পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊाज्ञा একটা মানষে মরা, জীবিতের পক্ষে একটা পকেবার সমান। যখন সৰ্য্যোদয় হইল, তখন মাঠ প্রায় পরিয়া গিয়াছে, অথচ নগরের সকল গলি, পথ, রাস্তা হইতে পিপীলিকাশ্রেণীর মত মনষ্য বাহির হইতেছে। শেষ সে বিস্তৃত স্থানেও স্থানাভাব হইয়া উঠিল। দশকেরা গাছে উঠিয়া কোথাও হন মানের মতন আসীন—যেন লাওগােলাভাবে কিঞ্চিৎ বিরস;—কোথাও বাদাড়ের মত দল্যমান, দিনোদয়ে যেন কিঞ্চিৎ সরাস। পশ্চাতে, নগরের যে কয়টা কোঠাবাড়ী দেখা যাইতেছিল, তাহার ছাদ মানষে ভরিয়া গিয়াছে, আর সস্থান নাই। কাঁচা ঘরই বেশী, তাহাতেও মই লােগাইয়া, মইয়ে পা রাখিয়ে, অনেকে চালে বসিয়া দেখিতেছে। মাঠের ভিতর কেবল কালো মাথার সমদ্রঠেসাঠোঁস, মিশামিশি। কেবল মানষে আসিতেছে, জমাট বাঁধিতেছে, সরিতেছে, ঘারিতেছে, ফিরিতেছে, আবার মিশিতেছে। কোলাহল অতিশয় ভয়ানক। বন্দী এখনও আসিল না দেখিয়া দশকেরা অতিশয় অধীর হইয়া উঠিল। চীৎকার, গণ ডগোল, বাঁকাবাঁকি, মারামারি আরম্ভ করিল। হিন্দ, মসলমানকে গালি দিতে লাগিল, মসলমান হিন্দকে গালি দিতে লাগিল। কেহ বলে, “আল্লা !” কেহ বলে, “হারিবোলা!” কেহ বলে, “আজ হবে না, ফিরে যাই!” কেহ বলে, “ঐ এয়েছে দেখা।” যাহারা বাক্ষার, ঢ, তাহারা কাৰ্য্যাভাবে গাছের পাতা, ফল, এবং ছোট ছোট ডাল ভাঙ্গিয়া নিম্পনচারীদিগের মাথার উপর ফেলিতে লাগিল। কেহ কেহ তাহাতে সন্তুষ্পট না হইয়া নিম্ৰষ্ঠীবন প্ৰক্ষেপ করিতে লাগিল। এই সকল কারণে, যেখানে যেখানে বক্ষ, সেইখানে সেইখানে তলচারী এবং শাখাবিহারীদিগের ভীষণ কোন্দল উপস্থিত হইতে লাগিল । কেবল একটি গাছের তলায় সেরাপ গোলযোগ নাই। সে বক্ষের তলে বড় লোক দাঁড়ায় নাই। সমদ্রমধ্যে ক্ষদ্র দাবীপের মত তাহা প্রায় জনশন্য। দই চারি জন লোক সেখানে আছে বটে, কিন্তু তাহারা কোন গোলযোগ করিতেছে না; নিঃশবদ । কেবল অন্য কোন লোক সে বােক্ষতলে দড়িাইতে আসিলে, তাহারা উহাদিগকে গলা টিপিয়া বাহির করিয়া দিতেছে। তাহাদিগকে বড় বড় যোয়ান ও হাতে বড় বড় লাঠি দেখিয়া সকলে নিঃশবেদ সরিয়া যাইতেছে। সেই বক্ষের শিকড়ের উপর দাঁড়াইয়া কেবল এক জন সত্ৰীলোক বক্ষকান্ড অবলম্বন করিয়া উদ্ধব্যমখে বাক্ষাবঢ়ে। কোন ব্যক্তির সঙ্গে কথা করিতেছে। তাহার চোখ-মাখ ফলিয়াছে; বেশভূষা বড় আলাথাল, -যেন সমস্ত রাত্ৰি কাঁদিয়াছে। কিন্তু এখন আর কাঁদিতেছে না। যে বাক্ষার চু, তাহাকে ঐ স্ত্রীলোক বলিতেছে, “ঠাকুর ! এখন কিছ দেখা যায় না।” বাক্ষার দৃঢ় ব্যক্তি উপর হইতে বলিল, “না।” “ তবে বোধ হয়, নারায়ণ রক্ষা করিলেন । ” পাঠক বঝিয়া থাকিবেন যে, এই সত্ৰীলোক শ্ৰী। বক্ষোপরি স্বয়ং চন্দ্রচড়া তকালঙ্কার। বাক্ষশাখা ঠিক তাঁর উপযক্ত স্থান নহে, কিন্তু তকালঙ্কার মনে করিতেছিলেন, “আমি ধৰ্ম্মাচরণনিযক্ত, ধমের জন্য সকলই কত্তব্য।” শ্রীর কথার উত্তরে চন্দ্রচড়ি বলিলেন, “নারায়ণ অবশ্য রক্ষা করিবেন। আমার সে ভরসা। আছে। তুমি উতলা হাইও না। কিন্তু এখনও রক্ষার উপায় হয় নাই বোধ হইতেছে। কতকগলা লালপাগড়ি আসিতেছে, দেখিতে পাইতেছি।” শ্ৰী। কিসের লাল পাগড়ি ? চন্দ্রচড়ি। বোধ হয় ফৌজদারি সিপাহী। বাস্তবিক দাই শত ফৌজদারি সিপাহী সশস্ত্র শ্রেণীবদ্ধ হইয়া গঙ্গারামকে ঘেরিয়া লইয়া আসিতেছিল। দেখিয়া সেই অসংখ্য জনতা একেবারে নিস্তবধ হইয়া দাঁড়াইল । যেমন যেমন দেখিতে লাগিলেন, চন্দ্রচড়ি সেইরােপ শ্ৰীকে বলিতে লাগিলেন। শ্ৰী জিজ্ঞাসা করিল, “কত সিপাই ? “ চন্দ্র। দাই শত হইবে। শ্ৰী। আমরা দীন দঃখী—নিঃসহায়। আমাদের মারিবার জন্য এত সিপাহী কেন ? চন্দ্র। বোধ হয়। বহ, লোকের সমাগম হইয়াছে শনিয়া, সতক হইয়া ফৌজদার এত সিপাহী পাঠাইয়াছেন। শ্ৰী।। তার পর কি হইতেছে ? চন্দ্র। সিপাহীরা আসিয়া, শ্রেণী বাঁধিয়া, প্রস্তুত কবরের নিকট দাঁড়াইল। মধ্যে গঙ্গারাম। পিছনে খোদ কাজি, আর সেই ফকির। a Ca