দেবী চৌধরাণী অধঃপেতে মিনাসে—ওরে মেয়েমানষেকে ভুলিয়ে এনে—এমনি ক’রে কি ডাকাতের হাতে সাপে দিয়ে যেতে হয় রে মিনসে ?” শনিয়া দলভিচন্দ্ৰ ভাবিলেন, তবে নিশ্চিত ইহাকে ডাকাইতে ধরিয়াছে। অতএব দলভিচন্দ্র বিনাবাক্যব্যয়ে আরও বেগে ধাবমান হইলেন। ফলমণি ডাকিল, “ও অধঃপেতে—ও পোড়ার মাখো—ও আটকুড়ীর পত—ও হাবাতে-ও ড্যাকােরা-ও বিটালে।” ততক্ষণ দলভি আব্দশ্য হইল। কাজেই ফলমণিও গলাবাজি ক্ষান্ত দিয়া কাঁদিতে আরম্ভ করিল। রোদনকালে দালাভের মাতা-পিতার প্রতি নানাবিধ দোষারোপ করিতে লাগিল। এদিকে ফলমণি দেখিল, কই—ডাকাইতেরা ত কেহ আসিল না। কিছশক্ষণ দাঁড়াইয়া ভাবিল—কান্না বন্ধ করিল। শেষ দেখিল, না ডাকাইত আসে—না দলভিচন্দ্র দেখা দেয়। তখন জঙ্গল হইতে বাহির হইবার পথ খজিতে লাগিল। তাহার ন্যায় চতুরার পক্ষে পথ পাওয়া বড় কঠিন হইল না। সহজেই বাহির হইয়া সে রাজপথে উপস্থিত হইল। কোথাও কেহ নাই দেখিয়া, সে গাহাভিমখে ফিরিল। দলভের উপর তখন বড় রাগ। অনেক বেলা হইলে ফলমণি ঘরে পৌছিল। দেখিল, তাহার ভগিনী অলকমণি ঘরে নাই, স্নানে গিয়াছে। ফলমণি কাহাকে কিছ না বলিয়া কপাট ভেজাইয়া শয়ন করিল। রাত্রে নিদ্রা হয় নাই—ফলমণি শইবামাত্ৰ ঘামাইয়া পড়িল । তাহার দিদি আসিয়া তাহাকে উঠাইল—জিজ্ঞাসা করিল, “কি লা, তুই এখন এলি ?” ফলমণি বলিল, “কেন, আমি কোথায় গিয়াছিলাম ?” অলকমণি। কোথায় আর যাবি ? বামনদের বাড়ী শতে গিয়েছিলি, তা এত বেলা অবধি এলি না, তাই জিজ্ঞাসা করছি। ফল। তুই চোখের মাথা খেয়েছিস তার কি হবে ? ভোরের বেলা তোর সমখ দিয়ে এসে শলেম—দেখিস নে ? অলকমণি বলিল, “সে কি, বোন ? আমি তোর বেলা দেখে তিন বার বামনদের বাড়ী গিয়ে তোকে খাঁজে এলাম। তা তোকেও দেখলাম না-কাকেও দেখলাম না। হ্যাঁ লা! প্ৰফল্ল আজ কোথা গেছে লা ?” ফল। (শিহরিয়া) চুপ করা! দিদি চুপ! ও কথা মাখে আনিস না। আল। (সািভয়ে) কেন, কি হয়েছে ? ফল। সে কথা বলতে নেই। অল । কেন লা ? ফল। আমরা ছোট লোক—আমাদের দেবতা বামনের কথায় কাজ কি, বোন ? আল। সে কি ? প্ৰফল্লি কি করেছে ? ফল। প্ৰফল্প কি আর আছে ? আল। (পািনশাচ সভয়ে) সে কি ? কি বলিস ? ফল। (অতি অসফটস্বরে) কারও সাক্ষাতে বলিস নে—কাল তার মা এসে তাকে নিয়ে ८ी6िछ । ভগিনী । অ্যাঁ! অলকমণিব গা থর-থর করিয়া কাঁপিতে লাগিল। ফলমণি তখন এক আষাঢ়ে গলপ ফাঁদিল। ফলমণি প্ৰফীল্লের বিছানায় রাত্ৰি তৃতীয় প্রহরের সময়ে তার মাকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছিল। ক্ষণপরেই ঘরের ভিতর একটা ভারি ঝড় উঠিল—তার পর আর কেহ কোথাও নাই। ফলমণি মচ্ছি তা হইয়া দাঁতকপাটি লাগিয়া পড়িয়া রহিল। ইত্যাদি। ইত্যাদি। ফলমণি উপন্যাসের উপসংহারকালে দিদিকে বিশেষ করিয়া সাবধান করিয়া দিল, “এ সকল কথা কাহারও সাক্ষাতে বলিস না-দেখিসৱ, আমার মাথা খাস।” দিদি বলিলেন, “না গো ! এ কথা কি বলা যায় ?” কিন্তু কথিতা দিদি মহাশয়া তখন চাল ধইবার ছলে ধচুনি হাতে পল্লী-পরিভ্রমণে নিৰ্ম্মকান্ত হইলেন এবং ঘরে ঘরে উপন্যাসটি সালঙ্কার ব্যাখ্যা করিয়া, সকলকে সাবধান করিয়া দিলেন যে, দেখ, এ কথা প্রচার না হয়। কাজেই ইহা শীঘ্র প্রচারিত হইয়া রপান্তরে প্রফল্পের শবেশরিবাড়ী গেল। রংপান্তর কিরােপ ? পরে বলিব। Ե ՕԳ
