পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী বিশঙ্কাস্থিচহ্মম মাত্রাবশেষ পালিতকেশা নগনবেশ খন্ডমন্ডধারিণী ভীষণা চামড়া, রাশি রাশি কুসম চন্দন বিলবপত্ৰে প্ৰপীড়িত হইয়া বিরাজ করিতেছে। তৎপশ্চাৎ বিষ্ণমন্ডপের উচ্চ চড়া নীলাকাশে চিত্রিত: তৎপরে নীলপ্রস্তরের উচ্চস্তম্ভোপরি আকাশমাগে খগপতি গরীড় সমাসীন।* অতিন্দরে উদয়গিরির ও ললিত গিরির বিশাল নীল কলেবর আকাশপ্রান্তে শয়ান। এই সকলের প্রতি শ্ৰী চাহিয়া দেখিল ; বলিল, “হায়! এই ত বৈতরণী ! পার হইলে আমার জবালা জড়াইবে কি ?” “এ সে বৈতরণী নহে— যমদাবারে মহাঘোরে তপতা বৈতরণী নদী—— আগে যমদাবারে উপসিথত হও—তবে সে বৈতরণী দেখিবো।” পিছন হইতে শ্ৰীীর কথার কেহ এই উত্তর দিল। শ্ৰী ফিরিয়া দেখিল, এক সন্ন্যাসিনী। শ্ৰী বলিল, “ওমা! সেই সন্ন্যাসিনী! তা, মা, যমদবার বৈতরণীর এ পারে, না ও পারে ?” সন্ন্যাসিনী হাসিল; বলিল, “বৈতরণী পার হইয়া যমপরে পৌছিতে হয়। কেন মা, এ কথা জিজ্ঞাসা করিলে ? তুমি এ পারেই কি যমযন্ত্রণা ভোগ করিতেছ?” শ্ৰী। যন্ত্রণা বোধ হয়। দই পারেই আছে। সন্ন্যাসিনী । না, মা, যন্ত্ৰণা সব এই পারেই। ও পারে যে যন্ত্রণার কথা শনিতে পাও, সে আমরা এই পার হইতে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাই। আমাদের এ জন্মের সঞ্চিত পাপগলি আমরা গাঁটরি বাঁধিয়া, বৈতরণীর সেই ক্ষেয়ারীর ক্ষেয়ায় বোঝাই দিয়া, বিনা কড়িতে পাের করিয়া লইয়া যাই। পরে যমালয়ে গিয়া গাঁটরি খালিয়া ধীরে সস্থে সেই ঐশ্বব্যয্য একা একা ভোগ করি। শ্ৰী । তা, মা, বোঝাটা এ পারে রাখিয়া যাইবার কোন উপায় আছে কি ? থাকে ত আমায় বলিয়া দাও, আমি শীঘ্র শীঘ্র উহার বিলি করিয়া বেলায় বেলায় পার হইয়া চলিয়া যাই, রাত করিবার দরকার দেখি না— সন্ন্যাসিনী । এত তাড়াতাড়ি কেন মা ? এখনও তোমার সকাল বেলা । শ্ৰী। বেলা হ’লে বাতাস উঠিবে। সন্ন্যাসিনীর আজিও তুফানের বেলা হয় নাই—বয়সটা কাঁচা রকমের। তাই শ্ৰী এই রকমের কথা কহিতে সাহস করিতেছিল। সন্ন্যাসিনীও সেই রকম উত্তর দিল, “তুফানের ভয় কর মা ! কেন, তোমার কি তেমন পাকা মাঝি নাই ?” শ্ৰী। পাকা মাঝি আছে, কিন্তু তাঁর নৌকায় উঠিলাম না। কেন তাঁর নৌকা ভারি করিব ? সন্ন্যাসিনী। তাই কি খাজিয়া খাজিয়া বৈতরণী-তীরে আসিয়া বসিয়া আছ ? শ্ৰী। আরও পাকা মাঝির সন্ধানে যাইতেছি। শনিয়াছি, শ্ৰীক্ষেত্রে যিনি বিরাজ করেন, তিনিই না কি পারের কান্ডারী। সন্ন্যাসিনী । আমিও সেই কান্ডারী খাঁজিতে যাইতেছি । চল না, দই জনে একত্রে যাই। কিন্তু আজ তুমি একা কেন ? সে দিন সবণ রেখাতীরে তোমাকে দেখিয়াছিলাম, তখন তোমার সঙ্গে অনেক লোক ছিল—আজ একা কেন ? শ্ৰী। আমার কেহ নাই। অর্থাৎ আমার অনেক আছে, কিন্তু আমি ইচ্ছাক্ৰমে সব্বত্যাগী। আমি এক যাত্রীর দলে জটিয়া শ্ৰীক্ষেত্রে যাইতেছিলাম, কিন্তু যে যাত্রাওয়ালার (পাগড়া) সঙ্গে আমরা যাইতেছিলাম, তিনি আমার প্রতি কিছ. কৃপাদটি করার লক্ষণ দেখিলাম। কিছ দৌরাত্ম্যের সম্ভাবনা বিবেচনা করিয়া কালি রাত্ৰিতে যাত্রীর দল হইতে সরিয়া পড়িয়ছিলাম । अम्षIालिनी । ७१२श्न ? শ্ৰী। এখন, বৈতরণী-তীরে আসিয়া ভাবিতেছি, দই বার পারে কাজ নাই। একবারই ভাল। জল যথোেভন্ট আছে। সন্ন্যাসিনী । সে কথাটা না হয়, তোমায় আমায় দই দিন বিচার করিয়া দেখা যাইবে। তার পর বিচারে যাহা স্থির হয, তাহাই করিও। বৈতরণী ত তোমার ভয়ে পলাইবে না! কেমন, আমার সঙ্গে আসিবে কি ?

  • এই গরীড়স্তম্ভ দেখিতে অতি চমৎকার। * পরিষোত্তম যাইবার আধনিক যে রাজপথ, এই সকল পৰ্ব্বত, তাহার বামে থাকে। নিকটে নহে।

NO