পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী ৯৯৬ সালে মানসিংহ পাটনা নগরীতে উপনীত হইয়া প্রথমে অপরাপর উপদ্রবের শান্তি করিলেন। পরবৎসরে উৎকল বিজিগীষ হইয়া তদাভিমখে যাত্রা করিলেন। মানসিংহ প্রথমে পাটনায় উপস্থিত হইলে পর, নিজে তন্নগরীতে অবস্থিতি করিবার অভিপ্রায় করিয়া বঙ্গপ্রদেশ শাসন জন্য সৈদ খাঁকে নিজ প্রতিনিধি নিযক্ত করিলেন। সৈদ খাঁ এই ভারপ্রাপতি হইয়া বঙ্গদেশের তৎকালিক রাজধানী তল্ডা নগরে অবস্থিতি করিতেছিলেন। এক্ষণে রণাশায় যাত্রা কেরিয়া মানসিংহ প্রতিনিধিকে যন্ধে আহবান করিলেন। সৈদ খাঁকে লিখিলেন যে, তিনি বদধমানে তাঁহার সহিত সসৈন্য মিলিত হইতে চাহেন। বদর্ধমানে উপনীত হইয়া রাজা দেখিলেন যে, সৈদ খাঁ আসেন নাই, কেবলমাত্র দত দুবারা এই সংবাদ পাঠাইয়াছেন যে, সৈন্যাদি সংগ্ৰহ করিতে তাঁহার বিস্তর বিলম্ব সম্ভাবনা, এমন কি, তাঁহার সৈন্যসজজা করিয়া যাইতে বিষাকাল উপস্থিত হইবে ; অতএব রাজা মানসিংহ আপাততঃ বিষা শেষ পয্যন্ত শিবির সংস্থাপন করিয়া থাকিলে তিনি বিষাপ্রভাতে সেনা সমভিব্যাহারে রাজসন্নিধানে উপস্থিত হইবেন । রাজা মানসিংহ অগত্যা তৎপরামশানবেত্তীর্ণ হইয়। দারকেশবরতীরে শিবির সংস্থাপিত করিলেন। তথায় সৈদ খাঁর প্রতীক্ষায় রহিলেন। তথায় অবস্থিতিকালে লোকমখে রাজা সংবাদ পাইলেন যে, কতল খাঁ তাঁহার আলস্য দেখিয়া সাহসিক হইয়াছে, সেই সাহসে মান্দারণের অনতিদর মধ্যে সসৈন্য আসিয়া দেশ লািঠ করিতেছে। রাজা উদিবগনচিত্ত হইয়া, শত্রবল কোথায়, কি অভিপ্ৰায়ে আসিয়াছে, কি করিতেছে, এই সকল সংবাদ নিশ্চয় জানিবার জন্য তাঁহার একজন প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষকে প্রেরণ করা উচিত বিবেচনা করিলেন। মানসিংহের সহিত তাঁহার প্রিয়তম পত্র জগৎ সিংহ যন্ধে আসিয়াছিলেন। জগৎ সিংহ এই দঃসাহসিক কায্যের ভার লাইতে সোৎসক জানিয়া, রাজা তাঁহাকেই শতেক আশবারোহী সেনা সমভিব্যাহারে শত্র শিবিরোদেশে প্রেরণ করিলেন। রাজকুমার কায্য সিদ্ধ করিয়া অচিরাং প্রত্যাবত্তন করিলেন । যৎকালে কায্য সমাধা করিয়া শিবিরে প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, তখন প্রান্তরমধ্যে পাঠক মহাশয়ের সহিত তাঁহার পরিচয় হইয়াছে। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ ঃ নবীন সেনাপতি শৈলেশ্ববর-মন্দির হইতে যাত্রা করিয়া জগৎ সিংহ পিতৃশিবিরে উপস্থিত হইলে পর, মহারাজ মানসিংহ পত্রিপ্রমখাৎ অবগত হইলেন যে, প্রায় পঞ্চাশৎ সহস্ৰ পাঠান সেনা ধরপর গ্রামের নিকট শিবির সংস্থাপন করিয়া নিকটস্থ গ্রামসকল লািঠ করিতেছে, এবং সন্থানে স্থানে দগ নিশ্চমাণ বা অধিকার করিয়া তদাশ্রয়ে এক প্রকার নিবিবাঘের আছে। মানসিংহ দেখিলেন যে, পাঠানীদিগের দবত্তির আশা দমন নিতান্ত আবশ্যক হইয়াছে, কিন্তু এ কায্য অতি দঃসাধ্য। কত্ত ব্যাকত্তব্য নিরাপণ জন্য সমভিব্যাহারী সেনাপতিগণকে একত্র করিয়া এই সকল বক্তান্ত বিবত করিলেন এবং কহিলেন, “দিনে দিনে গ্রাম গ্রাম, পরগণা পরগণা দিল্লীশবরের হস্তস্খলিত হইতেছে, এক্ষণে পাঠানদিগকে শাসিত না করিলেই নয়, কিন্তু কি প্রকারেই বা তাহাদিগের শাসন হয় ? তাহারা আমাদিগের অপেক্ষা সংখ্যায় বলবান ; তাহাতে আবার দাগ শ্রেণীর আশ্রয়ে থাকিয়া যাদ্ধ করিবে; যদুদ্ধে পরাজিত করিলেও তাহাদিগকে বিনম্ৰাট বা সস্থানচ্যুত করিতে পারিব না; সহজেই দগমধ্যে নিরাপদ হইতে পরিবে। কিন্তু সকলে বিবেচনা করিয়া দেখ, যদি রণে আমাদিগকে বিজিত হইতে হয়, তবে শত্রর অধিকারমধ্যে নিরাশ্রয়ে একেবারে বিনম্পন্ট হইতে হইবে। এবােপ অন্যায় সাহসে ভরা করিয়া দিল্লীশাবরের এত অধিক সেনানাশের সম্পভাবনা জন্মান, এবং উড়িষ্যাজয়ের আশা একেবারে লোপ করা, আমার বিবেচনায় অন্যচিত হইতেছে; সৈদ খ৷র প্রতীক্ষা করাই উচিত হইতেছে ; অথচ বৈরিশাসনের আশা কোন উপায় করাও আবশ্যক হইতেছে। তোমরা কি পরামশ দাও ?” বন্ধ সেনাপতিগণ সকলে একমত হইয়া এই পরামর্শ স্থির করিলেন যে, আপাততঃ সৈদ খাঁর প্রতীক্ষায় থাকাই কত্তব্য। রাজা মানসিংহ কহিলেন, “আমি অভিপ্রায় করিতেছি যে, সমদায় সৈন্যনাশের সম্ভাবনা না রাখিয়া কেবল অলপসংখ্যক সেনা কোন দক্ষ সেনাপতির সহিত শত্ৰসমক্ষে প্রেরণ করি।” একজন প্রাচীন মোগল সৈনিক কহিলেন, “মহারাজ ! যথা তাবৎ সেনা পাঠাইতেও আশঙ্কা, তথা অলপসংখ্যক সেনার দবারা কোন কাৰ্য্য সাধন হইবে ?” C. f