পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

प्रदाभनन्मिनी কহিল, “যদুবরাজ, আমি যে পরিচয় দিলাম না, ইহাতে আমাকে অপরাধিনী ভাবিবেন না, ইহার অবশ্য উপযক্ত কারণ আছে। যদি আপনি এ বিষয়ে নিতান্ত কৌতহলাক্কান্ত হইয়া থাকেন, তবে অদ্য হইতে পক্ষান্তরে আপনার সহিত কোথায় সাক্ষাৎ হইতে পরিবে, বলিয়া দিন।” জগৎ সিংহ কিয়ৎকাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, “আদ্য হইতে পক্ষান্তরে রাত্রিকালে এই মন্দিরমধ্যেই আমার সাক্ষাৎ পাইবে। এই স্থলে দেখুনা পাও—সাক্ষাৎ হইল না।” “দেবতা আপনাকে রক্ষা করন" বলিয়া বিমলা পােনকবার প্রণত হইল। রাজকুমার পনেকবাম = ಸ್ಥ್ಯ তৃষ্ণাকাতর লোচনে যাবতীর প্রতি দাম্পিটপাত করিয়া, লম্ফ দিয়া অশবারোহণপব্বক চলয়া গেলেন । তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ মোগল পাঠান নিশীথকালে জগৎ সিংহ শৈলেশ্ববরের মন্দির হইতে যাত্ৰা করিলেন। আপাততঃ তাঁহার অনঙ্গমনে অথবা মন্দিরাধিঠাত্রী মনোমোহিনীর সংবাদ কথনে পাঠক মহাশয়দিগের কৌত হল। নিবারণ করিতে পারিলাম না। জগৎ সিংহ রাজপতি, কি প্রয়োজনে বঙ্গদেশে আসিয়াছিলেন, কেনই বা প্রান্তরমধ্যে একাকী গমন করিতেছিলেন, তৎপরিচয় উপলক্ষে এই সময়ের বঙ্গদেশ সম্মবন্ধীয় রাজকীয় ঘটনা কতক কতক সংক্ষেপে বিবত করিতে হইল। অতএব এই পরিচ্ছেদ ইতিবত্তসম্পকীয়। পাঠকবর্গ একান্ত অধীর হইলে ইহা ত্যাগ করিতে পারেন, কিন্তু গ্রন্থকারের পরামর্শ এই যে, অধৈয্য ভাল নহে। প্রথমে বঙ্গদেশে বখতিয়ার খিলিজি মহম্মদীয় জয়ধবজা সংস্থাপিত করিলে পর, মসলমানেরা অবাধে কয়েক শতাব্দী তদ্রাজ্য শাসন করিতে থাকেন। ১৯৭২ হেঃ অব্দে সবিখ্যাত সালতান বাবর, রণক্ষেত্রে দিল্লীর বাদশাহ ইব্রাহিম লন্দীকে পরাভূত করিয়া, তৎসিংহাসনে আরোহণ করেন; কিন্তু তৎকালেই বঙ্গদেশ তৈমরিলঙগবংশীয়দিগের দন্ডাধীন হয় নাই। যতদিন না মোগল সম্রােটদিগের কুলতিলক আকবরের অভু্যদয় হয়, ততদিন এ দেশে স্বাধীন পাঠান রাজগণ রাজত্ব করিতেছিলেন। কুক্ষণে নিকেবােধ দাউদ খাঁ সপত সিংহের অঙ্গে হস্তক্ষেপণ করিলেন; আত্মকৰ্ম্মফলে আকবরের সেনাপতি মনাইম খাঁ কত্ত্বক পরাজিত হইয়া রাজ্যভ্রম্পট হইলেন। দাউদ ১৯৮২ হেঃ আবেদ সগণে উড়িষ্যায় পলায়ন করিলেন ; বঙগরাজ্য মোগল ভূপালের কর-কবলিত হইল। পাঠানেরা উৎকলে সংস্থাপিত হইলে, তথা হইতে তাহাদিগের উচ্ছেদ করা মোগলাদিগের কম্পটসাধ্য হইল। ১৮৬ আবেদ দিল্লীশবরের প্রতিনিধি খাঁ জাঁহা খাঁ পাঠানদিগের দিবতীয় বার পরাজিত করিয়া উৎকল দেশ নিজ প্রভুর দন্ডাধীন করিলেন। ইহার পর আর এক দারণ উপদ্রব উপস্থিত হইয়াছিল। আকবর শাহ কর্তৃক বঙ্গদেশের রাজকর আদায়ের যে নািতন প্রণালী সংস্থাপিত হইল, তাহাতে জায়গীরদার প্রভৃতি ভূম্যাধিকারিগণের গরতের অসন্তুন্সিটি জন্মিল। তাঁহারা নিজ নিজ পাকবাধিপত্য রক্ষার্থ খড়গহস্ত হইয়া উঠিলেন। অতি দন্দম্য রাজবিদ্রোহ উপস্থিত হওয়াতে, সময় পাইয়া উড়িষ্যার পাঠানেরা পনেকবার মস্তক উন্নত করিল ও কতল খাঁ নামক এক পাঠানকে আধিপত্যে বরণ করিয়া পনরাপি উড়িষ্যা সবকরাগ্রস্ত করিল। মেদিনীপরও তাহদের অধিকারভুক্ত হইল। কমঠ রাজপ্রতিনিধি খাঁ আজিম, তৎপরে শাহবাজ খাঁ, কেহই শত্র বিজিত দেশ পােনরদ্ধার করিতে পারিলেন না। পরিশেষে এই আয়াসীসাধ্য কায্যোদ্ধার জন্য একজন হিন্দ যোদ্ধা প্রেরিত হইলেন। মহামতি আকবর তাঁহার পর্বগামী সম্রােটদিগের হইতে সব্বাংশে বিজ্ঞ ছিলেন। তাঁহার হৃদয়ে বিশেষ প্রতীতি জন্মিয়াছিল যে, এতদ্দেশীয় রাজকাৰ্য্য সম্পপাদনে এতদ্দেশীয় লোকই বিশেষ পট,-বিদেশীয়েরা তাদশে নহে; আর যন্ধে বা রাজ্যশাসনে রাজপতিগণ দক্ষাগ্রগণ্য। অতএব তিনি সব্বদা এতদ্দেশীয়, বিশেষতঃ রাজপতিগণকে গরতের রাজকায্যে নিযক্ত করিতেন । আখ্যায়িকাবাণিত কালে যে সকল রাজপত উচ্চপদাভিষিক্ত ছিলেন, তন্মধ্যে মানসিংহ একজন প্রধান। তিনি স্বয়ং আকবরের পত্র সেলিমের শ্যালক। আজিম খাঁ ও শাহবাজ খাঁ উৎকলজয়ে অক্ষম হইলে, আকােরর এই মহাত্মাকে বঙ্গ ও বেহারের শাসনকত্তা করিয়া পাঠাইলেন। Got CR