পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ নিম্পমাল উত্তর করিল, “আমি উদয়পরের রাজমহিষীর দাঁতী। চিঠি লইয়া আসিয়াছি।” উদিপরেী বলিল, “না। না। তুমি ফাসী মালকের বাদশাহ। মোগল বাদশাহের হাত হইতে আমাকে কাড়িয়া লইতে আসিয়ােছ।” নিৰ্ম্মলকুমারী, হাসি সামলাইয়া চঞ্চলের পত্ৰখানি উদিপরেীর হাতে দিল। উদিপরী তাহা পড়িবার ভাণ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “কি লিখিতেছে ? লিখিতেছে, “অয় নাজনী ! পিয়ারী মেরে! তোমার সরৎ ও দৌলত শনিয়া আমি একেবারেই বেহোস ও দেওয়ানা হইয়াছি। তুমি শীঘ্ৰ আসিয়া আমার কলিজা ঠান্ডা করিবে।” আচ্ছা, তা করিব। হাজারের সঙ্গে আলবৎ যাইব । আপনি একটা অপেক্ষা করােন—আমি একটি শরাব খাইয়া লই। আপনি একট, শরাব মোেলাহেজা করিবেন ? আচ্ছা শরাব! ফেরেঙ্গের এলাচি ইহা নজর দিয়াছে। এমন শরাব আপনার মািলকেও পয়দা হয় না।” উদিপরেী পিয়ালা ম্যুখে তুলিলেন, সেই অবসরে নিম্মলকুমারী বহির্গত হইয়া যোধপরী বেগমের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। এবং যোধপরীর জিজ্ঞাসামত যেমন যেমন ঘটিয়াছিল, তাহা বলিল। শনিয়া যোধপরী বেগম হাসিয়া বলিল, “কাল পত্ৰখানা ঠিক হইয়া পড়িবে।” তুমি এই বেলা পলয়ন কর। নচেৎ কাল একটা গান্ডগোল হইতে পারে। আমি তোমার সঙ্গে একজন বিশবাসী খোজা দিতেছি । সে তোমাকে মহালের বাহির করিয়া তোমার স্বামীর শিবিরে পৌছাইয়া দিবে। সেখানে যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন কাহাকেও পাও, তার সঙ্গে আজই দিল্লীর বাহিরে চলিয়া যাইও । যদি শিবিরের কাহাকেও না পাও, তবে ইহার সঙ্গে দিল্লীর বাহিরে যাইও । তোমার স্বামী বোধ হয়, দিল্লী ছাড়াইয়া কোথাও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। পথে তাঁহার সঙ্গে যদি সাক্ষাৎ না হয়, তাহা হইলে এই খোজাই তোমাকে উদয়পর পয্যন্ত রাখিয়া আসিবে। খরচ-পত্ৰ তোমার কাছে না থাকে, তবে তাহাও আমি দিতেছি। কিন্তু সাবধান!! আমি ধরা না পড়ি।” নিৰ্ম্মল বলিল, “হজরৎ সে বিষয়ে নিশিচন্ত থাকুন। আমি রাজপতের মেয়ে।” তখন যোধপরী বন্যাসী নামে তাঁহার বিশ্ববাসী খোজাকে ডাকাইয়া যাহা করিতে হইবে, তাহা বঝাইয়া বলিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখনই যাইতে পরিবে ত?” বন্যাসী বলিল, “তা পারিব। কিন্তু বেগম সাহেবার দস্তখতি একখানা পরওয়ানা না পাইলে এত করিতে সাহসী হইতেছে না।” যোধপরবী তখন বলিলেন, “য্যেরপ পরওয়ানা চাহি, লিখাইয়া আন, আমি বেগম সাহেবার দস্তখত করাই তেছি।” খোজা পরওয়ানা লিখাইয়া আনিল। তাহা সেই তাতারী প্রহরিণীর হাতে দিয়া রাজমহিষী বলিলেন, “ইহাতে বেগম সাহেবার দস্তখত করাইয়া আন ৷” প্ৰহারিণী জিজ্ঞাসা করিল, “যদি জিজ্ঞাসা করে, কিসের পরওয়ানা ?” যোধপরানী বলিলেন, “‘বলিও, “আমার কোতলের পরওয়ানা’। কিন্তু কালি কলম লইয়া যাইও । আর পাঞ্জা ছেপাত করিতে ভুলিও না।” প্রহরিণী কালি কলম সহিত পরওয়ানা লইয়া গিয়া জেব-উন্নিসার কাছে ধরিল। জেবউন্নিসা পবিবর্তভাবাপন্ন, জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের পরওয়ানা।” প্রহরণী বলিল, “আমার কোতলের পরওয়ানা।” জেব। কি চুরি করেছিস ? প্ৰহারিণী। হজরৎ উদিপরেী বেগমের পেশওয়াজ। জেব। আচ্ছা করেছিস-কোতলের পর পরিস। এই বলিয়া বেগম সাহেবা পরওয়ানা দস্তখত করিয়া দিলেন। প্রহরিণী মোহর ছেপাত করিয়া, যোধপরী বেগমকে আনিয়া দিল। বন্যাসী সেই পরওয়ানা এবং নিম্পমলিকে লইয়া যোধপরী মহাল হইতে যাত্ৰা করিল। নিৰ্ম্মলকুমারী অতি প্ৰফল্লামনে খোজার সঙ্গে চলিলেন * কিন্তু সহসা সে প্রফােল্লতা দরি হইল-রঙমহলের ফটকের নিকট আসিয়া খোজা ভীত, সন্তম্পিভত হইয়া দাঁড়াইল । বলিল, “কি বিপদ! পালাও ! পালাও!” এই বলিয়া খোজা উদ্ধৰ্ব্বশবাসে পলাইল। VCS