পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী —নইলে আর খাইব না। তুমি চেয়ে চিন্তে যে প্রকারে পাের, আনিয়া খাও । খাইয়া আমাকে সঙ্গে করিয়া শবশরিবাড়ী রাখিয়া আইস। মা। সে কি মা! তাও কি হয় ? 8 । ,कन् श् न् का ? মা। না নিতে এলে কি শবশঙ্কুরবাড়ী যেতে আছে ? প্রা। পরের বাড়ী চেয়ে খেতে আছে, আর না নিতে এলে আপনার শবশরিবাড়ী যেতে নেই ? মা । তারা যে কখনও তোমার নাম করে না | প্রা। না করােক-তাতে আমার অপমান নাই। যাহাঁদের উপর আমার ভরণপোষণের ভার, তাহাদের কাছে অন্নের ভিক্ষা করিতে আমার অপমান নাই। আপনার ধন আপনি চাহিয়া খাইব-তােহাতে আমার লজজা কি ? মা চুপ করিয়া কাঁদিতে লাগিল। প্ৰফল্প বলিল, “তোমাকে একা রাখিয়া আমি যাইতে চাহিতাম না—আমার দঃখ ঘাঁচিলে তোমারও দঃখ কামবে, এই ভরসায় যাইতে চাহিতেছি।” মাতে মেয়েতে অনেক কথাবাৰ্ত্ত হইল। মা বঝিল যে, মেয়ের পরামর্শই ঠিক। তখন মা, যে কয়টি চাউল ছিল, তাহা রাঁধিল । কিন্তু প্ৰফল্প কিছতেই খাইল না। কাজেই তাহার মাতাও খাইল না। তখন বলিল, “তবে আর বেলা কাটাইয়া কি হইবে ? অনেক পথ ।” তাহার মাতা বলিল, “আয় তোর চুলটা বধিয়া দিই।” প্রফতুল্ল বলিল, “না, থাক।” মা ভাবিল, “থাক। আমার মেয়েকে সাজাইতে হয় না।” মেয়ে ভাবিল, “থাক। সেজে গজে কি ভুলাইতে যাইব ? ছি!” তখন দাই জনে মলিন বেশে গহ হইতে নিস্ক্রান্ত হইলেন। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ বরেন্দ্রভূমে ভূতনাথ নামে গ্রাম ; সেইখানে প্রফতুল্লমখীর শবশরিবাড়ী। প্রফল্পের দশা যেমন হউক, তাহার শবশীর হরবল্লভবাব খর্ব বড়মনিষ লোক। তাঁহার অনেক জমিদারী আছে, দোতালা বৈঠকখানা, ঠাকুরবাড়ী, নাটমন্দির, দপতরখানা, খিড়কিতে বাগান, পাকুর প্রাচীরে বেড়া। সে সস্থান প্রফতুল্লমখীর পিত্ৰালয় হইতে ছয় ক্লোশ। ছয় ক্লোশ পথ হাঁটিয়া মাতা ও কন্যা অনশনে বেলা তৃতীয় প্রহরের সময়ে সে ধনীর গহে প্রবেশ করিলেন। প্রবেশকালে প্রফল্পের মারা পা উঠে না। প্রফতুল্ল কাঙ্গালের মেয়ে বলিয়া যে হরিবল্লভবাব তাঁহাকে ঘণা করিতেন, তাহা নহে। বিবাহের পরে একটা গোল হইয়াছিল। হরিবল্লভ কাউগাল দেখিয়াও ছেলের বিবাহ দিয়াছিলেন। মেয়েটি পরমসন্দরী, তেমন মেয়ে আর কোথাও পাইলেন না, তাই সেখানে বিবাহ দিয়াছিলেন। এদিকে প্ৰফীল্লের মা, কন্যা বড়মানষের ঘরে পড়িল, এই উৎসাহে সব বসব ব্যয় করিয়া বিবাহ দিয়াছিলেন। সেই বিবাহতেই—তাঁর যাহা কিছ ছিল, ভস্ম হইয়া গেল। সেই অবধি এই অন্নের কাঙ্গাল। কিন্তু অদভটকমে সে সাধের বিবাহে বিপরীত ফল ফলিল। সৰ্ব্ববস্ব ব্যয় করিয়াও—সব সবই তার কত টাকা ?--সৰ্ব্বব্যািসব ব্যয় করিয়াও সে বিধবা সত্ৰীলোক সকল দিক কুলান করিতে পারিল না। বরযাত্ৰীদিগের লাচি মন্ডায়, দেশ কাল পাত্র বিবেচনায়, উত্তম ফলাহার করাইল। কিন্তু কন্যাযাত্ৰগণের কেবল চিড়া দই। ইহাতে প্রতিবাসী কন্যাযাত্রেরা অপমান বোধ করিলেন। তাঁহারা খাইলেন না-উঠিয়া গেলেন। ইহাতে প্রফল্লের মাের সঙ্গে তাঁহাদের কোন্দল বাঁধিল; প্রফল্লের মা বড় গালি দিল। প্রতিবাসীরা একটা বড় রকম শোধ লইল । পাকিসপশের দিন হরিবল্লভ বেহাইনের প্রতিবাসী সকলকে নিমন্ত্ৰণ করিলেন। . তাহারা কেহ গেল না—একজন লোক দিয়া বলিয়া পাঠাইল যে, যে কুলটা, জাতিভ্ৰমেটা, তাহার সঙ্গে হরিবল্লভবাবরে কুটবিতা করিতে হয় করােন, —বড়মানষের সব শোভা পায়, কিন্তু আমরা কাঙ্গাল গরিব, জােতই আমাদের সম্পবিল—আমরা জাতিভ্রস্টার কন্যার পাকিস্পশে জলগ্ৰহণ করিব না। সমবেত সভামধ্যে এই কথা প্রচার হইল। প্রফল্পের মা, একা বিধবা, মেয়েটি লইয়া ঘরে থাকে—তখন ԳՀ) Օ