পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী অনেকেই কেবল খাইতে পায় না। নয়, গহে পৰ্যন্ত বাস করিতে পায় না। যাহাঁদের খাইবার নাই, তাহারা পরের কাড়িয়া খায়। কাজেই এখন গ্রামে গ্রামে দলে দলে চোর ডাকাত। কাহার সাধ্য শাসন করে ? গৰুডল্যান্ড সাহেব রঙ্গপরের প্রথম কালেক্টর। ফৌজদারী তাঁহারই জিন্মা। তিনি দলে দলে সিপাহী ডাকাত ধরিতে পাঠাইতে লাগিলেন। সিপাহীরা কিছই করিতে পারিল না। অতএব দলিভের ভয়, তিনি ডাকাতি করিয়া প্ৰফল্লিকে লইয়া যাইতেছেন, আবার তার উপর ডাকাতে না ডাকাতি করে। পালিক দেখিয়া ডাকাতের আসা সম্পভব। সেই ভয়ে, বেহােরারা নিঃশবদ । গোলমাল হইবে বলিয়া সঙ্গে আর অপর লোকজনও নাই, কেবল দলভ নিজে আর ফলমণি। এইরপে তাহারা ভয়ে ভয়ে চারি ক্লোশ ছাড়াইল । তার পর ভারি জওগল আরম্ভ হইল। বেহােরারা সািভয়ে দেখিল, দই জন মানষি সম্পম খে আসিতেছে। রাত্রিকাল—কেবল নক্ষত্ৰলোকে পথ দেখা যাইতেছে। সতরাং তাহদের অবয়ব অস্পষ্ট দেখা যাইতেছিল। বেহােরারা দেখিল, যেন কালান্তক যমের মত দই মাত্তি আসিতেছে। একজন বেহােরা অপরদিগকে বলিল, “মানষে দটোকে সন্দেহ হয়!” অপর আর একজন বলিল, “রাত্রে যখন বেড়াচ্চে, তখন কি আর ভাল মানষে ?” তৃতীয় বাহক বলিল, “মানষে দটাে ভারি জোয়ান ।” 82 । श्I6ङ व्लाठेि ८लश्रीछ •ा ? ১ম । চক্লবত্তী মশাই কি বলেন ? আর তো এগোনো যায় না—ডাকাতের হাতে প্ৰাণটা যাবে। চক্লবত্তীর্ণ মহাশয় বলিলেন, “তাই ত, বড় বিপদ দেখি যে ! যা ভেবেছিলেম, তাই হলো!” এমন সময়ে, যে দই ব্যক্তি আসিতেছিল, তাহারা পথে লোক দেখিয়া হাঁকিল, “কোন হ্যায় রে ?” বেহােরারা অমনি পালিক মাটিতে ফেলিয়া দিয়া “বাবা গো” শবদ কারিয়া একেবারে জঙগলের ভিতর পলাইল। দেখিয়া দলভ চক্লবত্তীর্ণ মহাশয়ও সেই পথাবলম্বী হইলেন। তখন ফলমণি “আমায় ফেলে কোথা যাও ?” বলিয়া তাঁর পাছত পােছ ছটিল। যে দাই জন আসিতেছিল-যাহারা এই দশ জন মনষ্যের ভয়ের কারণ—তাহারা পথিক মাত্র । দই জন হিন্দ স্থানী দিনাজপরের রাজসরকারে চাকরির চেন্টায় যাইতেছে। রাত্ৰিপ্ৰভাত নিকট দেখিয়া সকালে সকালে পথ চলিতে আরম্ভ করিয়াছে। বেহােরারা পলাইল দেখিয়া তাহারা একবার খাব হাসিল। তাহার পর আপনাদের গন্তব্য পথে চলিয়া গেল। কিন্তু বেহােরারা, আর ফলমণি ও চক্লবত্তীর্ণ মহাশয় আর পাছ ফিরিয়া চাহিল না। প্রফল্পে পালিকতে উঠিয়াই মাখের বাঁধন স্বহস্তে খালিয়া ফেলিয়াছিল। রাত্রি দই প্রহরে চীৎকার করিয়া কি হইবে বলিয়া চীৎকার করে নাই; চীৎকার শনিতে পাইলেই বা কে তের সম্মখে আসিবে! প্রথমে ভয়ে প্রফতুল্ল কিছ আত্মবিস্মত হইয়াছিল, কিন্তু এখন প্ৰফল্লি সপভট বঝিল যে, সাহস না করিলে মাক্তিপ কোন উপায় নাই। যখন বেহােরার পালকী ফেলিয়া পলাইল, তখন প্রফতুল্ল বঝিল—আর একটা কি নািতন বিপদ।। ধীরে ধীরে পালকীর কপাট খলিল। অলপ মািখ বাড়াইয়া দেখিল, দাই জন মনষ্যে আসিতেছে। তখন প্ৰফল্লি ধীরে ধীরে কপাট বন্ধ করিল ; যে অলপ ফাঁক রহিল, তাহা দিয়া প্রফতুল্ল দেখিল, মনষ্যে দাই জন চলিয়া গেল। তখন প্রফতুল্ল পালিক হইতে বাহির হইল।--দেখিল, কেহ কোথাও নাই। প্ৰফল্লি ভাবিল, যাহারা আমাকে চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছিল, তাহারা অবশ্য ফিরিবে। অতএব যদি পথ ধরিয়া যাই, তবে ধরা পড়িতে পারি। তার চেয়ে এখন জগুগলের ভিতর লকাইয়া থাকি। তার পর, দিন হইলে যা হয় করিব। এই ভাবিয়া প্ৰফল্লি জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ কবিল। ভাগ্যক্ৰমে যে দিকে বেহােরারা পলাইয়াছিল, সে দিকে যায় নাই। সতরাং কাহারও সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ হইল না। প্রফতুল্ল জঙ্গলের ভিতর স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। অলপক্ষণ পরেই প্রভাত হইল। W প্রভাত হইলে প্ৰফল্লি বনের ভিতর এদিক ওদিক বেড়াইতে লাগিল। পথে বাহির হইতে এখনও সাহস হয় না। দেখিল, এক জায়গায় একটা পথের অসপন্সট রেখা বনের ভিতরের দিকে গিয়াছে। যখন পথের রেখা এদিকে গিয়াছে, তখন অবশ্য এদিকে মানষের বাস আছে। O O