পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

डूडीश थ॰उठ প্রথম পরিচ্ছেদ বৈশাখী শক্কিা সৰ্পতমী আসিল, কিন্তু দেবী রাণীর ঋণ পরিশোধের কোন উদ্যোগ হইল না। হরিবল্লভ এক্ষণে অঋণী, মনে করিলে অনায়াসে অর্থসংগ্ৰহ করিয়া দেবীর ঋণ পরিশোধ করিতে পারিতেন, কিন্তু সে দিকে মন দিলেন না। তাঁহাকে এ বিষয়ে নিতান্ত নিশ্চেভট দেখিয়া ব্রজেশবের দই চারি বার এ কথা উত্থাপন করিলেন, কিন্তু হরিবল্লভ তাঁহাকে সেতােকবাক্যে নিবত্ত করিলেন। এদিকে বৈশাখ মাসের শকা সপ্তমী প্রায়াগত—দই চারি দিন আছে মাত্র। তখন ব্রজেশবের পিতাকে টাকার জন্য পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন। হরিবল্লভ বলিলেন, “ভাল, ব্যস্ত হইও না। আমি টাকার সন্ধানে চলিলাম। ষাঠীর দিন ফিরিব।” হরিবল্লভ, শিবিকারোহণে পাচক ব্রাহ্মণ, ভূত্য ও দাই জন লাঠিয়াল (পাইক) সঙ্গে লইয়া গহ হইতে যাত্রা করিলেন। হরিবল্লভ টাকার চেন্টায় গেলেন বটে, কিন্তু সে আর এক রকম। তিনি বরাবর রঙ্গপত্র গিয়া কালেক্টর সাহেবের সঙেগ সাক্ষাৎ করিলেন। তখন কালেক্টরই শান্তিরক্ষক ছিলেন। হরিবল্লভ তাঁহাকে বলিলেন, “আমার সঙেগ সিপাহী দিউন, আমি দেবী চৌধরাণীকে ধরাইয়া দিব। ধরাইয়া দিতে পারিলে আমাকে কি পরিস্কার দিবেন বলেন।” শনিয়া সাহেব আনন্দিত হইলেন। তিনি জানিতেন যে, দেবী চৌধরাণী দস্যদিগের নেত্রী। তাহাকে ধরিতে পারিলে আর আর সকলে ধরা পড়িবে। তিনি দেবীকে ধরিবার অনেক চেন্টা করিয়াছিলেন, কোন মতে সফল হইত পারেন নাই। অতএব হরিবল্লভ সেই ভয়ঙ্করী রাক্ষসীকে ধরাইয়া দিবে। শনিয়া সাহেব সন্তুষ্ট হইলেন। পরস্কার দিতে স্বীকৃত হইলেন। হরিবল্লভ বলিলেন, “আমার সঙ্গে পাঁচ শত সিপাহী পাঠাইতে হকুম হউক।” সাহেব সিপাহীর হকুম দিলেন। হরিবল্লভকে সঙ্গে করিয়া লেফটেনাণ্ট ব্রেনান সিপাহী লইয়া দেবীকে ধরিতে চলিলেন । হরিবল্লভ ব্রজেশবরের নিকট সবিশেষ শনিয়াছিলেন, ঠিক সে ঘাটে দেবীকে পাওয়া যাইবে। সম্পভবতঃ দেবী বজরাতেই থাকিবে। লেফটেনাণ্ট ব্রেনান সেই জন্য কতক ফৌজ লইয়া ছিপে চলিলেন। এই রােপ পাঁচখানি ছিপ ভাঁটি দিয়া দেবীর বজরা ঘেরাও করিতে চলিল। এদিকে লেফটেনাণটী সাহেব। আর কতক সিপাহী সৈন্য লক্কায়িত ভাবে, বন দিয়া বন দিয়া তটপথে পাঠাইলেন । যেখানে দেবীর বজরা থাকিবে, হরিবল্লভ বলিয়া দিল ; সেইখানে তীরবত্তীর্ণ বনমধ্যে ফৌজ লাকাইয়া রাখিলেন, যদি দেবী ছিপের দবারা আক্ৰান্ত হইয়া তটপথে পলাইবার চেস্টা করে, তবে তাহাকে এই ফৌজের দবারা ঘেরাও করিয়া ধরিবেন। আরও এক পলাইবার পথ ছিল— ছিপাগলি ভাঁটি দিয়া আসিবে, দরি হইতে ছিপ দেখিতে পাইলে দেবী ভাঁটি দিয়া পলাইতে পারে, অতএব লেফটেনাণ্ট ব্রেনান অবশিস্ট সিপাহীগালিকে দই ক্লোশ ভাঁটিতে পাঠাইলেন, তাহাদিগের থাকিবার জন্য এমন একটি সংস্থান নিদি ভ্ৰাট করিয়া দিলেন যে, সেখানে ত্রিস্রোতা নদী এই শকার সময়ে সহজে হাঁটিয়া পার হওয়া যায়। সিপাহীরা সেখানে তীরে ল্যুকাইয়া থাকিবে, বজরা দেখিলেই জলে আসিয়া তােহা ঘেরাও করিবে । সন্ন্যাসিনী রমণীকে ধরিবার জন্য এইরনুপ ঘোরতর আড়ম্বর হইল। কিন্তু কর্তৃপক্ষেরা এ আড়ম্বর নিম্পপ্রয়োজন মনে করেন নাই। দেবী সন্ন্যাসিনী হউক আর নাই হউক, তাহার আজ্ঞাধীন হাজার যোদ্ধা আছে, সাহেবেরা জানিতেন। এই যোদ্ধাদিগের নাম “বর কন্দাজ” । অনেক সময়ে কোম্পানীর সিপাহীদিগকে এই বরকন্দােজদিগের লাঠির চোটে পলাইতে হইয়াছিল, এইরােপ প্ৰবাদ। হায় লাঠি! তোমার দিন গিয়াছে! তুমি ছার বাঁশের বংশ বটে, কিন্তু শিক্ষিত হস্তে পড়িলে তুমি না পারিতে, এমন কাজ নাই। তুমি কত তরবারি দই টকরা করিয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ, কত ঢাল-খাঁড়া খন্ড খণ্ড করিয়া ফেলিয়াছ—হায়! বন্দক আর সঙ্গীন তোমার প্রহারে যোদ্ধার হাত হইতে খসিয়া পড়িয়াছে। যোদ্ধা ভাঙগা হাত লইয়া পলাইয়াছে। লাঠি! তুমি বাঙগালায় আৱ পদার্তা রাখিতে, মান রাখিতে, ধান রাখিতে, ধন রাখিতে, জন রাখিতে, সবার মন রাখিতে। মসলমান তোমার ভয়ে ত্রসন্ত ছিল, ডাকাইত তোমার জবালায় ব্যস্ত SS