পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नौडाब्राश কাজি । খোদা নফরকে যেমন রাখিয়াছেন। এখন এই উমর, বাল সফেদ, কাজা পৌছিলেই হয়। দৌলতখানার কুশল সংবাদ ত ? সীতা। হজারের একবালে গরিবখানার অমঙ্গলের সম্পভাবনা কি ? কাজি। এখন এখানে কি মনে করিয়া ? সীতা। এই গঙ্গারাম—বদ বখতি-বেতমিজ যাই হৌক, আমার সবজাতি। তাই দঃখে৷ পড়িয়া হজারে হাজির হইয়াছি, জােন বখশিশ, ফরমায়েশন করন। কাজি। সে কি ? তাও কি হয় ? সীতা । মেহেরবান ও কদরবান সব পারে। কাজি। খোদা মালেক। আমা হইতে এ বিষয়ের কিছ হইবে না। সীতা। হাজার আসরফি জরিমানা দিবে। জান বখশিশ, ফরমায়েশ করন। কাজি সাহেব ফকিরের মািখপানে চাহিলেন। ফকির ঘাড় নাড়িল। কাজি বলিলেন, “সে সব কিছ হইবে না। কবরমে কাফেরকো ডারো।” ਬ দাই হাজার আসরফি দিব। আমি জোড় হাত করিতেছি, গ্রহণ করান। আমার তার ! কাজি ফকিরের মািখপানে চাহিল, ফকির নিষেধ করিল, সে কথাও উড়িয়া গেল। শেষ সীতারাম চারি হাজার আসরফি সর্বীকার করিল। তাও না। পাঁচ হাজার—তাও না। আট হাজার-—দশ হাজার, তাও না; সীতারামের আর নাই। শেষ সীতারাম জানা পাতিয়া করজোড় করিয়া অতি কাতরস্বরে বলিলেন, “আমার আর নাই। তবে, আর অন্য যা কিছ আছে, তাও দিতেছি। আমার তালক মািলক, জমি জেওরাত, বিষয়-আশয় সৰ্ব্বস্ব দিতেছি। সব গ্রহণ করন। উহাকে ছাড়িয়া দিন।” কাজি সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও তোমার এমন কে যে, উহার জন্য সর্ববস্ব দিতেছ?” সীতা। ও আমার যেই হোক, আমি উহার প্রাণদানে স্বীকৃত-—আমি সববস্ব দিয়া উহার প্রাণ রাখিব। এই আমাদের হিন্দরে ধৰ্ম্ম। কাজি। হিন্দধৰ্ম্মম যাহাঁই হৌক, মসলমানের ধৰ্ম্ম তাহার বড়। এ ব্যক্তি মসলমান ফকিরের অপমান করিয়াছে, উহার প্রাণ লইব—তাহাতে সন্দেহ নাই। কাফেরের প্রাণ ভিন্ন ইহার আর অন্য দন্ড নাই। তখন সীতারাম জানা পাতিয়া কাজি সাহেবের আলখাল্লার প্রান্তভাগ ধরিয়া, বাৎপগদগদ স্বরে বলিতে লাগিলেন, “কাফেরের প্রাণ ? আমিও কাফের। আমার প্রাণ লইলে এ প্রায়শিচত্ত হয় না ? আমি এই কবরে নামিতেছি—আমাকে মাটি চাপা দিউন--আমি হরিনাম করিতে করিতে বৈকুণ্ঠে যাইব—আমার প্রাণ লইয়া এই দঃখীর প্রাণদান করন। দোহাই তোমার কাজি সাহেব! তোমার যে আল্লা, আমারও সেই বৈকুণ্ঠেশবর! ধৰ্ম্মমাচরণ করিও । আমি প্রাণ দিতেছি-বিনিময়ে এই ক্ষদ্র ব্যক্তির প্রাণদান কর।” কথাটা নিকটস্থ হিন্দ দশকেরা শনিতে পাইয়া হরিধবনি দিয়া উঠিল। করতালি দিয়া বলিতে লাগিল, “ধন্য রায়জনী ! ধন্য রায় মহাশয়! জয় কাজি সাহেবকা! গরিবকে ছাড়িয়া দেও।” যাহারা কথা কিছই শনিতে পায় নাই, তাহারাও হরিধবনি শনিয়া হরিধবনি দিতে লাগিল। তুমলি কোলাহল পড়িয়া গেল। কাজি সাহেবও বিস্মিত হইয়া সীতারামকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কি বলিতেছেন, রায় মহাশয়! এ আপনার কে যে, ইহার জন্য আপনার প্রাণ দিতে চাহিতেছেন ?” সীতা। এ আমার ভ্রাতার অপেক্ষা, পত্রের অপেক্ষাও আত্মীয় ; কেন না, আমার শরণাগত । হিন্দীশাস্ত্রের বিধি এই যে, সব্বস্ব দিয়া, প্রাণ দিয়া শরণাগতকে রক্ষা করিবে। রাজা ঔশীনর, আপনার শরীরের সকল মাংস কাটিয়া দিয়া একটি পায়রাকে রক্ষা করিয়াছিলেন। অতএব আমাকে গ্রহণ করান-ইহাকে ছাড়ন । কাজি সাহেব সীতারামের উপর কিছ: প্ৰসন্ন হইলেন। শাহ সাহেবকে অন্তরালে লইয়া চুপি চুপি কথাবাৰ্ত্তা কহিতে লাগিলেন। বলিলেন, “এ ব্যক্তি দশ হাজার আসরফি দিতে চাহিতেছে। নিলে সরকারী তহবিলের কিছল সীসার হইবে। দশ হাজার আসরফি লইয়া এই হতভাগ্যকে ছাড়িয়া দিলে হয় না ?” ԵԳ Տ