পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী সগোল বাহতে হীরকমন্ডিত তাড়; সগোল অঙ্গলিতে অঙ্গরীয়; সগোল উরতে মেখলা; সংগঠন অংসোপরে সবর্ণহার, সংগঠন কন্ঠে রত্নকন্ঠী ; সব্বত্রের গঠন সন্দির। তিলোত্তমা একাকিনী কক্ষবাতায়নে বসিয়া কি করিতেছেন ? সায়াহ গগনের শোভা নিরীক্ষণ করিতেছেন ? তাহা হইলে ভূতলে চক্ষ কেন ? নদীতীরজ কুসমসবাসিত বায় সেবন করিতেছেন ? তাহা হইলে ললাটে বিন্দ বিন্দ ঘন্ম হইবে কেন ? মাখের এক পাশেব ব্যতীত ত বায় লাগিতেছে না। গোচারশ দেখিতেছেন ? তাও নয়, গাভীসকল ত ক্ৰমে ক্ৰমে গহে আসিল । কোকিল-রব শানিতেছেন ? তবে মািখ এত মালান কেন ? তিলোত্তমা কিছই দেখিতেছেন না, শনিতেছেন না, চিন্তা করিতেছেন। দাসীতে প্ৰদীপ জবালিয়া আনিল। তিলোত্তমা চিন্তা করিয়া একখানা -পািস্তক লইয়া প্রদীপের কাছে বসিলেন। তিলোত্তমা পড়িতে জানিতেন; অভিরাম স্বামীর নিকট সংস্কৃত পড়িতে শিখিয়াছিলেন। পস্তকখানি কাদম্বরী। কিয়ৎক্ষণ পড়িয়া বিরক্তি প্রকাশ করিয়া কাদম্বরী পরিত্যাগ করিলেন। আর একখানা পস্তক আনিলেন ; সবন্ধকৃত বাসবদত্তা; কখন পড়েন, কখন ভাবেন, আর বার পড়েন ; আর বার অন্যমনে ভাবেন : বাসবদত্তাও ভাল লাগিল না। তাহা ত্যাগ করিয়া গীতগোবিন্দ পড়িতে লাগিলেন ; গীতগোবিন্দ কিছশক্ষণ ভাল লাগিল, পড়িতে পড়িতে সলজজ, ঈষৎ হাসি হাসিয়া পস্তক নিক্ষেপ করিলেন। পরে নিম্নকক্ষমা হইয়া শয্যার উপর বসিয়া রহিলেন। নিকটে একটা লেখনী ও মসীপত্র ছিল ; অন্যমনে তাহা লইয়া পালঙেকর কাঠে এ ও তা “ক” “স” “মা” ঘর, দাবার, গাছ, মানষে ইত্যাদি লিখিতে লাগিলেন; ক্ৰমে ক্ৰমে খাটের এক বাজ কালির চিহ্নে পরিপািণ হইল ; যখন আর স্থান নাই, তখন সে বিষয়ে চেতনা হইল। নিজ কায্য দেখিয়া ঈষৎ হাস্য করিলেন; আবার কি লিখিয়াছেন, তাহা হাসিতে হাসিতে পড়িতে লাগিলেন। কি লিখিয়াছেন ? “বাদবদত্তা", “মহাশোবতা,” “ক” “ঈ” “ই" “প,” একটা ব্যক্ষ, সে জাতির শিব, “গীতগোবিন্দ,” “বিমলা,” লতা, পাতা, হিজি, বিজি, গড়— সব্বনাশ, আর কি লিখিয়াছেন ?—“কুমার জগৎ সিংহ।” লক্সজায় তিলোত্তমার মািখ রক্তবর্ণ হইল। নিববন্ধিা! ঘরে কে আছে যে লজজা ? ‘কুমার জগৎ সিংহ।" তিলোত্তম দাইবার, তিনবার, বহবার পাঠ করিলেন ; দবারের দিকে চাহেন আর পাঠ করেন; পনেকবার চাহেন আর পাঠ করেন, যেন চোর চুরি করিতেছে। বড় অধিকক্ষণ পাঠ করিতে সাহসী হইল না, কেহ আসিয়া দেখিতে পাইবে । অতি ব্যাস্তে জল আনিয়া লিপি ধৌত করিলেন ; ধৌত করিয়া মনঃপত হইল না ; বস্ত্ৰ দিয়া উত্তম করিয়া মছিলেন; আবার পড়িয়া দেখিলেন, কালির চিহ্ন মাত্র নাই; তথাপি বোধ হইল, যেন এখনও পড়া যায়; আবার জল আনিয়া ধাইলেন, আবার বস্ত্ৰ দিয়া মছিলেন, তথাপি বোধ হইতে লাগিল, যেন লেখা রহিয়াছে——“কুমার জগৎসিংহ।” অভটম পরিচ্ছেদ ঃ বিমলার মন্ত্রণা বিমলা অভিরাম স্বামীর কুটনীরমধ্যে দণ্ডডায়মান আছেন। অভিরাম স্বামী ভূমির উপর যোগাসনে বসিয়াছেন। জগৎ সিংহের সহিত যে প্রকারে বিমলা ও তিলোত্তমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল বিমলা তাহা আদ্যোপােন্ত অভিরাম স্বামীর নিকট বর্ণনা করিতেছিলেন : বর্ণনা সমাপত করিয়া কহিলেন, “আজ চতুৰ্দশ দিবস ; কাল পক্ষ পণ্য হইবেক ।” অভিরাম স্বামী কন্সিলেন, “এক্ষণে কি সিথর করিয়াছ ?” বিমলা উত্তর করিলেন, “উচিত পরামশ জন্যই আপনার কাছে আসিয়াছি।” স্বামী কহিলেন, “উত্তম, আমার পরামর্শ এই যে, এ বিষয় আর মনে সােথান দিও না।" বিমলা অতি বিষগ্ন বদনে নীরব হইয়া রহিলেন। অভিরাম সৰ্ব্বৱামী জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিষন্ন হইলে কেন ?” বিমলা কহিলেন, “তিলোত্তমার কি উপায় হইবে ?” অভিরাম স্বামী সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ? তিলোত্তমার মনে কি অনােরাগ সণ8ার হইয়াছে ?” বিমলা কিয়ৎকাল নীরবে থাকিয়া কহিলেন, “আপনাকে কত কহিব ! আমি আজ চোঁদ দিন (ხე 8