পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী দিন আমি তোমার পা টিপিয়া না দিই, তত দিন আমিও তোমার মািখ দেখিব না। যদি আমার এই প্ৰতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়, তবে আমি অব্রাহ্মণ।” তখন রাগে রাগে তিনটা হইয়া ফলিয়া ব্রজেশবের চলিয়া গেল। সাগর পা ছড়াইয়া কাঁদিতে বসিল। এমন সময়ে সাগর যে ঘরে বসিয়া কাঁদিতেছিল, সেই ঘরে একজন পরিচারিকা, ব্রজেশবের গেলে পর সাগরের কি অবস্থা হইয়াছে, ইহা দেখিবার অভিপ্ৰায়ে ভিতরে প্রবেশ করিল, ছতানাতা করিয়া দই একটা কাজ করিতে লাগিল। তখন সাগরের মনে পড়েল যে, জানােলা হইতে কে কথা কহিয়াছিল। সাগর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুই জানেলা হইতে কথা কহিয়াছিলি ?” সে বলিল, “কই না ?” সাগর বলিল, “তবে কে জানেলায় দেখা তাঁ।” তখন সাক্ষাৎ ভগবতীর মত রপবতী ও তেজস্বিনী একজন সত্ৰীলোক ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। সে বলিল, “জানালায় আমি ছিলাম।” সাগর জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে গা ?” তখন সে সত্ৰীলোক বলিল, “তোমরা কি কেউ আমায় চেন না ?” সাগর বলিল, “না—কে তুমি ?” তখন সেই সত্ৰীলোক উত্তর করিল, “আমি দেবী চৌধরাণী।” পরিচারিকার হাতে পানের বাটা ছিল, ঝন-ঝন করিয়া পড়িয়া গেল। সেও কাঁপিতে কাঁপিতে অ—িঅ—িআ-অাঁ শব্দ করিতে করিতে বসিয়া পড়িল। কাঁকালের কাপড় খসিয়া °ऎळ्न । দেবী চৌধরাণী তাহার দিকে ফিরিয়া বলিল, “চুপ রহো, হারামজ্যাদি! খাড়া রহোঁ।” পরিচারিকা কাঁপিতে কাঁপিতে উঠিয়া সন্তম্ভিতের ন্যায় দাঁড়াইয়া রহিল। সাগরেবও গায়ে ঘাম দিতেছিল। সাগরের মাখেও কথা ফটিল না। যে নােম তাহদের কাণে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহা ছেলে বড়ো কে না। শনিয়াছিল ? সে নাম অতি ভয়ানক । কিন্তু সাগর আবার ক্ষণেক পরে হাসিয়া উঠিল। তখন দেবী চৌধরাণীও হাসিল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ বিষাকাল। রাত্ৰি জ্যোৎস্না। জ্যোৎস্না এমন বড় উত্তজবল নয়, বড় মধর, একটি অন্ধকারমাখা —পথিবীর স্বপনময আবরণের মত। ব্রিস্রোতা নদী বর্ষাকালের জলপালাবনে কলে কলে পরিপািণ।। চন্দ্রের কিরণ সেই তীব্ৰগতি নদীজলের স্রোতের উপর-স্রোতে, আব্বত্তে, কদাচিৎ ক্ষদ্র ক্ষদ্র তরঙ্গে জলিতেছে। কোথাও জল একট, ফটিয়া উঠিতেছে- সেখানে একটা চিকিমিকি ; কোথাও চরে ঠোঁকিয়া ক্ষমূদ্র বীচিভঙ্গ হইতেছে, সেখানে একটা ঝিকিমিকি । তীরে, গাছের গোড়ায় জল আসিয়া লাগিয়াছে’- গাছের ছায়া পড়িয়া সেখানো জলি বড় অন্ধকার : অন্ধকারে গাছের ফল, ফল, পাতা বাঠিশা তীব্র স্রোত চলিতেছে ; তবে ঠেকিয়া জল একটা তর-তর কল-কােল পতি-পত শবদ করিতেছে- কিন্তু সে অাঁধারে অাঁধারে। অাঁধারে, অাঁধারে, সে বিশাল জলধারা সমদ্রানসেন্ধানে পক্ষিণীর বেগে ছটিয়াছে। কলে কলে অসংখ্য কল-কাল শব্দ, আব্বত্তের ঘোর গড়জািন, প্রতিহত স্রোতের তেমনি গৰ্ভজািন ; সন্বিশদ্ধ একটা গম্ভীর গগনাব্যাপী শবদ উঠিতেছে। সেই ব্রিস্রোতার উপরে, কলের অনতিদারে একখানি বজরা বাঁধা আছে। বজরার অনতিদরে একটা বড় তেতুিলগাছের ছায়ায়, অন্ধকারে আর একখানি নৌকা আছে—তাহার কথা পরে বলিব, আগে বজরার কথা বলি। বজাবাখানি নানাবণে চিত্ৰিত ; তাহাতে কত রকম মরদ অাঁকা আছে। তাহার পিতলের হাতল ডাণডা প্রভৃতিতে রপার গিলটি । গলাইয়ে একটা হাঙ্গরের মখ-সেটাও গিলটি করা। সৰ্ব্বত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, উত্তজবল, আবাব নিস্তবধ । নাবিকেরা এক পাশে বাঁশের উপর পাল ঢাকা দিয়া শইয়া আছে; কেহ জাগিয়া থাকার চিহ্ন নাই। কেবল বজরার ছাদের উপর-—একজন মানষ। অপর্ণব দশ্য! ছাদের উপর একখানি ছোট গালিচা পাতা। গালিচাখানি দাই আঙ্গল পাের-বড় কোমল, নানাবিধ চিত্রে চিত্রিত। গালিচার উপর বসিয়া একজন স্ত্রীলোক। তাহার বয়স অনামান করা ভার-পাঁচিশ বৎসরের নীচে তেমন পৰ্ণােয়ত দেহ দেখা যায় না; পাঁচিশ বৎসরের উপর তেমন b R○