পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ স্রোতস্বতী, ক্ষদ্র সৈকত ডুবাইতে যায়, তেমনই মহাকোলাহলে, মহাবেগে, এই পরিমােণরহিতা অসংখ্যেয়া, বিস্ময়করী মোগলবাহিনী রাজসিংহের রাজ্য ডুবাইতে চলিল। কিন্তু হঠাৎ একটা প্রতিবন্ধক উপস্থিত হইল। যে পথে আকবর সৈন্য লইয়া গিয়াছিলেন, ঔরঙ্গজেবও সে পথে সৈন্য লইয়া যাইতেছিলেন। অভিপ্রায় এই যে, আককবর শাহের সৈন্যের সঙ্গে নিজ সৈন্য মিলিত করিবেন। মধ্যে যদি কুমার জয়সিংহের সৈন্য পান, তবে তাঁহাকে মাঝে ফেলিয়া টিপিয়া মারিবেন, পরে দই জনে উদয়পর প্রবেশ করিয়া রাজ্য ধবংস করিবেন। কিন্তু পাকবত্য পথে আরোহণ করিবার পাবেব সবিস্ময়ে দেখিলেন যে, রাজসিংহ উদ্ধের পববতের উপত্যকায় তাঁহার পথের পাশে বা সৈন্য লইয়া বসিয়া আছেন। রাজসিংহ নয়ননামা গিরিসঙকটে পাববত্য পথ রোধ করিয়াছিলেন, কিন্তু অতি দ্রুতগামী দন্তমখে আককবরের সংবাদ শনিয়া, রণাপাণিডত্যের অদভুত প্রতিভার বিকাশ করিয়া আমিষলোলািপ শোনপক্ষীর মত দ্রুতবেগে সেনা সহিত পর্ব পরিচিত পাব্বিত্যপথ অতিক্ৰম করিয়া এই গিরিসান দেশে সসৈন্যে উপবিভ্ৰাট হইয়াছিলেন। মোগল দেখিল, রাজসিংহের এই অদভুত রণাপাণিডত্যে তাহাদিগের সববনাশ উপস্থিত। কেন না, মোগলেরা যে পথে যাইতেছিল, সে পথে আর চলিলে রাজসিংহকে পাশেব রাখিয়া যাইতে হয়। শত্র সৈন্যকে পাশে বর্ণ রাখিয়া যাওয়ার অপেক্ষা বিপদ অলপই আছে। পশিব হইতে যে আক্ৰমণ করে, তাহাকে রণে বিমখ করা যায় না, সেই জয়ী হইয়া বিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করিয়া ফেলে। সালামাণ্ডকা ও ঔস্তরলিজে ইহাই ঘটিয়াছিল। ঔরঙ্গজেবও এ সম্ভবতঃসিদ্ধ রণতত্ত্ব জানিতেন। তিনি ইহাও জানিতেন যে, পাশবস্থিত শত্রাব সঙ্গে যন্ধ করা যায় বটে, কিন্তু তাহা করিতে গেলে নিজ সৈন্যকে ফিরাইয়া শত্রর সম্পমািখবত্তীর্ণ করিতে হয়। এই পাৰ্ব্বত্য পথে তােদশ মহতী সেনা ফিরাইবার ঘরাইবার স্থান নাই, এবং সময়ও পাওয়া যাইবে না। কেন না, সেনার মািখ ফিরাইতে না ফিরাইতে রাজসিংহ পৰ্ব্ববত হইতে অবতরণপাকবািক তাঁহার সেনা দাই খন্ডে বিভক্ত করিয়া, এক এক খন্ড পথিক করিয়া বিনম্ৰাট করিতে পারেন। এরােপ যন্ধে সাহস করা অকৰ্ত্তব্য। তার পর এমন হইতে পারে, রাজসিংহ যন্ধ না করিতেও পারেন। নিবিবাঘের ঔরঙ্গজেবকে যাইতে দিতেও পারেন। তাহা হইলে আরও বিপদ। তাহা হইলে ঔরঙ্গজেব চলিয়া গেলে রাজসিংহ পৰ্ব্ববতাবিতরণ করিয়া ঔরঙ্গজেবের পশ্চাদগামী হইবেন । হইলে, তিনি যে মোগলের পশ্চাদবত্তীর্ণ মাল, আসবাব লটপাট ও সেনাধবংস করিবেন, সেও ক্ষদ্র কথা। আসল কথা, রসদের পথ বন্ধ হইবে । সম্মখে কুমার জয়সিংহের সেনা। রাজসিংহের সেনা ও জয়সিংহের সেনা উভয়ের মধ্যে পড়িয়া, ফাঁদের ভিতর প্রবিভ্ৰাট মষিকের মত, দিল্লীর বাদশাহ সসৈন্যে নিহত হইবেন। ফলে দিল্লীশবরের অবস্থা জাল নিবন্ধ রোহিতের মত,-কোেন মতেই নিস্তার নাই। তিনি প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতে পারেন, কিন্তু তােহা হইলে রাজসিংহ তাঁহার পশ্চাদবত্তীর্ণ হইবেন। তিনি উদয়পরের রাজ্য অতল জলে ডুবাইতে আসিয়াছিলেন—সে কথা দরে থাকুক, এখন উদয়পরের রাজা তাঁহার পশ্চাৎ করতালি দি৩্যে দিতে ছটিবে-পথিবী হাসিবে। মোগল বাদশাহের অপরিমিত গৌরবের পক্ষে ইহার অপেক্ষা অবনতি আর কি হইতে পারে ? ঔরঙগজেব ভাবিলেন—সিংহ হইয়া মষিকের ভযে পলাইব ? কিছতেই পলায়নের কথাকে মনে সথান দিলেন না। তখন আর কি হইতে পারে ? এক মাত্র ভরসা।--উদয়পরে যাইবার যদি অন্য পথ থাকে। ঔরঙ্গজেবের আদেশে চারি দিকে অৰ্শবারোহী পদাতি অন্য পথের সন্ধানে ছটিল। ঔরঙ্গজেব নিৰ্ম্মলকুমারীকেও জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইল। নিৰ্ম্মলকুমারী বলিল, “আমি পরদােনশীন সত্ৰীলোক-পথের কথা আমি কি জানি ?” কিন্তু অলপকাল মধ্যে সংবাদ আসিল যে, উদয়পরে যাইবার আর একটা পথ আছে। একজন মোগল সওদাগরের সাক্ষাৎ পাওয়া গিয়াছে, সে পথ দেখাইয়া দিবে। একজন মনসবদার সে পথ দেখিয়া আসিয়াছে। সে একটি পাববত্য রন্ধ্রুপথ: অতিশয় সঙ্কীর্ণ। কিন্তু পথটা সোজা পথ, শীঘ্ৰ বাহির হওযা যাইবে। সে দিকে কোন রাজপত দেখা যাইতেছে না। যে মোগল সংবাদ দিয়াছে, সে বলিতেছে যে, সে দিকে কোন রাজপত সেনা নাই। ঔরঙ্গজেব ভাবিলেন। বলিলেন, “নাই, কুিন্তু লাকাইয়া থাকিতে পারে।” V95 G