পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नौडाब्राभ বারিরাশিপ্রমর্থিতা পরিপর্ণা স্রোতস্বতী। দই স্রোতে শ্ৰী ভাসিয়া গেল। তার পর আর শ্ৰীীর কোন খবর নাই। A. স্বীকার করি, তব শ্ৰীকে মনে করা সীতারামের উচিত ছিল। কিন্তু এমন অনেক উচিত কােজ আছে যে, কাহারও মনে হয় না। মনে হইবার একটা কারণ না ঘটিলে, মনে হয় না। যাহার নিত্য টাকা আসে, সে কবে কোথায় সিকিটা আধলিটা হারাইয়াছে, তার তা বড় মনে পড়ে না। যার এক দিকে নন্দা, আর দিকে রমা, তার কোথাকার শ্ৰীকে কেন মনে পড়িবে ? যার এক দিকে গঙ্গা, এক দিকে যমনা, তার কবে কোথায় বালির মধ্যে সরস্বতী শকাইয়া লাকাইয়া আছে, তা কি মনে পড়ে ? যার এক দিকে চিত্রা, আর এক দিকে চন্দ্র, তার কবে কোথাকার নিবান বাতির আলো কি মনে পড়ে ? রমা সখি, নন্দা সম্পদ, শ্ৰী বিপদ-যার এক দিকে সখি, আর এক দিকে সম্পদ, তার কি বিপদকে মনে পড়ে ? তবে সে দিন রাত্ৰিতে শ্ৰীীর চাঁদপানা মনুখখানা, ঢল-ঢল, ছল-ছল জলভরা বলহারা চোখ দটো, বড় গোল করিয়া গিয়াছে। রাপের মোহ ? আ. ছি! ছি:! তা না! তবে তার রপেতে, তার দঃখেতে, আর সীতারামের সবকৃত অপরাধে, এই তিনটায় মিশিয়া গোলযোগ বাধাইয়াছিল। তা যা হউক—তার একটা বঝাপড়া হইতে পারিত; ধীরে সস্থে, সময় বঝিয়া, কত্ত ব্যাকৰ্ত্তব্য ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম বঝিয়া, গর, পরোহিত ডাকিয়া, পিতার আজ্ঞা লঙ্ঘনের একটা প্ৰায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা করিয়া, যা হয় না হয় হইত।--কিন্তু সেই সিংহবাহিনী মাত্তি! আ মারি মরি—এমন কি আর হয় ! তবে সীতারামের হইয়া এ কথাটাও আমার বলা কত্তব্য যে, কেবল সেই সিংহবাহিনী মাত্তি সমরণ করিয়াই সীতারাম, পত্নীত্যাগের অধ্যাম্মিকতা হৃদয়ঙ্গম করেন নাই। পািকব রাত্ৰিতে যখনই প্রথম শ্ৰীকে দেখিয়াছিলেন, তখনই মনে হইয়াছিল যে, আমি পিতৃ-আজ্ঞা পালন করিতে গিয়া পাপাচরণ করিতেছি। মনে করিয়াছিলেন যে, আগে শ্ৰীর ভাইয়ের জীবন রক্ষা করিয়া, নন্দা রমাকে পকেবই শান্তভাবালম্বন করাইয়া, চন্দ্রচড়ি ঠাকুরের সঙ্গে একটা বিচার করিয়া, যাহা কৰ্ত্তব্য তাহা করিবেন। কিন্তু পরদিনের ঘটনার স্রোতে সে সব অভিসন্ধি ভাসিয়া গেল। উচ্ছসিত অন্যরাগের তরঙ্গে বালির বাঁধ সব ভাঙিগয়া গেল। নন্দা, রমা, চন্দ্রচড়, সব দরে থােক —এখন কৈ শ্ৰী ! শ্ৰী সহসা নৈশ অন্ধকারে আদশ্য হইলে সীতারামের মাথায় যেন বজাঘাত পড়িল । সীতারাম গাত্ৰোত্থান করিয়া, যে দিকে শ্ৰী বনমধ্যে অন্তহিত হইয়াছিল, সেই দিকে দ্রুতবেগে ধাবিত হইলেন। কিন্তু অন্ধকারে কোথাও তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না। বনের ভিতর তাল তাল অন্ধকার বাঁধিয়া আছে, কোথায় শাখাচ্ছেদ জন্য বা বক্ষবিশেষের শাখার উত্তজবল বর্ণ জন্য, যেন সাদা বোধ হয়, সীতারাম সেই দিকে দৌড়িয়া যান। কিন্তু শ্ৰীকে পান না। তখন শ্ৰীীর নাম ধরিয়া সীতারাম তাহাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিলেন। নদীর উপকািলবত্তীর্ণ বাক্ষরাজিতে শবদ প্রতিধবনিত হইতে লাগিল—বোধ হইল যেন, সে উত্তর দিল। শবদ লক্ষ্য করিয়া সীতারাম সেই দিকে যান-আবার শ্ৰী বলিয়া ডাকেন, আবার অন্য দিকে প্রতিধবনি হয়—আবার সীতারাম সেই দিকে ছাঁটেন—কই, শ্ৰী কোথাও নাই! হায় শ্ৰী। হায় শ্ৰী ! করিতে করিতে রাত্ৰি প্রভাত হইল—শ্ৰী মিলিল না। কই, যাকে ডাকি, তা ত পাই না। যা খাঁজি, তা ত পাই না। যা পাইয়াছিলাম, হেলায় হারাইয়াছি, তা ত আর পাই না। রত্ন হারায়, কিন্তু হারাইলে আর পাওয়া যায় না কেন ? সময়ে খাজিলে হয়ত পাইতাম-এখন আর খাজিযা পাই না। মনে হয়, বঝি চক্ষ গিয়াছে, বঝি পথিবী বড় অন্ধকার হইয়াছে, বঝি খাজিতে জানি না। তা কি করিব,--আরও খাঁজি। যাহাকে ইহজগতে খাজিয়া পাইলাম না, ইহজীবনে সেই প্রিয়ন এই নিশা প্রভাতকালে শ্ৰী, সীতারামের হৃদয়ে প্রিয়ার উপর বড় প্রিয়া, হৃদয়ের অধিকারিণী। শ্ৰীীর অন্যপম রপম্যাধরী, তাঁহার হৃদয়ে তরঙ্গে তরঙ্গে ভাসিয়া উঠিতে লাগিল। শ্ৰীীর গণ এখন তাঁহার হৃদয়ে জাগরকে হইতে লাগিল। যে বাক্ষরঢ়া মহিষমদিনী অঞ্চলসঙেকতে সৈন্যসঞ্চালন করিয়া রণজয় করিয়াছিল, যদি সেই শ্ৰী সহায় হয়, তবে সীতারাম কি না করিতে পারেন ? সহসা সীতারামের মনে এক ভরসা হইল। শ্ৰীর ভাই গঙ্গারামকে শ্যামপারে তিনি যাইতে আদেশ করিয়াছিলেন, গঙ্গারাম অবশ্য শ্যামপারে গিয়াছে। সীতারাম তখন দ্রুতবেগে শ্যামপারের C.