পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী আকারেঙ্গিত ব্যতীত বিমলার সভ্যতা ও বাগবৈদগ্ধ এমন প্রসিদ্ধ ছিল যে, তাহা সামান্য পরিচারিকায় সম্পভাবে না। অনেকে এরােপ বলিতেন যে, বিমলা বহকাল মোগল সম্রাটের পরিবাসিনী ছিলেন। এ কথা সত্য, কি মিথ্যা, তাহা বিমলাই জানিতেন, কিন্তু কখন সে বিষয়ের কোন প্রসওগ করতেন না। বিমলা বিধবা, কি সধবা ? কে জানে ? তিনি অলঙ্কার পরিতেন, একাদশী করিতেন না। সধবার ন্যায় সকল আচরণ করতেন। s=nony 2 দৰ্গেশনন্দিনী তিলোত্তমাকে বিমলা যে আন্তরিক স্নেহ করিতেন, তাহার পরিচয় মন্দিরমধ্যে দেওয়া গিয়াছে। তিলোত্তমাও বিমলার তদ্রপ অন্যরাগিণী ছিলেন। বীরেন্দ্রসিংহের অপর • সমভিব্যাহারী অভিরাম স্বামী সব্বদা দাগমধ্যে থাকিতেন না। মধ্যে মধ্যে দেশপৰ্যটনে গমন করিতেন। দই এক মাস গড় মান্দারণে, দই এক মাস বিদেশ পরিভ্রমণে যাপন করিতেন। পরবাসী ও অপরাপর লোকের এইরােপ প্রতীতি ছিল যে, অভিরাম স্বামী বীরেন্দ্ৰসিংহের দীক্ষাগর; বীরেন্দ্ৰসিংহ তাঁহাকে যেরপে সম্পমান এবং আদর করিতেন, তাহাতে সেইরাপই সম্পভাবনা। এমন কি, সাংসারিক যাবতীয় কায্য অভিরাম স্বামীর পরামর্শ ব্যতীত করিতেন না ও গািরদত্ত পরামর্শও প্রায় সতত সফল হইত। বস্তুতঃ অভিরাম স্বামী বিহােদশী ও তীক্ষবিচ্ছিধসম্পন্ন ছিলেন; আরও নিজ ব্রতধৰ্ম্মে, সাংসারিক অধিকাংশ বিষয়ে রিপ, সংযত করা অভ্যাস করিয়াছিলেন; প্রয়োজন মতে রাগক্ষোভ্যাদি দমন করিয়া স্থির চিত্তে বিষয়ালোচনা করিতে পারিতেন। সে সর্থলে যে অধীর দাম্ভিক বীরেন্দ্ৰসিংহের অভিসন্ধি অপেক্ষা তাঁহার পরামর্শ ফলপ্ৰদ হইবে, আশ্চৰ্য্য কি ? বিমলা ও অভিরাম সবামী ভিন্ন আশামানি নাম্নী একজন দাসী বীরেন্দ্ৰসিংহের সঙেগ আসিয়াছিল। ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ অভিরাম স্বামীর মন্ত্রণা তিলোত্তমা ও বিমলা শৈলেশবরের মন্দির হইতে নিবিবাঘের দাগে প্রত্যাগমন করিলেন। প্রত্যাগমনের তিন চারি দিবস পরে বীরেন্দ্ৰসিংহ নিজ দেওয়ানখানায় মছনদে বসিয়া আছেন, এমন সময় অভিরাম স্বামী তথায় উপস্থিত হইলেন। বীরেন্দ্ৰসিংহ গাত্ৰোত্থানপকেবািক দন্ডবৎ হইলেন; অভিরাম স্বামী বীরোন্দ্রের হস্তগত কুশাসনোপরি উপবিভ্ৰাট হইলেন, অনািমতিক্ৰমে বীরেন্দ্ৰ পািনরাপবেশন করিলেন। অভিরাম স্বামী কহিলেন, “বীরেন্দ্র! অদ্য তোমার সহিত কোন বিশেষ কথা আছে।” অভিরাম স্বামী কহিলেন, “এক্ষণে মোগল পাঠানের তুমলে সংগ্রাম উপস্থিত।” বী। হাঁ; কোন বিশেষ গরতের ঘটনা উপস্থিত হওয়াই সম্পভব। অ। সম্ভব—এক্ষণে কি কত্তব্য স্থির করিয়াছ ? বীরেন্দ্র সন্দপে উত্তর করিলেন, “শত্ৰ উপস্থিত হইলে বাহবিলে পরাঙামাখ করিব।” পরমহংস অধিকতর মন্দভাবে কহিলেন, “বীরেন্দ্র! এ তোমার তুল্য বীরের উপযক্তি প্রত্যুত্তর; কিন্তু কথা এই যে, কেবল বীরত্বে জয়লাভ নাই; যথাননীতি সন্ধিবিগ্ৰহ করিলেই জয়লাভ। তুমি নিজে বীরগ্রগণ্য; কিন্তু তোমার সেনা সহস্রাধিক নহে; কোন যোদ্ধা সহস্ৰেক সেনা লইয়া শতগণ সেনা বিমাখ করিতে পারে ? মোগল পাঠান উভয় পক্ষই সেনা-বলে তোমার অপেক্ষা শতগণ বলবান ; এক পক্ষের সাহায্য ব্যতীত অপর পক্ষের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইতে পরিবে না। এ কথায় রন্ট হইও না, স্থিরচিত্তে বিবেচনা করি। আরও কথা এই যে, দই পক্ষেরই সহিত শত্রভাবে প্রয়োজন কি ? শত্র, তা মন্দ ; দাই শত্রর অপেক্ষা এক শত্র ভাল না ? অতএব আমার বিবেচনায় পক্ষাবলম্বন করাই উচিত।” করেন ?” অভিরাম সবামী উত্তর করিলেন, “যতো ধৰ্ম্মম সততো জয়ঃ-যে পক্ষ অবলম্বন করিলে অধৰ্ম্মম নাই, সেই পক্ষে যাও, রাজবিদ্রোহিতা মহাপাপ, রাজপক্ষ অবলম্বন কর।” WV ne