পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७िकभ ब्रा5नावव्ली ফলমণিও সহজে স্বীকার করে। অতএব যে দিন প্রফল্পের মা মরিয়াছিল, সেই দিন অবধি প্রফল্লের বাড়ীতে ফলমণি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আসিয়া শোয়। তবে ফলমণি কি চরিত্রের লোক, তাহা ছেলেমানষে প্রফতুল্ল সবিশেষ জানিত না। ফুলমণি প্রফল্পের অপেক্ষা বয়সে দশ বছরের বড়। দেখিতে শনিতে মন্দ নয়, বেশ-ভূষায় একট, পারিপাটা রাখিত। একে ইতর জাতির মেয়ে, তাতে বাল্যবিধবা ; চরিত্রটা বড় খাঁটি রাখিতে পারে নাই। গ্রামের জমিদার পরাণ চৌধরিী। তাঁহার একজন গোমস্ত দলভ চক্ৰবত্তীর্ণ ঐ গ্রামে আসিয়া মধ্যে মধ্যে কাছারি করিত। লোকে বলিত, ফলমণি দলভের বিশেষ অন্যগহীতা—অথবা দলভি তাহার অন্যগহীত। এ সকল কথা প্রফুল্ল একেবারে যে কখনও শমনে নাই—তা নয়, কিন্তু কি করে—আর কেহ আপনার ঘর দাবার ফেলিয়া প্রফল্লের কাছে আসিয়া শাইতে চাহে না। বিশেষ প্ৰফল্ল মনে করিল, “সে মন্দ হোক, আমি না মন্দ হইলে আমায় কে মন্দ করিবে ?” অতএব, ফলমণি দই চারি দিন আসিয়া প্রফল্পের ঘরে শাইল। শ্রাদ্ধের পরদিন ফলমণি একটা দেরি করিয়া আসিতেছিল। পথে একটা আমগাছের তলায়, একটা বন আছে, আসিবার সময় ফলমণি সেই বনে প্রবেশ করিল। সে বনের ভিতর একজন পরিষে দাঁড়াইয়াছিল। বলা বাহাল্য যে, সে সেই দলভিচন্দ্র। চক্লবত্তীর্ণ মহাশয় কৃতাভিসারা, তাম্বলরাগরক্তাধরা, রাঙ্গাপেড়ে সাড়ীপরা, হাসিতে মািখভরা ফলমণিকে দেখিয়া বলিলেন, “কেমন, আজ ?” ফলমণি বলিলেন, “হাঁ, আজই বেশ। তুমি রাত্রি দর্পবের সময় পালিক নিয়ে এসো— দয়ারে টোকা মেরো। আমি দয়ার খালিয়া দিব। কিন্তু দেখো, গোল না হয়।” দলভি। তার ভয় নাই। কিন্তু সে ত গোল করবে না ? ফলমণি । তার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমি আস্তে আস্তে দোরটি খােলব, তুমি আস্তে আস্তে, সে ঘামিয়ে থাকতে থাকতে তার মািখটি কাপড় দিয়া চাপিয়া বাঁধিয়া ফেলিবে । তার পর চোঁচায় কার বাপের সােধ্য ! দলভি। তা, আমন জোর করে নিযে গেলে কয় দিন থাকিবে ? у ফল। একবার নিয়ে যেতে পারলেই হলো। যার তিন কুলে কেউ নেই, যে অন্ত্রের কাঙ্গাল, সে খেতে পাবে, কাপড় পাবে, গয়না পাবে, টাকা পাবে, সোহাগ পাবে—সে আবার থাকবে না ? সে ভার আমার—আমি যেন গায়ন টাকার ভাগ পাই । এইরনুপ কথাবাত্তা সমাপত হইলে, দলভি সাবস্থানে গোল—ফলমণি প্রফল্লের কাছে গেল। প্ৰফল্প এ সববনাশের কথা কিছই জানিতে পারে নাই। সে মার কথা ভাবিতে ভাবিতে শয়ন করিল। মার জন্য যেমন কাঁদে, তেমনি কাঁদিল ; কাঁদিয়া যেমন রোজ ঘামায়, তেমনি ঘামাইল । দই প্রহরে দলভি আসিয়া দবারে টােকা মারিল। ফলমণি দবার খলিল। দলভি প্রফল্লের মািখ বাঁধিয়া ধরাধরি করিয়া পালিকতে তুলিল। বাহকেরা নিঃশব্দে তাহাকে পরাণবাব জমিদারের বিহার-মন্দিরে লইয়া চলিল। বলা বাহাল্য, ফলমণি সঙ্গে সঙ্গে চলিল। ইহার অন্ধ দন্ড পরে ব্রজেশবের সেই শান্য গহে প্রফল্পের সন্ধানে আসিয়া উপস্থিত হইল। ব্রজেশবের সকলকে ল্যুকাইয়া রাত্রে পলাইয়া আসিয়াছে। হায়! কোথাও কেহ নাই। প্রফােল্লকে লইয়া বাহকেরা নিঃশবেদ চলিল বলিয়াছি; কেহ মনে না করেন—এটা ভ্ৰম-প্ৰমাদ ! বাহকের প্রকৃতি শবদ করা। কিন্তু এবার শবদ করার পক্ষে তাহদের প্রতি নিষেধ ছিল । শবদ করিলে গোলযোগ হইবে; তা ছাড়া আর একটা কথা ছিল। ব্ৰহ্মঠাকুরাণীর মাখে শনা গিয়াছে, বড় ডাকাতের ভয়। বাস্তবিক এরপে ভয়ানক দস্যুভীতি কখনও কোন দেশে হইয়াছিল কি না। সন্দেহ । তখন দেশ অরাজক। মসলমানের রাজ্য গিফাছে ; ইংরেজের রাজ্য ভাল করিয়া পত্তন হয় নাই—হইতেছে মাত্র । তাতে আবার বছর কত হইল, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে দেশ ছারখার করিয়া গিয়াছে। তার পর আবার দেবী সিংহের ইজারা। পথিবীর ওপারে ওয়েস্ট- মিনভােটর হলে দাঁড়াইয়া এদলেমন্দ বক সেই দেবী সিংহকে অমর করিয়া গিয়াছেন। পরুবাতোদগীৰ্ণ অগ্নিশিখাবৎ জলাময় বাক্যস্রোতে বক, দেবী সিংহের দর্বিষহ অত্যাচার অনন্তকালসমীপে পঠাইয়াছেন। তাঁহার নিজুমাখে। সে দৈববাণীতুল্য বাক্যপরম্পরা শনিয়া শোকে অনেক স্ত্রীলোক মচ্ছিত হইয়া পড়িয়াছিল--আজিও শত বৎসর পরে সেই বক্তৃতা পড়িতে গেলে শরীর লোমাণ্ডিত এবং হৃদয় উন্মত্ত হয়। সেই ভয়ুনক অত্যাচার বরেন্দ্ৰ-ভূমি ডুবাইয়া দিয়াছিল। t'O SR