয়াদা মহাশয় স্থানান্তরে গমন করিলে, মাধবীনাথ পোস্ট মাস্টার বাবকে বলিলেন, “আপনার কাছে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য আসা হইয়াছে।” পোস্ট মাশুটার বাব মনে মনে একট, হাসিলেন। তিনি বঙ্গদেশীয়-নিবাস বিক্রমপর। অন্য দিকে যেমন নিবোধ হউন না। কেন –আপনার কােজ বঝিতে সচ্যগ্রবদ্ধি । বঝিলেন যে, বাধটি কোন বিষয়ের সন্ধানে আসিয়াছেন। বলিলেন, “কি কথা মহাশয় ?” মাধ। ব্ৰহ্মানন্দকে আপনি চিনেন ? পোস্ট। চিনি না-চিনি—ভাল চিনি না। মাধবীনাথ বঝিলেন, অবতার নিজমত্তি ধারণ করিবার উপক্ৰম করিতেছে। বলিলেন, “আপনার ডাকঘরে ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষের নামে কোন পত্ৰাদি আসিয়া থাকে ?” পোস্ট। আপনার সঙেগ ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষের আলাপ নাই ? মাধ। থাক বা না থাক, কথাটা জিজ্ঞাসা করিতে আপনার কাছে আসিয়াছি। পোস্ট মাস্টার বাব, তখন আপনার উচ্চ পদ এবং ডিপটি অভিধান সমরণপববািক অতিশয় গম্ভীর হইয়া বসিলেন, এবং অলপ রাস্টভাবে বলিলেন, “ডাকঘরের খবর আমাদের বলিতে বারণ আছে।” ইহা বলিয়া পোস্ট মাস্টার নীরবে চিঠি ওজন করিতে লাগিলেন। মাধবীনাথ মনে মনে হাসিতে লাগিলেন ; প্রকাশ্যে বলিলেন, “ওহে বাপ, তুমি আমনি কথা কবে না, তা জানি। সে জন্য কিছ, সঙ্গেও আনিয়াছি--কিছ দিয়া যাইব—এখন যা যা জিজ্ঞাসা করি, ঠিক ঠিক বল দেখি-” G. C.