পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী পারিল না কেন ? আপনার বীৰ্য্যবান মহাবলপরাক্লান্ত বংশ বটে, কিন্তু তাই বলিয়া নহে। মহাবলপরাক্লান্ত রামের বাদশাহ কিংবা পারস্যের শাহ দিল্লীর বাদশাহকে কন্যাদান গৌরব মনে করেন। তবে উদয়পারেশবের কেবল তাহাকে কন্যাদান করেন নাই কেন ? তিনি রাজপত বলিয়া। আমিও সেই রাজপতি। মহারাজ ! প্রাণত্যাগ করিব, তব কুল রাখিব প্রতিজ্ঞা করিয়াছি। “প্রয়োজন হইলে প্রাণবিসঙ্জন করিব, প্রতিজ্ঞা করিয়াছি; কিন্তু তথাপি এই অল্টাদশ বৎসর বয়সে, এ অভিনব জীবন রাখিতে বাসনা হয়। কিন্তু কে এ বিপদে এ জীবন রক্ষা করিবে ? আমার পিতার ত কথাই নাই, তাঁহার এমন কি সাধ্য যে, আলমগীরের সঙ্গে বিবাদ করেন ? আর যত রাজপত রাজা ছোট হউন, বড় হউন, সকলেই বাদশাহের ভৃত্য-সকলেই বাদশাহের ভয়ে কম্পিপত্যকলেবর। কেবল আপনি --রাজপতিকুলের একা প্ৰদীপ—কেবল আপনিই স্বাধীন —কেবল উদয়পারেশবেরই বাদশাহের সমকক্ষ। হিন্দকুলে আর কেহ নাই যে,--এই বিপন্না বালিকাকে রক্ষা করে।--আমি আপনার শরণা লইলাম—আপনি কি আমাকে রক্ষা করিবেন না ? “কত বড় গরতের কায্যে আমি আপনাকে অননুরোধ করিতেছি, তাহা আমি না জানি, এমত নহে। আমি কেবল বালিকাবদ্ধির বশীভূত হইয়া লিখিতেছি, এমত নহে। দিল্লীশ্বরের সহিত বিবাদ সহজ নহে জানি। এ পথিবীতে আর কেহই নাই যে, তাহার সঙ্গে বিবাদ করিয়া তিস্ঠিতে পারে। কিন্তু মহারাজ ! মনে করিয়া দেখান, মহারাণা সংগ্ৰামসিংহ বাবরশাহকে প্রায় রাজ্যচু্যত করিয়াছিলেন। মহারাণা প্রতাপসিংহ আকবর,শাহকেও মধ্যদেশ হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিয়াছিলেন। আপনি সেই সিংহাসনে আসীন। --আপনি সেই সংগ্রামের, সেই প্ৰতাপের বংশধর। —আপনি কি তাঁহাদিগের অপেক্ষা হীনবল ? শনিযাছি না কি, মহারান্ডেট্র এক পাকবতীয় দস্য আলমগীরকে পরাভূত করিযাছে—সে আলমগীর কি রাজস্থানের রাজেন্দ্রের কাছে গণ্য ? “আপনি বলিতে পারেন, “আমার বাহতে বল আছে——কিন্তু থাকিলেও আমি তোমার জন্য কেন এত কস্ট করিব ? আমি কেন অপরিচিতা মািখরা কামিনীর জন্য প্রাণিহত্যা করিব ?-- ভীষণ সমরে অবতীর্ণ হইব ?’ মহারাজ ! সবাব সব পণ করিয়া শরণাগতকে রক্ষা করা কি রাজধৰ্ম্ম নহে ? সববস্ব পণ করিয়া কুলকামিনীর রক্ষা করা কি রাজপতের ধৰ্ম্ম নহে ?” এই পয্যন্ত পত্ৰখানি রাজকন্যার হাতের লেখা। বাকি যেটকু, সেটবুকু তাঁহার হাতের নহে । নিৰ্ম্মলকুমারী লিখিয়া দিয়াছিল ; রাজকন্যা তাহ জানিতেন কি না, আমরা বলিতে পারি না। সে কথা এই— “মহারাজ । আর একটি কথা বলিতে লজজা করে, কিন্তু না বলিলেও নহে। আমি এই বিপদে পড়িয়া পণ করিয়াছি যে, যে বীর আমাকে মোগলহস্ত হইতে রক্ষা করিবেন, তিনি যদি রাজপত হযেন, আর যদি আমাকে যথাশাস্ত্র গ্রহণ করেন, তবে আমি তাঁহার দাসী হইব। হে বীরশ্ৰেষ্ঠ ! যন্ধে স্ত্রীলােভ বীরের ধৰ্ম্ম । সমগ্র ক্ষত্ৰকুলের সহিত যাদ্ধ করিয়া, পান্ডব দ্ৰৌপদীলাভ করিয়াছিলেন। কাশীরাজ্যে সমবেত রাজমন্ডলীসমক্ষে আপন বীৰ্য্য প্রকাশ করিয়া ভীমদেব রাজকন্যাগণকে লইয়া আসিয়াছিলেন। হে রাজনী! রক্সিণীর বিবাহ মনে পড়ে না ? আপনি এই পথিবীতে আজিও অদ্বিতীয় বীর—আপনি কি বীরধৰ্ম্মেম পরাঙামািখ হইবেন ? “তবে, আমি যে আপনার মহিষী হইবার কামনা করি, ইহা দারাকাঙক্ষা বটে। যদি আমি আপনার গ্রহণযোগ্য না হই, তাহা হইলে আপনার সঙ্গে অন্যবিধ সম্পবিন্ধ স্থাপন করিবারও কি ভরসা করিতে পারি না ? অন্ততঃ যাহাতে সরােপ অনগ্রহও আমার অপ্রাপ্য না হয়, এই অভিপ্ৰায্য করিয়া গরদেবহস্তে রাখির বন্ধন পাঠাইলাম। তিনি রাখি বাঁধিয়া দিবেন—তার পর, আপনার রাজধৰ্ম্মম আপনার হাতে। আমার প্রাণ আমার হাতে। যদি দিল্লী যাইতে হয়, দিল্লার পথে বিষভোজন করিব।” পত্র পাঠ করিয়া রাজসিংহ কিছদ্ম্মক্ষণ চিন্তামগন হইলেন, পরে মাথা তুলিয়া মাণিকলালকে বলিলেন, “মাণিকলাল, এ পত্রের কথা তুমি ছাড়া আর কে জানে ?” মাণিক। যাহারা জানিত, মহারাজ গােহামধ্যে তাহাদিগকে বধ করিয়া আসিয়াছেন। রাজা। উত্তম। তুমি গহে যাও। উদয়পরে আসিয়া আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিও। এ পত্রের কথা কাহারও সাক্ষাতে প্ৰকাশ করিও না । এই বলিয়া রাজসিংহ, নিকটে যে কয়টি স্বর্ণমাদ্রা ছিল, তাহা মাণিকলালকে দিলেন। মাণিকলাল প্ৰণাম করিয়া বিদায় হইলেন। V O V