পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ ঃ মবারক ও দরিয়া ভস্মীভূত গোপীনাথ রাঠোর, বিক্ৰম সোলাণ্ডিক, এবং মাণিকলাল দিলীর খাঁর ধবংসাকাঙক্ষায় চলিলেন। যে পথে দিলীর খাঁ আসিতেছেন, সেই পথে তিন স্থানে তিন জন লক্কায়িত রহিলেন। কিন্তু পরস্পরের অনতিদারেই রহিলেন। বিক্ৰম সোলাণ্ডিক অৰ্শবারোহী সৈন্য লইয়া আসিয়াছিলেন, কাজেই তিনি উচ্চ সান দেশে থাকিতে পারিলেন না। তিনি পৰ্ব্বতবাসী হইলেও তাঁহাকে অশব রাখিতে হইত : তাহার কারণ, তদ্ব্যতীত নিম্নভূমিনিবাসী শত্র ও দস্যুর পশ্চাদ্ধাবিত হইতে পারিতেন না। আর এমন সকল ক্ষদ্র রাজগণ, রাত্রিকালে সংযোগ পাইলে, নিজে নিজেও এক আধটা ডাকাতি--- অর্থাৎ এক রাত্ৰিতে দশ পাঁচখানা গ্ৰাম লগঠন না করিতেন, এমন নহে। পৰ্ব্বব্যুতের উপর তাঁহার সৈনিকেরা আশব ছাড়িয়া পদাতিকের কাজ করত। এক্ষণে মোগলের পশ্চাদন সরণ করিতে হইবে বলিয়া, বিব্রুমসিংহ অশািব লইয়া আসিয়াছিলেন। পাববত্য যন্ধে তাহাতে আসবিধা হইল। অতএব তিনি পর্ববর্ততে না উঠিয়া অপেক্ষাকৃত সমতলভূমির অন্বেষণ করিলেন। মনোমত সেরাপ কিছ ভূমি পাইলেন। তাহার সম্মখে কিছ, বন-জঙ্গল আছে। জঙগলের পশ্চাৎ তাঁহার অশবারোহিগণকে শ্রেণীবদ্ধ করিয়া রাখিলেন। তিনি সৰবৰ্ণাগ্রবত্তী হইয়া রহিলেন। তৎপরে মাণিকলাল রাজসিংহের পদাতিকগণ লইয়া লক্কায়িত হইল। সৰ্ব্ববশেষে গোপীনাথ রাঠোর রহিলেন । দিলীর খাঁ আকবরের দন্দদশা স্মরণ করিয়া, একটা সতকভাবে আসিতেছিলেন—অগ্ৰে অগ্ৰে অৰ্শবারোহী পাঠাইয়া সন্ধান লইতেছিলেন যে, রাজপত কোথাও লাকাইয়া আছে কি না। অতএব বিক্ৰম সোলাণ্ডিকর আশাবারোহিগণের সন্ধান, তাঁহাকে সহজে মিলিল। তিনি তখন কতকগলি সৈন্য, অশবারোহীদিগকে তাড়াইয়া দিবার জন্য পাঠাইয়া দিলেন। বিক্ৰম সোলাণ্ডিক অন্যান্য বিষয়ে বড় সস্থলবন্ধি, কিন্তু যাদ্ধকালে অতিশয় ধত্তি এবং রণপন্ডিত—অনেক সময়ে ধত্তি তাই রণাপান্ডিত্য—তিনি মোগল সেনার সঙ্গে অতি সামান্য যাদ্ধ করিয়া সরিয়া পড়িলেনদিলীর খাঁর মন্ডপাত করিবার জন্য। দিলীর মাণিকলালকে অতিক্ৰম করিয়া চলিলেন। মাণিকলাল যে পাশে বা লক্কায়িত আছে, তাহা তিনিও জানিতে পারিলেন না-মাণিকলােলও কোন সাড়া শবদ করিল না। সোলাণ্ডিককে তাড়াইয়া দিলীর বিবেচনা করিয়াছিলেন, সব রাজপতেই হঠিয়াছে – অতএব আর পািকব বৎ ಟ್ಗ:* সহিত চলিতেছিলেন না। মাণিকলাল বঝিল, এ উপযন্ত সময় নহে!—সেও স্থির রােহ ল । পরে, যথায় গোপীনাথ রাঠোর লক্কায়িত, তাহারই নিকট দিলীর উপস্থিত। সেখানে পৰবতমধ্যস্থ পথ অতি সঙকীণী হইয়া আসিয়াছে। সেইখানে সেনার মাখ উপস্থিত হইলে, গোপীনাথ রাঠোর লাফ দিয়া তাহাব উপর পাড়িয়া, বাঘ যেমন পথিকের সম্মখে থাবা পাতিয়া বসে, সেইরােপ সসৈন্যে বসিলেন। দিলীর, মবারককে আজ্ঞা করিলেন, “সম্পমািখবত্তী সেনা লইয়া ইহাদিগকে তাড়াইয়া দাও।” মবারক অগ্রসর হইলেন। কিন্তু গোপীনাথ রাঠোরকে তাড়াইবার তার সাধ্য কি ? সঙ্কীর্ণ পথে অলপ মোগলই দাঁড়াইতে পারিল । যেমন গত্ত হইতে পিপীলিকা বাহির হইবার সময়ে, বালকে একটি একটি করিয়া টিপিয়া মারে, তেমনই রাজপতেরা মোগলদিগকে সঙ্কীর্ণ পথে টিপিয়া মারিতে লাগিল। এ দিকে দিলীর, সম্পমাখে পথ না পাইয়া, সেনা লইয়া নিশাচল হইয়া মধ্যপথে দাঁড়াইয়া রহিলেন । মাণিকলাল বঝিল, এই উপযক্ত সময় । সে সসৈন্য পৰ্ব্ববতাবতরণ করিয়া বজের ন্যায় দিলীরের উপর পড়িল। দিলীর খাঁর সেনা প্রাণপণ করিয়া যাদ্ধ করিতে লাগিল। কিন্তু এই সময়ে বিক্ৰম সোলাণ্ডিক সেই দই হাজার অশবারোহী লইয়া হঠাৎ দিলীরের সৈন্যের পশ্চাদভাগে উপস্থিত হইলেন। তখন তিন দিকে আক্ৰান্ত হইয়া মোগল সেনা আর এক দণড তিsিঠল না। যে পারিল, সে পলাইয়া বাঁচিল । অধিকাংশই পলাইবার পথ পাইল না—-কৃষকের অস্ত্রের নিকট ধান্যের ন্যায় ছিন্ন হইয়া রণক্ষেত্রে নিপতিত হইল। কেবল গোপীনাথ রাঠোরের সম্মখে কষজন মোগল যোদ্ধা কিছুতেই হঠিল না-মাতৃত্যুকে C S S