পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NDIዘመዘማዛየeItዕ ধীর। এই সৈন্য কই ? কাহাকে দেখিতে পাইতেছেন ? জীব । স্থানে সথানে সব বিশ্রাম করিতেছে, ডাণ্ডকা দিলে অবশ্য পাওয়া যাইবে। ধীর। এক জনকেও পাইবেন না। সত্য । কেন ? ধীর। সবাই লাঠিতে বাহির হইয়াছে। গ্রামসকল এখন অরক্ষিত। মসলমানের গ্রাম আর রেশমের কুঠি লাঠিয়া সকলে ঘরে যাইবে। এখন কাহাকেও পাইবেন না। আমি খাজিয়া আসিয়াছি। সত্যানন্দ বিষন্ন হইলেন, বলিলেন, “যাই হউক, এ প্রদেশ সমস্ত আমাদের অধিকৃত হইল। এখানে আর কেহ নাই যে, আমাদের প্রতিদ্বন্দরী হয়। অতএব বরেন্দ্রভূমিতে তোমরা সন্তানরাজ্য প্রচার কর । প্রজাদিগের নিকট হইতে কর আদায় কর এবং নগর অধিকার করিবার জন্য সেনা সংগ্রহ কর । হিন্দরে রাজ্য হইয়াছে শনিলে, বহতর সেনা সন্তানের নিশান উড়াইবে।” তখন জীবানন্দ প্রভৃতি সত্যানন্দকে প্ৰণাম করিয়া বলিলেন, “আমরা প্ৰণাম করিতেছি—হে মহারাজাধিরাজ ! আজ্ঞা হয় তা আমরা এই কাননেই আপনার সিংহাসন সথাপিত করি।” সত্যানন্দ তাঁহার জীবনে এই প্রথম কোপ প্রকাশ করিলেন। বলিলেন, “ছি! আমায় কি শান্য কুম্ভ মনে করা ? আমরা কেহ রাজা নাহি—আমরা সন্ন্যাসী । এখন দেশের রাজা বৈকুণ্ঠনাথ স্বয়ং। নগর অধিকার হইলে, যাহার শিরে তোমাদিগের ইচ্ছা হয়, রাজমকুট পরাইও, কিন্তু ইহা নিশ্চিত জানিও যে, আমি এই ব্ৰহ্মচৰ্য্য ভিন্ন আর কোন আশ্রমই সস্বীকার করিব না। এক্ষণে তোমরা সব সব কমে যাও ।” তখন চারি জনে ব্রহ্মচারীকে প্ৰণাম করিয়া গাত্র্যোেথান করিলেন। সত্যানন্দ তখন অন্যের অলক্ষিতে ইঙিগত করিয়া মহেন্দ্রকে রাখিলেন। আর তিন জন চলিয়া গেলেন, মহেন্দ্র রহিলেন । সত্যানন্দ তখন মহেন্দুকে বলিলেন, “তোমরা সকলে বিষ্ণমন্ডপে শপথ করিয়া সন্তানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলো। ভবানন্দ ও জীবানন্দ দাই জনেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিয়াছে, ভবানন্দ আজ তাহার স্বীকৃত প্ৰায়শ্চিত্ত করিল, আমার সব্বদা ভয় কোন দিন জীবানন্দ প্রায়শ্চিত্ত করিয়া দেহ বিসঙ্জন করে। কিন্তু আমার এক ভরসা আছে, কোন নিগঢ়ি কারণে সে এক্ষণে মরিতে পরিবে না। তুমি একা প্ৰতিজ্ঞা রক্ষা করিয়াছ। এক্ষণে সন্তানের কায্যোদ্ধার হইল ; প্রতিজ্ঞা ছিল যে, যতদিন না। সন্তানের কায্যোদ্ধার হয়, ততদিন তুমি সত্ৰী কন্যার মখদশন করিবে না। এক্ষণে কায্যোদ্ধার হইয়াছে, এখন আবার সংসারী হইতে পাের।” মহেন্দ্রের চক্ষে দরদরিত ধারা বহিল। মহেন্দ্ৰ বলিলেন, “ঠাকুর, সংসারী হইব কাহাকে লইয়া ? সত্ৰী ত আত্মঘাতিনী হইয়াছেন, আর কন্যা কোথায় যে, তা ত জানি না, কোথায় বা সন্ধান পাইব ? আপনি বলিয়াছেন, জীবিত আছে। ইহাই জানি, আর কিছ জানি না।” সতানন্দ তখন নবীনানন্দকে ডাকিয়া মহেন্দ্রকে বলিলেন, “ইনি নবীনানন্দ গোস্বামী— অতি পবিত্ৰচেতা, আমার প্রিয়শিষ্য। ইনি তোমার কন্যার সন্ধান বলিয়া দিবেন।” এই বলিয়া সতানন্দ শান্তিকে কিছ. ইতিগত করিলেন। শান্তি তাহা বঝিয়া প্ৰণাম করিয়া বিদায় হয়, তখন মহেন্দ্ৰ বলিলেন, “কোথায় তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবে ?” শানিত বলিল, “আমার আশ্রমে আসনে ৷” এই বলিয়া শান্তি আগে আগে চলিল । তখন মহেন্দ্ৰ ব্ৰহ্মচারীর পাদবিন্দনা করিয়া বিদায় হইলেন এবং শান্তির সঙ্গে সঙ্গে তাহার আশ্রমে উপস্থিত হইলেন। তখন অনেক রাত্রি হইয়াছে। তথাপি শান্তি বিশ্রাম না করিয়া নগরাভিমখে যাত্ৰা করিল। সকলে চলিয়া গেলে ব্রহ্মচারী, একা ভূমে প্ৰণত হইয়া, মাটিতে মস্তক সংস্থাপন করিয়া মনে মনে জগদীশবারের ধ্যান করিতে লাগিলেন। রাত্রি প্রভাত হইয়া আসিল । এমন সময়ে কে আসিয়া তাঁহার মস্তক সপশ করিয়া বলিল, “আমি আসিয়াছি।” ব্ৰহ্মচারী উঠিয়া চমকিত হইয়া অতি ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “আপনি আসিয়াছেন ? কেন ?” যে আসিয়াছিল। সে বলিল, “দিন পর্ণ হইয়াছে।” ব্ৰহ্মচারী বলিলেন, “হে প্ৰভু! আজি ক্ষমা করন । আগামী মাঘী পাণি মায় আমি আপনার আজ্ঞা পালন করিব।” Գ Գ (է