পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী রঙগরাজ উত্তর করিল, “আজ্ঞা ?” “দেখি কি ?” “কিয় জন লোক আছে তাই দেখি।” “কিয় জন ?” “ঠিক ঠাওর পাই না। বেশী নয়। খলিব ?” छि “খোল-ছিপ | অাঁধারে অাঁধারে নিঃশবেদ উজাইয়া যাও।” তখন রঙগরাজ ডাকিয়া বলিল, “ছাপ খোল ।” চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ পবেব বলিয়াছি, বজরার কাছে তেতুিলগাছের ছায়ায় আর একখানি নৌকা অন্ধকারে লকাইয়াছিল। সেখানি ছিপ—ষাট হাত লম্বা, তিন হাতের বেশী চৌড়া নয়। তাহাতে প্রায় পঞ্চাশ জন মানষে গাদাগাদি হইয়া শইয়াছিল। রঙগরাজের সঙ্কেত শনিবামাত্র সেই পঞ্চাশ জন একেবারে উঠিয়া বসিল। বাঁশের চেলা তুলিয়া সকলেই এক একগোছা সড়কি ও এক একখানা ছোট ঢাল বাহির করিল। হাতিয়ার কেহ হাতে রাখিল না—সবাই আপনার নিকট চেলার উপরে সাজাইয়া রাখিল । রাখিয়া সকলেই এক একখানা “বোটে” হাতে করিয়া বসিল । নিঃশবেদ ছিপ খালিয়া, তাহারা বজরায় আসিয়া লাগাইলা। রঙগরাজ তখন নিজে পঞ্চ হাতিয়ার বাঁধিয়া উহার উপর উঠিল। সেই সময়ে যাবতী তাহাকে ডাকিয়া বলিল, “রঙগরাজ, আগে যাহা বলিয়া দিয়াছি, মনে থাকে যেন ।” “মনে আছে” বলিয়া রঙগরাজ ছিপে উঠিল। ছিপ নিঃশবেদী তীরে তীরে উজাইয়া চলিল । এদিকে যে বজরা রঙগরাজ দরবীনে দেখিয়াছিল, তাহা নদী বাহিয়া খরস্রোতে তীব্রবেগে আসিতেছিল। ছিপকে বড় বেশী উজাইতে হইল না। বজরা নিকট হইলে, ছিপ তীর ছাড়িয়া বজরার দিকে ধাবমান হইল। পঞ্চাশখানা বোটে, কিন্তু শবদ নাই। এখন, সেই বজরার ছাদের উপরে আট জন হিন্দ স্থানী রক্ষক ছিল। এত লোক সঙ্গে না করিয়া তখনকার দিনে কেহ রাত্রিকালে নৌকা খলিতে সাহস করিত না। আট জনের মধ্যে, দই জন হাতিয়ারবন্ধ হইয়া, মাথায় লাল পাগড়ি বাঁধিয়া ছাদের উপর বসিয়াছিল—আর ছয় জন মধ্যর দক্ষিণ বাতাসে চাঁদের আলোতে কাল দাড়ি ছড়াইয়া, সানিন্দ্রায় অভিভূত ছিল। যাহারা পাহারায় ছিল, তাহদের মধ্যে একজন দেখিল—ছিপ বজরার দিকে আসিতেছে। সে দস্তুরমত হাঁকিল, “ছিপ তফাৎ !” রঙগরাজ উত্তর করিল, “তোর দরকার হয়, তুই তফাৎ যা।” প্রহরী দেখিল, বেগোছ। ভয় দেখাইবার জন্য বন্দকে একটা ফাঁকা আওয়াজ করিল। রঙগরাজ বঝিল, ফাঁকা আওয়াজ। হাসিয়া বলিল, “কি পাঁড়ে ঠাকুর ! একটা ছররাও নাই ? ধারা দিব ?” এই বলিয়া রঙগরাজ সেই প্রহরীর মাথা লক্ষ্য করিয়া বন্দক উঠাইল। তার পর বন্দক নামাইয়া বলিল, “তোমায় এবার মারিব না। এবার তোমার লাল পাগড়ি উড়াইব ।” এই কথা বলিতে বলিতে রঙগরাজ বন্দক রাখিয়া, তীর ধন লইয়া সজোরে তীর ত্যাগ করিল। প্রহরীর মাথার লাল পাগড়ি উড়িয়া গেল। প্রহরী “রাম রাম!” শবদ করিতে লাগিল । বলিতে বলিতে ছিপ আসিয়া বজরার পিছনে লাগিল । আমনি দশ বার জন লোক ছিপ হইতে হাতিয়ার সমেত বজরার উপর উঠিয়া পড়িল। যে ছয় জন হিন্দ স্থানী নিদ্রিত ছিল, তাহারা বন্দকের আওয়াজে জাগরিত হইয়াছিল বটে, কিন্তু ঘমের ঘোরে। হাতিয়ার হাতড়াইতে তাহাদের দিন গেল। ক্ষিপ্ৰহস্তে আক্ৰমণকারীরা তাহাদিগকে নিমেষমধ্যে বাঁধিয়া ফেলিল । যে দাই জন আগে হইতে জাগ্রত ছিল, তাহারা লড়াই করিল, কিন্তু সে অলপক্ষণ মাত্র। আক্ৰমণকারীরা সংখ্যায় অধিক, শীঘ্ৰ তাহাদিগকে পরাস্ত ও নিরস্ত্ৰ করিয়া বাঁধিয়া ফেলিল । তখন ছিপের লোক বজরার ভিতর প্রবেশ করিতে উদ্যত হইল। বজরার দাবার বন্ধ। ভিতরে ব্রজেশবের। তিনি শবশঙ্কুরবাড়ী হইতে বাড়ী যাইতেছিলেন। পথে এই বিপদ। এ কেবল তাঁহার সাহসের ফল। অন্য কেহ সাহস করিয়া রাত্রে বজরা খলিত না। b'ミ○